টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে কানপুরে টেস্টে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এই ঘোষণা দেন সাকিব।
অবসরের কথা জানিয়ে সাকিব প্রেস কনফারেন্সে বলেন ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টি তে আমি আমার শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি, মিরপুর টেস্টে (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট।’
এতে করে বোঝাই যাচ্ছে, আগামী অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলে সাদা পোশাক তুলে রাখবেন সাকিব।
সম্প্রতি সাকিবের চোট ও পারফরম্যান্স নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উঠছিল। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত নির্বাচনে সাংসদ হওয়া সাকিবকে একটি হত্যা মামলাতেও আসামী করা হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ার বাজার কারসাজির অভিযোগে তাকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে সাকিব যে স্বাচ্ছন্দ্যে নেই, সে কথা বলা যায় চোখ বুঝে।
সাকিবের বাজে পারফরমেন্সে ভর করে নিন্দুকেরা কতো সময় কতো কথাই না বলেছেন। এক্ষেত্রে সবার প্রথমেই যার নামটি চলে আসে, তিনি ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দ্রর শেহবাগ।
চলতি বছরের জুন মাসের শুরুর দিকে তিরি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান কেন অবসর নিচ্ছেন না?’
ভারতীয় সাবেক এই তারকা ওপেনার বলেছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরে ব্যাটে-বলে ছন্দে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ব্যাট হাতে মাত্র ৮ রান করেছেন সাকিব।’
প্রসঙ্গত, গত জুনে নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সাকিব আউট হন মাত্র ৩ রান করে। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়েও হতাশ করছেন সাকিব। দুই ম্যাচে ৪ ওভার বোলিং করে ৯ গড়ে রান খরচ করে পাননি উইকেট সাফল্য।
শুধু ওই বিশ্বকাপই নয়, ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সাকিব।
সাকিবের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভারতীয় সাবেক তারকা ক্রিকেটার বীরেন্দ্রর শেহবাগ বলেছিলেন, ‘গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় মনে হয়েছে টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের সময় শেষ। দীর্ঘদিন সে অধিনায়ক। সিনিয়র এক ক্রিকেটার। তার সংখ্যা যদি এমন হয়, তার তো লজ্জা থাকা উচিত। তাই না? এমনকি তার বোঝা উচিত যে টি-টোয়েন্টিতে আর সে চলে না। অবসরে যাওয়া উচিত।’
এনরিখ নরকিয়ার বলে পুলশট খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরা সাকিবের আউট নিয়ে শেহবাগ বলেন, ‘উইকেটে কিছুটা সময় কাটাও। তুমি তো হেইডেন বা গিলক্রিস্ট না যে তুমি শট বলে পুল করতে যাবে। তুমি শুধুই বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার। তোমার মান অনুযায়ী খেল। যখন হুক বা পুল করতে পারছো না, তোমার মতোই শট খেল।’
সেই সময় শেহবাগের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত কোচ এবং ক্রিকেট বিশ্লেষক নাজমুল আবেদিন ফাহিমও।
তিনি বলেছিলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বল হাতেও দলের হয়ে অবদান রাখতে পারছেন না টাইগার এই অলরাউন্ডার। যে কারণে কথা হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে, প্রশ্ন উঠছে অবসর নিয়েও।’
মোটামুটি ফর্মে থাকতেই সাকিবের অবসরের পক্ষে কথা বলেছিলেন নাজমুল আবেদিন ফাহিম। গণমাধ্যমকে ফাহিম বলেছিলেন, ‘এটা ও বুঝবে (কখন অবসর নিতে হবে)। সিদ্ধান্তটা ওর নেওয়া উচিত। ওও বোঝা উচিত একটা সময় আসে যখন সবারই চোখে পড়ে কে ভালো খেলে, কে খারাপ খেলে। দলে কার অবদান রাখার সুযোগ আছে, আর কার নেই।’
যাইহোক, টি-২০ এবং টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নাম তিনি। দীর্ঘদিন অলরাউন্ডার র্যাংকিনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছেন এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার। ক্রিকেটের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, ব্যবসা, রাজনীতি-সর্বত্রই তার সরব উপস্থিতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জয়ের ধারায় যে অধ্যায় তার পুরোটা জুড়েই আছে সাকিবের কৃতিত্ব। এখন প্রশ্ন হলো, সাকিবের অবসরের ঘোষণায় নিন্দকদের মন ভরেছি কী? নাকি তারা সাকিবকে একদিনের ক্রিকেট থেকেও সরে দাঁড়াতে বলবেন?