এক অনাকাংখিত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় সীমান্তের ওপারে এক নতুন গল্পের জন্ম দেয় প্রবাসীদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা। এপারে বুনতে থাকা স্বপ্নের পসরার উপর ভরসা করে ওপারে গিয়ে বুনতে থাকে স্বপ্নের জাল। যারা বলে স্বপ্ন পূরণের আরেক নাম প্রবাস জীবন। তারা কি জানে কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে প্রবাসীরা তাদের স্বপ্ন পূরণ করে? হাজার মাঈল দূরে বসে নিজের অন্তরের দুঃখ নিজের ভেতরে রেখে দেয়ালহীন কারাগারে এতিমের মতো পালন করতে হয় তাদের ঈদের দিন গুলো; উৎসবের দিনগুলো।
কারও জন্য এই প্রবাস জীবন পানসে, কারও জন্য মলিন নয়তো ফ্যাকাশে। কিংবা কারো কাছে রোমাঞ্চকর, অতিমাত্রায় স্বাধীনতার নাম এই প্রবাস জীবন। নিজের নিঃসঙ্গ একাকী জীবনে এক বুক দীর্ঘশ্বাস পাশে ফেলে রেখে দেশের অর্থনীতির সিংহভাগ যারা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারাই জানেন জীবনের ব্যাখ্যা কেমন নির্দয় ও নির্মম হতে পারে। তাদের ক্যালেন্ডারের পাতায় রয়ে যায় উৎসবহীন দিন।
মমতাময়ী মা , বাবা, প্রিয়জন পরিবার পরিজন এর কাছে চাইলেই যে টিকিট কেটে চলে যাওয়া যায় না তার আক্ষেপ বুকে রেখে কাজে যেতে হয়। খুব ভোরে ঈদের নামায আদায় করে কর্মক্ষেত্রে শুরু করতে হয় কর্মযজ্ঞ। প্রত্যাশার পদতলে পৃষ্ঠ হয়ে জর্জরিত এই সব মানুষগুলোর প্রিয়জন পরিজন ছাড়া কাটে এক বিষাদে ভরা ঈদ।
হয়তোবা অনেক জায়গায় সারাদিনের কাজ শেষে কিংবা পড়াশোনা শেষ করে প্রবাসী কর্মজীবী বা শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় প্রবাসী বাঙালিরা পরিবার নিয়ে মিলিত হন একে অপরের সাথে, শ্রদ্ধা ভালবাসা আর সহমর্মিতায় পরিণত হয় মিলনমেলার। এমনকি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবাই একত্রিত হয়ে মেতে ওঠেন নানা গল্প আর আড্ডায়।
ফেলে আসা দেশের নানা স্মৃতিচারনে মুখরিত হয় তাদের ঈদ আড্ডা। পাশাপাশি চলে এই মিলনমেলা উপলক্ষ্যে নানা সুস্বাদু দেশীয় খাবারের আয়োজন।
চোখ ভরা জল নিয়ে দেশের মানুষদের সাথে কাটানো মুহূর্ত মনে করে চেনা মুখ গুলোকে দেখতে না পারার কষ্ট নিয়ে শেষ হয় তাদের ঈদের দিন।
অনেক কথা অনেক ব্যাথা গোপনে রেখে দেশের অর্থনীতির চাকা কিন্তু সচল রাখছেন এই প্রবাসীরাই। তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি—দেশের জন্য দশের জন্য পরিবারের জন্য একজন প্রবাসী একজন সৈনিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় কিন্তু।