সালমান ফজলুর রহমান: সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক
সালমান এফ রহমান যার পুরো নাম হচ্ছে সালমান ফজলুর রহমান। তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিদের অন্যতম একজন। ২০১৭ সালের মার্চে চীন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হুরুণ গ্লোবাল প্রকাশিত বিশ্বের ২২৫৭ জন ধনী ব্যক্তির তালিকা তার অবস্থান ছিল ১৬৮৫ তম এবং তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তিত্ব যার নাম বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকা সর্বপ্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পী-গোষ্ঠী ব্যাক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন সালমান এফ রহমান। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সংস্থার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার মধ্যে একটি হলো অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল অনার্স সংক্ষেপে যাকে বলা হয় অ্যাডকো।
সালমান ফজলুর রহমান জীবনী এক নজরে
সূচনা
নামঃ সালমান ফজলুর রহমান পিতাঃ ফজলুর রহমান খান মাতাঃ সৈয়দা ফাতিমা রহমান ভাইবোনঃ সোহেল এফ রহমান
স্ত্রীঃ সৈয়দা রুবাবা রহমান
পেশাঃ শিল্পপতি, জাতীয় সংসদ সদস্য, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা
জাতীয়তাঃ বাংলাদেশ ধর্মঃ ইসলাম
|
শিক্ষাঃ – সেইন্ট প্যাট্রিক্স স্কুল – নটর ডেম কলেজে – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (পদার্থবিজ্ঞান) – করাচি বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মজীবনঃ– -১৯৬৬ সালে সালে তার ভাই সোহেল রহমানের সাথে পারিবারিক পাটকল ব্যবসা। -১৯৭২ সালে তারা বাংলাদেশ এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড বেক্সিমকো প্রতিষ্ঠা। -১৯৭৬ সালে তারা দুই ভাই মিলে বেক্সিমকো ফার্মেসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠা। -১৯৮২ সালে তারা দুবাইভিত্তিক ভাই গ্রুপের সাথে মিলিয়ে বাংলাদেশ এবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। -১৯৯০ এর দশকে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। – ১৯৯৬ সালে এই দলের হয়ে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। – ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ঢাকা ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচন – ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতে উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা। –২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় ঢাকা ১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে নির্বাচিত হন।
|
প্রাথমিক জীবন
সালমান এফ রহমান ১৯৫১ সালের ২৩মে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফজলুর রহমান খান এবং মাতার নাম সৈয়দা ফাতিমা রহমান। ম্যাট্রিক পরীক্ষা পর্যন্ত তিনি করাচির নামকরা করাচি গ্রামার স্কুলে পড়াশোনা করেন। তিনি করাচি গ্রামার স্কুল থেকে সেইন্ট প্যাট্রিক্স স্কুলে চলে যান এবং সেখান থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৬৬ সালে ঢাকায় চলে আসেন। নটর ডেম কলেজে আইএসসিতে ভর্তি হন। এর দুই বছর পর ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালে স্নাতক পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনি করাচিতে চলে যান। তারপর আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। করাচিতে গিয়ে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্পন্ন করেন তিনি।
বৃত্তিগত জীবনে সালমান এফ রহমান বিবাহিত। তার স্ত্রী হচ্ছেন সৈয়দা রুবাবা রহমান। এই দম্পতির একজন ছেলে রয়েছে । শিক্ষাজীবন শেষে সালমান এফ রহমান ১৯৬৬ সালে সালে তার ভাই সোহেল রহমানের সাথে পারিবারিক পাটকল চালনার মাধ্যমে ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১ সালে পাটকলটি সরকারীকরণ করে নেয়। ১৯৭২ সালে তারা বাংলাদেশ এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড বেক্সিমকো প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইউরোপের দেশ সমূহের সামুদ্রিক মাছ রপ্তানি শুরু করে এবং এ ব্যবসার বিনিময়ে অর্জিত অর্থের মাধ্যমে তারা দেশে ঔষধ আমদানি করতেন।
সালমান ফজলুর রহমান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিল্পপতি এবং সমাজসেবক, যিনি সালমান এফ রহমান নামেই বেশী পরিচিত।
