শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪
27 C
Dhaka

অগ্নিঝরা ২২ মার্চঃ মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠকে ভুট্টো

ভিডিও

- Advertisement -

একাত্তরের উত্তাল মার্চে একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দফায় দফায় বৈঠক চলছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের। অন্যদিকে আড়ালে প্রস্তুতি চলছিল ইতিহাসের বর্বরোচিত গণহত্যার। এমন পরিস্থিতিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই ২২ মার্চ সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ষষ্ঠ বারের মত বৈঠকে মিলিত হন ইয়াহিয়া খান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁদের এই বৈঠকে পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোও যোগ দেন।

 

এসময় প্রেসিডেন্টের ভবন এলাকায় ব্যাপক জনসমাবেশ ঘটে। প্রধান ফটকের অদূরে জনতা শেখ মুজিবের সমর্থনে ও ভুট্টোর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে আসেন বঙ্গবন্ধুর এক ঘণ্টা আগে। বৈঠক শেষে বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, বাঙালি আন্দোলনে আছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। পরে ভুট্টো সন্ধ্যায় আবার নিজের উপদেষ্টাদের নিয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

 

এদিকে ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর বৈঠক চলাকালেই ২৫শে মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভবনের মুখপাত্রের ঘোষণায় বলা হয়, পাকিস্তানের দুই অংশের নেতাদের মধ্যে আলোচনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য প্রেসিডেন্ট এই অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে যোগ দেবেন না। সে অনুসারেই প্রেসিডেন্ট পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছেন।

 

এদিকে রাতে কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ খান মোহাম্মদ দৌলতানা, ওয়ালি ন্যাপ প্রধান খান আবদুল ওয়ালি খান, ন্যাপ নেতা গাউস বক্স বেজেঞ্জো ও সর্দার শওকত হায়াত খান এবং জমিয়তে উলামায়ের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মাহমুদ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন। গভীর রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের এই নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করেছেন। অন্যদিকে ইয়াহিয়া খান আলোচনার জন্য এদিন মুসলিম লীগ সভাপতি খান আবদুল কাইয়ুম খান ও জমিয়তে উলামায়ের প্রধান মাওলানা শাহ আহমদ নুরানিকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান।

 

এদিন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির বিষয়টি পর্যালোচনা করেন।

 

সেদিন রাতে হঠাৎ করে জুলফিকার আলী ভুট্টো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগ প্রধান একটি সাধারণ মতৈক্যে পৌঁছেছেন। তবে পিপলস পার্টির কাছে এ মতৈক্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তাদের অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্তই পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না। ভুট্টো জোর দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে অবশ্যই সমঝোতা ও মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে। পিপলস পার্টি এ কারণেই আওয়ামী লীগের চার দফা পূর্বশর্ত বিবেচনা করছে এবং স্থায়ী ব্যবস্থার কথা মনে রেখে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা চিন্তাভাবনা করছে।

 

একাত্তরের এই দিনে পল্টন ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিক, নাবিক ও বৈমানিকদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে সাবেক সৈনিকরা আর সাবেক হিসেবে বসে থাকতে পারে না। সমাবেশে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদের সভাপতিত্ব বক্তব্য দেন এম এ জি ওসমানীসহ অন্যরা। সাবেক বাঙালি সেনাদের বক্তব্য শোনার জন্য পল্টন ময়দানে বিপুল জনসমাগম ঘটে। সভা শেষে অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সেনারা কুচকাওয়াজ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যান। তাই এদিনও বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধু আগত মিছিলকারীদের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানান। একই সাথে বিগত ২১ দিনের অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি তাদের প্রশংসা করেন। দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, সাত কোটি মানুষের মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। এই সংগ্রামে আমরা অবশ্যই জয়ী হব।

আলোচিত

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

Click to Call Call Now