কালের স্রোত ধরে,ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে এই কক্সবাজারের গল্প।প্রাচীনকালে,”পূর্ব কনকন” নামে,পরিচিত ছিল এই অঞ্চল । হিন্দু রাজাদের শাসনে মধ্যযুগে,মুসলিম শাসন আমলে “ফিরোজশাহ” নামে,পরিচিতি লাভ করে।তারপর ব্রিটিশ শাসনকালে,”কক্স’স বাজার” নামে,পরিচিতি লাভ করে,একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তার নাম অনুসারে।স্বাধীনতার পর,বাংলাদেশের অংশ হিসেবে,কক্সবাজার জেলায়,পরিণত হয়।প্রকৃতির অপার রূপে,ধন্য এই জেলা,বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত,ইনানীর অমলিন সৌন্দর্য।সেন্ট মার্টিন দ্বীপের,নীল জলের রহস্য,মহেশখালীর ঐতিহ্য,চকরিয়ার মনোরম পরিবেশ।ধানখিয়ার ম্যানগ্রোভ বন,প্রাণবৈচিত্র্যের আধার,রামু উপজেলার ঐতিহাসিক স্থাপনা,কক্সবাজারের গর্ব।কক্সবাজারের মানুষ,আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল,পর্যটকদের স্বাগত জানায়,মুখের হাসি মেলে।
১৮৫৪ সালে কক্সবাজার থানা গঠিত হয় এবং ঐ বছরই কক্সবাজার , চকোরিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ থানার সমন্বয়ে কক্সবাজার মহকুমা গঠিত হয়। পরে টেকনাফ থেকে উখিয়া, মহেশখালী থেকে কুতুবদিয়া এবং কক্সবাজার সদর থেকে রামু থানাকে পৃথক করে এই মহকুমার অধীনে তিনটি নতুন থানা গঠিত হয়। ১৯৫৯ সালে কক্সবাজার জেলাকে টাউন কমিটিতে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭২ সালে টাউন কমিটি বিলুপ্ত করে পৌরসভায় রূপান্তর করা হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ কক্সবাজার মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০০২ সালের ২৩ এপ্রিল বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা থেকে পেকুয়া উপজেলাকে পৃথক করা হয়।
আরব ব্যবসায়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ অষ্টম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরের মধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হত। ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গ চন্দ্র চট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। ১৯৬৬ সালে মুঘলরা চট্টগ্রাম দখল করে নেয়। মুঘল সেনাপতি বুজুর্গ ওমেদ খান কর্ণফুলির দক্ষিণের মাঘ কেল্লা দখল করে নেন এবং আরাকানবাসী রামু কেল্লাতে আশ্রয় নেয়, যা কিনা পরে মুঘলরা হঠাৎ আক্রমণ করে দখল করে নেয়। কক্সবাজারে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্ট ইন্ডীয়া কোম্পানি চাষীদের মাঝে জমি বিতরণের এক উদারনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে চট্টগ্রাম ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এই এলাকায় আসতে থাকে। বার্মা রাজ বোধাপায়া (১৭৮২-১৮১৯) ১৭৮৪ সালে আরাকান দখল করে নেন। প্রায় ৩০ হাজার আরাকানী বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৭৯৯ সালে কক্সবাজারে পালিয়ে যায়। এদের পুনর্বাসন করতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি হিরাম কক্সকে নিয়োগ দেয়। প্রতি পরিবারকে ২.৪ একর জমি এবং ছয় মাসের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল। এ সময় ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স রাখাইন অধ্যুষিত এলাকায় একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে পরিচিত হয় স্থানীয়দের মাঝে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় তার অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজার থেকেই কক্সবাজার জেলার নামের উৎপত্তি। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হিরাম কক্স ১৭৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তবে কক্সবাজার জেলার মূল ভূখণ্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদীগুলো হল মাতামুহুরি নদী, বাকখালী নদী ও রেজু খাল । মায়ানমার সীমান্তে প্রবাহিত হচ্ছে নাফ নদী । এছাড়া কুতুবদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপদ্বয়কে কক্সবাজার জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে পৃথক করেছে যথাক্রমে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মহেশখালী চ্যানেল ।
তবে বর্তমানে পৃথিবীর সব চেয়ে বড়ো এবং লম্বা সমুদ্র সৈকত হিসেবে কক্স বাজার সমুদ্র সৈকত জগত বিখ্যাত। তাছাড়া বর্তমানের কক্স বাজারের রেল স্টেশন বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্য্য মণ্ডিত উপস্থাপনা গুলোর একটি। বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোর মতো নিজেকে মেলে ধরেছে এই সাগর পারের সাগর কন্যা খ্যাত জেলা কক্স বাজার জেলা।