তিনি বর্তমানে একজন পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব ও সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপগুলো দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশকে নতুন এক রূপ দিয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস চেয়ারম্যান। বেক্সিমকো গ্রুপ বিশ্বের ৫৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৭০,০০০ কর্মী কাজ করছেন।
রাজনীতি ও সরকারি সেবা
সালমান এফ রহমানের জন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারে। তাঁর পিতা ফজলুর রহমান ব্রিটিশ-শাসিত ভারতের বাংলা রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ফজলুর রহমান দেশটির প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করেন।
সালমান এফ রহমান ১৯৯০ সালে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। ২০১৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। পাশাপাশি, তিনি জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অফ ডুয়িং’ বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করার দায়িত্ব পান। দায়িত্ব প্রাপ্তির প্রথম বছরে বাংলাদেশ সাত ধাপ এগিয়ে ২০টি শীর্ষ অগ্রগামী দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নেন তিনি।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট অনুসারে বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দ্বিতীয় সর্বাধিক পছন্দের গন্তব্য। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নের সম্মেলন (UNCTAD) থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগ আগের বছরের ২.৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৩% বৃদ্ধি পেয়ে ২.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যার ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ২১.৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড
সালমান এফ রহমান ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি ও তাঁর বড় ভাই আহমেদ সোহেল ফাসিউর রহমান বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ইউরোপের বাজারে সামুদ্রিক খাবার ও হাড় চূর্ণ রপ্তানির মাধ্যমে বেক্সিমকোর রপ্তানিমুখী ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এসব পণ্য রপ্তানির বিনিময়ে তাঁরা ইউরোপ থেকে মানসম্পন্ন ঔষধ আমদানি করতেন।
বছরের পর বছর ধরেই সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বেক্সিমকো গ্রুপ ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে অন্যতম সর্ববৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি টেক্সটাইল, ঔষধশিল্প, সামুদ্রিক খাবার, আবাসন, নির্মাণ খাত, তথ্য ও প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, সিরামিকস্, আর্থিক সেবা, খাদ্য ও জ্বালানি সহ বিবিধ খাতে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এর অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে তালিকাভুক্ত প্রথম বাংলাদেশি কোম্পানি। এছাড়াও বেক্সিমকো বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সর্ববৃহৎ নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ বেক্সিমকোতে কাজ করেন।
বাংলাদেশে কর্পোরেট-ব্যবস্থাপনা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বেক্সিমকো গ্রুপ অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
বেক্সিমকো টেক্সটাইল বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ভার্টিকাল টেক্সটাইল কারখানা পরিচালনা করে। এই কারখানায় প্রতিষ্ঠানটির ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করেন। বেক্সিমকো টেক্সটাইলের বার্ষিক রেভিনিউ ৫০০ কোটি ছাড়িয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা অনেক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর গ্রাহক; যেমন: Inditex, M&S, C&A, Target, Michael Kors, PVH (CK, Tommy Hilfiger), American Eagle।
২০১৫ সালে প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জের অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে তালিকাভুক্ত হয়। একই বছর প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)-এর কঠোর মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৫টি দেশে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধ রপ্তানি করছে।
কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল থেরাপিউটিক রেমডেসিভিরের একটি জেনেরিক সংস্করণ তৈরি করে – যা কোভিড আক্রান্তদের উপর ভাইরাসের প্রভাব কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্সের আকাশ ডিটিএইচ বাংলাদেশের প্রথম ডিরেক্ট-টু-হোম স্যাটেলাইট পরিষেবা। বেক্সিমকো কমিউনিকেশন্স বেক্সিমকো গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে আকাশ ডিটিএইচ দেশের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে তথ্য ও বিনোদন সেবা।
