শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
22 C
Dhaka

অগ্নিঝরা ২৪ মার্চঃ ইয়াহিয়া ভূট্টো বৈঠক

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

একাত্তরের মার্চ মাস একদিকে যেমন আন্দোলন আর সংগ্রামের সাক্ষী, ঠিক তেমনি পাক শাসকদের নাটক, প্রহসন আর ষড়যন্ত্রেরও সাক্ষী হয়ে আছে এই মাস। মার্চের প্রতিটি দিনের মতো ঐতিহাসিক ২৪ মার্চও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ঢাকা সহ সারাদেশ। একদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পরামর্শক দল প্রহসনের আলোচনা চালাচ্ছে, অন্যদিকে নির্বিচারে গণহত্যার উদ্দেশ্যে ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে থাকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। বাঙালী ভাবতেও পারেনি মাত্র একদিন পর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়াবহ বিভীষিকাময় রাত।

 

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধুর চলমান আলোচনায় কোনো ফল না আসায় আলোচনার নামে প্রহসনে ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু পাকসামরিক জান্তার উদ্দেশ্যে বলেন, আগামীকালের মধ্যে সমস্যার কোন সমাধান না হলে বাঙালীরা নিজেদের পথ নিজেরা বেছে নেবে। বাংলার জনগণের ওপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে তা বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন বাঙালির প্রাণের এই নেতা। এদিকে সেদিনও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিছিল আর মিছিলে পূর্ণ ছিলো বঙ্গবন্ধুর বাসভবন। বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি চূড়ান্ত সংগ্রামের নির্দেশ দেওয়ার জন্য বেঁচে থাকব কি না জানি না। স্বাধীনতা আদায়ের জন্য আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।”

 

একাত্তরের এই দিন করাচী থেকে সোয়াত নামক একটি জাহাজে ৫হাজার ৬৩০ টন অস্ত্র আনা হয়। পাকিস্তানি সামরিক অফিসারদের মুখের ওপর শ্রমিকরা অস্ত্র নামাতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে পাকিস্তানী সৈন্যরা শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোয় মৃত্যুবরণ করে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতাকামী শ্রমিক। এদিকে চট্টগ্রামে যখন বাঙালীদের হত্যার জন্য অস্ত্রনামানো হচ্ছে, তখন ঢাকায় ইয়াহিয়ার পরামর্শকরা আওয়ামীলীগ নেতাদের সঙ্গে সকালে ও সন্ধ্যায় দু’দফা বৈঠক করেন। এতে আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আলোচনা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে না। আওয়ামী লীগ আলোচনা দীর্ঘ করতে আর রাজি নয়। সাংবাদিকদের তিনি আরো জানান, ইয়াহিয়ার কাছে দাবি জানালে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। ‘বল এখন প্রেসিডেন্টের কোর্টে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

২৩ মার্চ রাত হতে ২৪ মার্চ সকাল পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সৈয়দপুর সেনানিবাসের পার্শ্ববর্তী বোতলগাড়ি, গোলাহাটও কুন্দুল গ্রাম ঘেরাও করে অবাঙালীদের সঙ্গে নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। রংপুর হাসপাতালের সামনে জনতা ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনারা রংপুর সেনানিবাস এলাকায় নিরস্ত্র অধিবাসীদের ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে। এতে অনেকে হতাহত হয়।সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুরে সেনাবাহিনীর সাদা পোশাকধারী লোকদের সহযোগিতায় অবাঙালিরা জোর করে বাঙালিদের বাড়ির ছাদথেকে স্বাধীন বাংলার পতাকা ও কালো পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেয়। এরপর পাকিস্তানের পতাকা তোলে। এদিন ঢাকা টেলিভিশন কেন্দ্রে পাহারারত সেনারা টিভি কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে সন্ধ্যা থেকে ঢাকা টিভির অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

 

রাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, আলোচনা করে আর কালক্ষেপণ নয়। আওয়ামী লীগ স্পষ্ট ভাবে মতামত দেওয়ার পরও সরকার গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করছে।এতে পরিস্থিতি ক্রমে সংকটের গভীরে চলে যাচ্ছে। সরকারকেঅবিলম্বে অবস্থান জানাতে হবে। এদিকে ঢাকায় সাংবাদিকেরা এক জরুরি সভায় মিলিত হয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হয়রানিমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।

 

একাত্তরের এদিন ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে খান আবদুল কাইয়ুম খান ঢাকায় আসেন। কাইয়ুম খান ঢাকা আসার পরই ইয়াহিয়া এবং ভুট্টোর সঙ্গে এক বৈঠকে বসেন।পূর্ব পাকিস্তান বাস্তবিকই শোষণ ও বঞ্চনার শিকার বলে মন্তব্যকরে বৈঠক শেষে জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে তিনি সর্বদা নমনীয় ও আন্তরিক মনোভাবপোষণ করেন। এ অঞ্চলের শোষিত জনগণের প্রতি তাঁর অনেক ভালোবাসা। কিন্তু তাঁর একটি জাতীয় দায়িত্বও রয়েছে। পাকিস্তান অখণ্ড রাখতে তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এমন আলোচনার আড়ালে যে বিভীষিকাময় গণহত্যার ষড়যন্ত্র পাকিস্তানি সামরিক সরকার করছিল, সেটি বাঙালী জাতির কাছে ছিল ধারণারও বাইরে।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও