শনিবার, অক্টোবর ৫, ২০২৪
27 C
Dhaka

গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই যেভাবে কাজ করে

ভিডিও

- Advertisement -

পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান হিসাবে অ্যাডজুটান্ট জেনারেল পদে কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহম্মদ আসিম মালিককে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সরকারি গণমাধ্যম।

বিবিসি জানিয়েছে, আইএসআইয়ের নতুন প্রধান নিয়োগের খবরের সঙ্গেই এই গোয়েন্দা সংস্থাটি কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একটু পিছনে ফিরে যাওয়া যাক।

পাকিস্তানের এই গোয়েন্দা সংস্থাটির প্রায় জনা পঁচিশেক অফিসার ২০০৩ সালের পয়লা মার্চ রাওয়ালপিন্ডির একটা ঘর থেকে গ্রেফতার করেছিলেন খালিদ শেখ মুহম্মদকে।

খালিদ শেখ মুহম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলে যে তিনি ৯/১১, অর্থাৎ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে যে হামলা হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।

ওই গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে সম্পূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে সেদিনই সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে আইএসআইয়ের সদর দফতরে ডাক পড়েছিল পাকিস্তানি ও বিদেশি সাংবাদিকদের। আইএসআইয়ের কোনো একটি অভিযানের বিষয়ে সরাসরি বিদেশি সাংবাদিকদের এ ধরনের ব্রিফিং করার ঘটনা বিরল।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের অনেকেই যদিও খালিদ শেখ মুহম্মদের গ্রেফতারের খবরটা আগে থেকেই জানতেন। এটাও তাদের অনেকের জানা ছিল যে, খালিদ শেখকে রাওয়ালপিন্ডির একটি বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেটি আবার ছিল সুপরিচিত একটি ধর্মীয় পরিবারের বাড়ি। বাড়ির মালিক ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস। তার মা ছিলেন জামায়েতে ইসলামির একজন সক্রিয় সদস্য।

জামায়েতে ইসলামির সঙ্গে আল কায়দা এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সম্পর্ক নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে আইএসআইয়ের উপ-মহাপরিচালককে প্রশ্ন করা হয়েছিল।
সেই সময়ে আইএসআইয়ের উপ-মহাপরিচালক ছিলেন নৌবাহিনীর একজন অফিসার। তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, আল কায়েদা বা অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জামায়াতে ইসলামির কোনো সম্পর্ক নেই।

ওই গ্রেফতারের পর থেকে আইএসআই একদিকে যেমন পাকিস্তানের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ এবং এফবিআইয়ের সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে, আবার অন্যদিকে পাকিস্তানের ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে।

অনেক সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন যে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইটা সামরিক নয়, গোয়েন্দা লড়াই হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইতে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে, যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির চুক্তি সই হয়েছিল ৯ /১১-র হামলার ঠিক পরেই, তবে বিষয়টি কখনোই জনসমক্ষে আনা হয়নি।

পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানের সুফল দেখা গিয়েছিল আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অবসানের পরে।

সেই সময়ে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিল আর তাদের ধরার জন্য দুই দেশের গোয়েন্দারা তাদের পিছু ধাওয়া করতে সক্ষম হচ্ছিলেন।

কিন্তু, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমনের কেন্দ্রবিন্দু যখন পরিবর্তিত হয়ে উপজাতীয় এলাকায় সরে যায়, তখন পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ব্যবহারিক ও রাজনৈতিক জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে।

একটি সমস্যা ছিল পাকিস্তান সরকার এবং উপজাতীয় অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি চুক্তি। ওই চুক্তির ফলে স্থানীয় ও আল-কায়েদা সদস্যদের মধ্যে একটা ফারাক তৈরি হয়।

ওয়াশিংটন যখন তালেবানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে এবং সেখান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি স্বাক্ষর করে, তখনো এই পাকিস্তান আর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।

আইএসআই-এর মূল দায়িত্ব দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহারিক ও আদর্শগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গোয়েন্দা সংস্থাটির নাম – ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স -এর মধ্যেই সেটির মূল দায়িত্ব প্রতিফলিত হয়।

বেসামরিক অফিসারেরাও আইএসআইয়ের উচ্চ পদে থেকেছেন, কিন্তু সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামোতে তাদের বিশেষ আধিপত্য দেখা যায় না।

জার্মান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. হিন এইচ কিসলিং তার বই ‘আইএসআই অব পাকিস্তান’-এ সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামো তুলে ধরেছেন। ড. কিসলিং ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে থেকেছেন।

তিনি তার বইয়ে লিখেছেন, আইএসআই একটি আধুনিক সংস্থা, যার কাজ মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা। আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে সেনাবাহিনীরই আধিপত্য থাকে, যদিও নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর অফিসাররাও এই সংগঠনের অংশ।

আইএসআই-র মহাপরিচালকই বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা সমূহ এবং ইসলামাবাদের দূতাবাসগুলোতে নিযুক্ত সামরিক অ্যাটাশেদের সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসাবে কাজ করেন। একইভাবে তিনি পর্দার আড়ালে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর গোয়েন্দা বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন।

একজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং নৌবাহিনীর মতো সশস্ত্র বাহিনীগুলিতে নিজস্ব গোয়েন্দা বিভাগ থাকে। এই বিভাগগুলো নিজেদের বাহিনীর প্রয়োজনমাফিক গোপন তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।

আইএসআই এবং তিনটি সামরিক বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী অনেক সময়ে একই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে কারণ সবকটি গোয়েন্দা সংস্থাই সামরিক গতিবিধি আর শত্রুর ওপরে নজরদারি চালায়।

তবে সামরিক বাহিনীগুলোর অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তুলনায় আইএসআইকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা বলে বিবেচনা করা হয়।

আইএসআইকে দেশের সবচেয়ে বড় গুপ্তচর সংস্থা হলেও সেখানে কত কর্মী আছেন, তা নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম বা বেসরকারিভাবে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। আইএসআইয়ের বাজেট বরাদ্দও কখনো জনগণের সামনে আনা হয়নি।

তবে কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটনভিত্তিক ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের চালানো এক তদন্ত অনুযায়ী, আইএসআইতে ১০ হাজার অফিসার ও কর্মচারী রয়েছেন। যারা খবরাখবর সংগ্রহ করেন বা নিজে থেকেই গোয়েন্দাদের খবর দেন তারা এই কর্মী সংখ্যার মধ্যে নেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আইএসআইতে ছয় থেকে আটটি বিভাগ রয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএসআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামো এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে এটিকে এমন একটি গুপ্তচর সংস্থায় পরিণত হয়েছে, যারা মূলত কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দিকেই মনোনিবেশ করে থাকে।

সামরিক বিষয়ের অভিধানে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এভাবে: ‘বিদেশি সরকার, বিদেশি সংস্থা, বিদেশি ব্যক্তি বা আন্তর্জাতিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বা তাদের নির্দেশে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার ওপরে পাল্টা নজরদারি চালানো।’

এ ছাড়া অন্যান্য গুপ্তচর সংস্থার গতিবিধি, ষড়যন্ত্র বা গুপ্তহত্যার মতো ঘটনার হাত থেকে বাঁচার মতো একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাও কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে পড়ে। কিন্তু, কেন আইএসআই কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বা পাল্টা গোয়েন্দাগিরির ওপরে এত বেশি নজর দেয়?

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার ফিরোজ এইচ খান পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। তিনি ‘ইটিং গ্রাস’ নামে একটি বইও লিখেছেন।

ফিরোজ খান তার বইয়ে লিখেছেন, ‘আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপ নিয়ে পাকিস্তানের তৃতীয় স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক খুবই চিন্তিত ছিলেন। তার মনে হতো যে, ক্ষমতার নেশায় মত্ত এক বিশ্বশক্তি আমাদের দেশের দোরগোড়ায় হাজির হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে (যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি) কার্টার প্রশাসনের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা যথেষ্টই ছিল, তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সামরিক একনায়ক জেনারেল জিয়ার চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।

তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে মার্কিন সহায়তা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াবে। কিন্তু, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য আরো বেশি তথ্য যোগাড় করতে হবে আর পাকিস্তানের ভেতরেও নজরদারির প্রয়োজন হবে। না হলে পাকিস্তানের জাতীয় গোয়েন্দা তথ্য সুরক্ষিত রাখা কঠিন হবে।’

তিনি আরো লিখেছেন যে, জেনারেল জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের মাটিতে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করা এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

ব্রিগেডিয়ার খান লিখেছেন, ‘এর ফল ছিল আইএসআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স বিভাগকে হাত খুলে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া।’ সেই সময়ে মার্কিন গোয়েন্দা তৎপরতার বেশিরভাগটাই ছিল পাকিস্তানের গোপন পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কিত।

অন্যদিকে, আফগান যুদ্ধের পর পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা ইসলামাবাদে স্থায়ীভাবে থেকে গিয়েছিলেন।

তৎকালীন সামরিক সরকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এমনভাবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে পুনর্গঠিত করে যে, তাদের কাজের মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স অপারেশনগুলো।

ফিরোজ খানের মতে, জেনারেল জিয়া-উল-হকই ছিলেন আইএসআইয়ের কার্যপদ্ধতির রূপকার এবং তিনি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এমনভাবে চালাতে চেয়েছিলেন যাতে অন্য সব গোয়েন্দা সংস্থার পাওয়া তথ্যের তুলনায় আইএসআইয়ের তথ্য উচ্চমানের হয়।