২০২১ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের প্রথম কোম্পানি হিসেবে শেয়ার বাজারে ৩০০০ কোটি টাকার শরিয়াহ ভিত্তিক বন্ড সুকুক চালু করে বেক্সিমকো।
বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮২ সালে দুবাই-ভিত্তিক গলাদারি ব্রাদার্স গ্রুপের সাথে অংশীদারিত্ব চুক্তি সই করেন সালমান এফ রহমান। এর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছিল দেশের প্রথম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক বা এবি ব্যাংক।
সালমান এফ রহমানের দূরদর্শী ও দৃঢ় নেতৃত্বের অধীনে বেক্সিমকো গ্রুপ প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রেখেছে, নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। একইসঙ্গে দেশের সমগ্র বেসরকারি খাতের জন্য নতুন সম্ভাবনার পথ প্রশস্ত করছে।
সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা
সালমান এফ রহমান দেশের বেসরকারি খাতের প্রণোদনায় নিয়োজিত শীর্ষ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গভর্নর-এর চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট একটি মর্যাদাপূর্ণ থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক যা দেশের বৈদেশিক নীতি ও বেসরকারি খাতের অগ্রাধিকারমূলক নীতিমালা এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
সালমান এফ রহমান সংবাদভিত্তিক জনপ্রিয় চ্যানেল ‘ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন’-এর চেয়ারম্যান।
তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় স্পোর্টিং ক্লাব ‘আবাহনী লি.’–এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বর্তমানে তিনি ক্লাবটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আবাহনী লি. বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সফলতম স্পোর্টিং ক্লাব। জাতীয় পেশাদার লীগে এই ক্লাব রেকর্ড পরিমাণ সাতটি শিরোপা জিতেছে ।
সালমান এফ রহমান অতীতে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক সংস্থা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সর্বকনিষ্ঠ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সার্ক অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংস্থা ‘সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি এমসিসিআই, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন।
জনসেবা
সালমান এফ রহমান দীর্ঘদিন ধরেই জনহিতকর ও দাতব্য কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। ব্যক্তিগত জনহিতকর কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পারিবারিকভাবেও তিনি দাতব্য কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছেন। এর পাশাপাশি তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের অভ্যন্তরেও জনহিতকর সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়েছেন।
করোনা মহামারি চলাকালীন সময়ের সালমান এফ রহমানের ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে এবং বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ কোটি টাকা সমমূল্যের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), ওষুধ ও টেস্ট কীট দিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। পাশাপাশি আধুনিক পরীক্ষাগার তৈরির কাজে ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের যে-সব হাসপাতাল সেবা দিচ্ছে, সেগুলোতে অর্থ সাহায্য করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ।
বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল থেরাপিউটিক রেমডেসিভিরের একটি জেনেরিক সংস্করণ তৈরি করে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের চিকিৎসার জন্যে এই ওষুধ বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে দান করে বেক্সিমকো।
২০২২ সালের জুলাই মাসে বেক্সিমকো হেলথ Suzukawa Orif Co. এবং Ken2 Co. -এর সহযোগিতায় জাপানি রেড ক্রস আইচি মেডিক্যাল সেন্টার – নাগোয়া দেয়নি হাসপাতালে পিপিই দান করে।
এক মাস আগেই আইএফআইসি ব্যাংক বন্যা দুর্গতদের সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে এক কোটি টাকা অনুদান দেয়। সালমান এফ রহমান বর্তমানে আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে আছেন।
