শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪
27 C
Dhaka

অগ্নিঝরা ২৩ মার্চঃ পাকিস্তান দিবসে উড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা

ভিডিও

- Advertisement -

একাত্তরের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবন ও সেনাবাহিনীর সদর দফতর ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা ওড়েনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব দিবস’ হিসেবে পালনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সারা বাংলায় ছুটি ঘোষণা করেন। আর দিনটিকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। এদিন রাজপথে লাঠি-বর্শা-বন্দুকের মাথায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে সারাদেশ  প্রকম্পিত করে রাখে।

 

অসহযোগ আন্দোলনের ২২তম দিনে ঢাকায় সচিবালয়, হাইকোর্টও জাতীয় পরিষদ ভবন, ইপিআর, পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকাবেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টেলিফোনভবন, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ও প্রদেশের মুখ্য সচিবের বাসভবনসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলা হয়।ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পাকিস্তানি সেনাদের বাধা উপেক্ষাকরে সেদিন ছাত্র-জনতা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। ঢাকার ব্রিটিশ উপ-হাইকমিশন ও সোভিয়েত কনস্যুলেটে ওড়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা। চীন, ইরান, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার উপদূতাবাসে প্রথমে পাকিস্তানি পতাকা তোলা হয়। পরে জনতা সেসব নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়।আর মার্কিন কনস্যুলেটে সেদিন কোনো পতাকাই তোলা হয়নি।

 

এদিন শেখ মুজিবের বাসভবন এলাকা থেকে শুরু করে মিরপুর সড়ক উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মুক্তিকাতর জনতা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে পতাকা হাতে নেয়। বঙ্গবন্ধু সমবেত জনতার উদ্দেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা আন্দোলিত করে তাদের অভিনন্দিত করেন। এছাড়াও বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিউমার্কেট থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকা মিছিলে মিছিলে ছেয়ে যায়। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় সমবেত কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশন করা হয়। সূর্যাস্তের সময় স্বেচ্ছাসেবকরা আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা নামিয়ে নেন। আর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের শীর্ষে যথারীতি কালো পতাকাও ওড়ে।

 

এদিকে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা তোলার পর প্রভাতফেরি বের করে। আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবর জিয়ারত শেষে শহীদ মিনারে ফুলের মালা দেয়। সকাল সোয়া নয়টায় আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ছাত্রছাত্রী ও সাবেক বাঙালি সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত জয় বাংলা বাহিনীর আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ ও মহড়া। হাজার হাজার মানুষের করতালির মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলার পরবাহিনীর সদস্যরা সামরিক কায়দায় পতাকাকে অভিবাদন জানান। এ সময় রেকর্ডে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাজানো হয় । এরপর জয় বাংলা বাহিনীর পাঁচশতাধিক সদস্য প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানান। বঙ্গবন্ধু সালাম গ্রহণ শেষে সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, বাংলার জয় অনিবার্য। করুণার পাত্র না হয়ে আপণ শক্তির দুর্জয় ক্ষমতা বলেই বাঙালিরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বাঙালির প্রানের নেতা।

 

অগ্নিঝরা মার্চের এদিন বিকেলে পশ্চিম পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যালঘিষ্ঠ বিভিন্ন দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বাসভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে কাউন্সিল মুসলিমলীগ প্রধান, জমিয়তে উলামায়ে প্রধান, পাঞ্জাব কাউন্সিল প্রধানও বেলুচিস্তান ন্যাপের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা, এম এ আহমেদের সঙ্গে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দুই দফা বৈঠকে মিলিত হন। আর সকালে পাকিস্তান পিপলস পার্টিরপ্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানেরসঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদার সঙ্গেও বৈঠক করেন। ভুট্টো সেদিন প্রায় সারা দিনই দলীয় উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করেন।

 

সন্ধ্যায় খান আবদুল ওয়ালি খান, মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খানদৌলতানা, মুফতি মাহমুদ, গাউস বক্স বেজেঞ্জো, শাহ আহমদ নুরানি ও সরদার শওকত প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে মুফতি-ওয়ালি-বেজেঞ্জো যৌথ বিবৃতিতে বলেন, দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর জনসাধারণ যখন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন থেকেই প্রতারণাপূর্ণ প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।

এদিন করাচিতে ভুট্টো সমর্থকেরা বাঙালি কলোনিতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, গুলিবর্ষণ ও লুটতরাজ করে। এতে বেশ কয়েকজন বাঙালি হতাহত হয়। এদিকে বিকেলে রংপুরের সৈয়দপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। সন্ধ্যায় সেনা সদস্যরা সৈয়দপুর শহরের নিয়ন্ত্রন নিয়ে কারফিউ জারি করে।

আলোচিত

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

Click to Call Call Now