আইএসআইয়ের মধ্যে যে ডিরেক্টরেট বা অধিদপ্তরটি কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্ব সামলায়, তার নাম জয়েন্ট কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো বা জেসিআইবি। এটিই আইএসআইয়ের বৃহত্তম ডিরেক্টরেট।

হিন এইচ কিসলিং তার বইয়ে লিখেছেন, উপ-মহাপরিচালক দেশের বাইরে ‘জেসিআইবি’-র কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন।

এই বিভাগটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে বিদেশে কর্মরত পাকিস্তানি কূটনীতিকদের ওপর নজরদারি করা। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া, চীন, আফগানিস্তান ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া দেশগুলোতে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোও এই বিভাগের কাজ।

কিসলিংয়ের কথায়, ‘জেসিআইবির চারটি অধিদপ্তর রয়েছে, যার প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। এই বিভাগগুলি হল:

১: বিদেশী কূটনীতিক ও বিদেশিদের ওপরে ব্যক্তিগতভাবে নজরদারির কাজ একজন পরিচালকের অধীনে করা হয়।

২: আরেকজন পরিচালকের দায়িত্ব অন্য দেশের রাজনীতি সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।

৩: তৃতীয় এক পরিচালকের দায়িত্ব এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা।

৪: চতুর্থ একজন পরিচালক গোয়েন্দা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এটিই আইএসআইয়ের সবথেকে বড় অধিদপ্তর। এই বিভাগটির দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে আইএসআই কর্মকর্তাদের ওপরেও নজরদারি চালানো।

এই বিভাগের কাজের মধ্যে আছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করা। পাকিস্তানের সব বড় শহর অঞ্চলে এই বিভাগের কার্যালয় আছে।

হিন কিসলিংয়ের বই থেকে জানা যায় যে আইএসআইয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তর হল যৌথ গোয়েন্দা ব্যুরো (জেআইবি)। এটি স্পর্শকাতর রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ওপরে নজর রাখে।

এটির কাজের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন, আফগানিস্তান,সন্ত্রাস-দমন কার্যক্রম এবং ভিআইপিদের নিরাপত্তা। বিদেশি দূতাবাসগুলিতে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিযুক্ত পাকিস্তানের সামরিক ও সামরিক উপদেষ্টাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে এই অধিদপ্তর।

কিসলিং লিখেছেন যে জেআইবির আরেকটি দায়িত্ব হলো জম্মু-কাশ্মীর। এই অধিদপ্তর মূলত: গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা, কাশ্মীরি সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করা। কাশ্মীরি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে মদত দেওয়ার অভিযোগ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উঠলেও পাকিস্তান বরাবরই তা অস্বীকার করে এসেছে।

কিসলিংয়ের মতে, জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করে এবং এজেন্টদের মাধ্যমে আইএসআই সদর দফতরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখে।

কিসলিং লিখেছেন, ‘বিদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এরা গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। ভারত ও আফগানিস্তানে আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য প্রশিক্ষিত গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে থাকে এই বিভাগটি।’

একজন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার মতে, আইএসআই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় কাজ করে। এর ফলে তারা প্রভূত সামরিক শক্তিতে বলীয়ান। তবে তিনি এটাও বলছেন যে, আইএসআই এবং সেনাবাহিনীর সম্পর্কের মধ্যে কখনো কখনো ফাটল ধরেছে, তা প্রকাশ্যেও এসেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘সামরিক বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন, ১৯৯৯ সালের ১২ই অক্টোবরের বিদ্রোহ শুধু নওয়াজ শরীফ সরকারের বিরুদ্ধে ছিল না, তা আইএসআই সংস্থার বিরুদ্ধেও ছিল।

সেই সময়ে সংস্থার মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউদ্দিন বাটের পাশেই দাঁড়িয়েছিল আইএসআই, যাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধান করে দিয়েছিলেন।

আরেকবার মতানৈক্য দেখা দেয় যখন আইএসআই জেনারেল মোশাররফের অধীনে নিজস্ব মিডিয়া শাখা শুরু করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক বলেন, ‘আইএসআইয়ের মিডিয়া শাখা মাঝে মাঝে স্বাধীনভাবে কাজ করে যেটা আবার সামরিক বাহিনীর মিডিয়া শাখা আইএসপিআরের কাজকর্মের উদ্দেশ্য থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘আইএসপিআর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ইউনিট। গণমাধ্যমের ওপর এই ইউনিটের চাপ থাকে, আবার আইএসআইয়ের মিডিয়া শাখার চাপও সমান্তরালভাবে চলতে থাকে।’

আলোচিত

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

Click to Call Call Now