সালমান এফ রহমান “প্রয়াস” এর একজন পৃষ্ঠপোষক। এই প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ শিশুদের উন্নয়ন ও সহায়তা নিয়ে কাজ করে। শিশুদের বিশেষায়িত শিক্ষা, নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল পরীক্ষণ ও চিকিৎসা, বিনোদন, সহ পাঠ্যক্রম সহ সামগ্রিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও শিক্ষক, শিশুদের বাবা-মা কেও প্রশিক্ষণ ও সমন্বিত সেবা প্রদান করে থাকে প্রয়াস।
সামিট কর্পোরেশন এবং বেক্সিমকো হোল্ডিংস, দেশের দুটি শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাগো ফাউন্ডেশনকে ৪৫ মিলিয়ন টাকার বার্ষিক মিলিত-অনুদান প্রদান করেছে যাতে করে জাগো সারা দেশে ৪,০০০ শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারে। জাগো, তাদের ইউনেস্কোর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার মডেল ব্যবহার করে মহামারিকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় টেলিফোন, শর্ট মেসেজিং সার্ভিস এবং ভিডিও কনফারেন্সিং-র মাধ্যমে শিক্ষা নিশ্চিত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি খুলে যাওয়ার পর থেকে, অনুদানটি ডিজিটাল স্কুল পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে সালমান এফ রহমান নিজস্ব তহবিল থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে ১২ হাজার প্যাকেট সাহায্য সামগ্রী বিতরণ করেন। পাশাপাশি এই তহবিল থেকে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২২টি কমিউনিটি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মাঝে পিপিই, জীবাণুনাশক স্প্রে, সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি ঔষধ ও সাড়ে ১৭ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ যাতে ব্যাহত না হয় সেই লক্ষ্যে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা স্থাপনে আর্থিক অনুদান প্রদান করে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
জাগো ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বেক্সিমকো গ্রুপ কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য মানুষের আচরণগত পরিবর্তন আনতে একটি প্রচারাভিযান চালু করে। ক্যাম্পেইনটির শিরোনাম ছিল “আপনার মুখোশ কোথায়?” । বেক্সিমকো ও সামিট গ্রুপের পৃষ্টপোষকতায় ৭,০০০ স্বেচ্ছাসেবক দেশব্যাপী দশ লক্ষ মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করে।
বিনামূল্যে ঔষধ ও পোশাক বিতরণ তাঁর নিয়মিত জনহিতকর ও দাতব্য কাজগুলির মধ্যে অন্যতম। দোহারের মানুষের সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিনি ২৪০টিরও বেশি আর্সেনিক মুক্ত টিউব ওয়েল স্থাপন করেন। পাশাপাশি, তিনি বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেন যার মাধ্যমে ১৬ জন ডাক্তার নিয়মিতভাবে চিকিৎসা ও ঔষধ প্রদান করছেন।
দেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতির পথে পরিচালনার জন্য একটি শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরির উপর বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন সালমান এফ রহমান। এই লক্ষ্যে তিনি তার এলাকা দোহার ও নবাবগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অনবরত অবদান রেখে চলছেন। এর মধ্যে তাসুল্লা উচ্চ বিদ্যালয়, পদ্মা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, দোহার-নবাবগঞ্জ কলেজের জন্য তার সহায়তা ও আর্থিক অনুদান উল্লেখযোগ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আধুনিক কম্পিউটার শিক্ষাকে সকলের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি দোহারের সকল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি সমাজের সুবিধা বঞ্চিতদের শিক্ষামূলক উন্নয়নের জন্য গণ সাহায্য সংস্থা (জিএসএস) এর মাধ্যমে দাতব্য কাজে অবদান রেখে চলেছেন।
শিক্ষার্থীদের উন্নয়নের স্বার্থে ২০০৬ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে বার্ষিক অনুদান দিয়ে আসছেন।
সালমান এফ রহমান একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া অনুরাগী। তিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ক্রীড়া অনুষ্ঠান, খেলোয়াড়, এবং দলের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের খেলাধুলার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। বেক্সিমকো গ্রুপ ২০১১ সালের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অফিসিয়াল পৃষ্ঠপোষক ছিল। এছাড়া তিনি ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যকার আন্তর্জাতিক ফিফা প্রীতি ম্যাচের আয়োজন ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন।