“শান্তিতে বসবাস করার জন্যেই আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হই।“
এরিস্টটলের এই উক্তিটির সাথে চীন এবং তাইওয়ানের মাঝে চলমান যে বিরোধ চলছে অনেকদিন ধরেই সেটির কিছুটা হলেও ধারণা পাওয়া যায়।
তাইওয়ান একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এটি “First island Chain” এর একটি অংশ।
এই দ্বীপ শৃঙ্খলে, কিছু মার্কিনীপন্থী অঞ্চল রয়েছে। এই মার্কিন-বান্ধব অঞ্চলগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পররাষ্ট্র নীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাইওয়ান দ্বীপ দেশটি চীনের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে অবস্থিত
বর্তমানে তাইওয়ানের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। দেশটিতে প্রায় ৩০০,০০০ সক্রিয় সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্য এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি রয়েছে।
বহুকাল আগে তাইওয়ান চীনের অংশ ছিল। কিন্তু তারপরে, চীন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে যায় এবং তাইওয়ানকে জাপানকে দিতে হয়। জাপান বড় যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর, চীন ১৯৪৫ সালে জাপানের কাছ থেকে দ্বীপটি ফিরে পায়। ১৯৪৯ সালে, কমিউনিস্টরা একটি বড় যুদ্ধ জয়ের পর বেইজিংয়ের নেতা হয়ে ওঠে। এরপর বহু বছর তারা তাইওয়ানের দায়িত্বে ছিল। চীন বলে যে তাইওয়ান সবসময় চীনের অংশ ছিল, কিন্তু তাইওয়ান বলে যে তারা কখনই চীনের অংশ ছিল না।
তাইওয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের অক্টোবরে মানুষের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা কি মনে করে – এই উত্তেজনার জেরে শেষ পর্যন্ত চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে যুদ্ধ লাগবে?
তাদের দুই-তৃতীয়াংশের (৬৪.৩%) উত্তর ছিল যে তারা সেটা মনে করে না।
আরেকটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে তাইওয়ানের বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের তাইওয়ানিজ বলে পরিচয় দেয় – যা সম্পূর্ণ আলাদা একটা পরিচিতি।
ন্যাশানাল চেংচি ইউনিভার্সিটির ১৯৯০এর প্রথম দিকের পর থেকে চালানো জরিপে দেখা যাচ্ছে – তাইওয়ানে চীনা অথবা একই সঙ্গে চীনা ও তাইওয়ানিজ বলে পরিচয় দেওয়া মানুষের সংখ্যা কমে গেছে এবং সেখানে বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের তাইওয়ানিজ বলে মনে করেন।
বিশ্বে আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে চীন।সেই হিসেবে চীনের তুলনায় তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা অনেক কম।তাছাড়া তাইওয়ানকে অস্ত্র মদুদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র।জো-বাইডেন তাইওয়ানকে সামরিক এবং প্রতিরক্ষা খাতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তাইপে-বেইজিং সংকটে ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের নীতি রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীন যদি কখনও তাইওয়ানে আক্রমণ চালায় তাহলে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে ওয়াশিংটন।
তাইওয়ান আক্রান্ত হলে আমেরিকা তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা দেবে কিনা এ প্রশ্নে মি. বাইডেনের উত্তর ছিল: “হ্যাঁ।” হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে যে ওয়াশিংটন তার অবস্থান বদলায়নি।তাদের সাহায্য ছাড়া তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা অনেক কম বলেই বিবেচনা করা হয়।
আসুন দেখে নেয়া যাক চীন এবং তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতা কতোটুকু ?
সুত্রঃ দ্য মিলিটারি ব্যালেন্স ২০২২,আইআইএসএস
তাইওয়ানে চীনের আক্রমণ করা আসলে খুবই কঠিন। যদিও তাইওয়ান চীনের কাছাকাছি, এটি একটি পাহাড়ী দ্বীপ যেখানে মাত্র কয়েকটি জায়গা যেখানে একটি আক্রমণ ঘটতে পারে, বেশিরভাগ তাইপেইয়ের কাছে। বিভিন্ন ধরনের ভূমি, যেমন জলাভূমি, পর্বত , সহজেই আক্রমণ করা কঠিন করে তোলে। তাইওয়ানকে সফলভাবে দখল করতে চাইনিজ সেনাবাহিনীর প্রচুর দক্ষতা এবং অস্ত্র সরবরাহ থাকতে হবে। সুতরাং, তারা যখন খুশি তখনই আক্রমণ করতে পারে না, তাদের সঠিক অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি মনে করেন যে চীন তাইওয়ান আক্রমণ করবে সেখানে বলা যায় যে হয়তো অক্টোবর তাদের জন্য সুবিধাজনক সময়,যেমনটা আসলে মার্কিন অফিশিয়ালরা মনে করে থাকেন।
তাছাড়াও তাইওয়ানের টেকনোলজিক্যাল উন্নতির জন্যে তারা বিশ্ব বিখ্যাত। তারা কম্পিউটার চিপস বানানোর জন্য বিখ্যাত।তাছাড়াও তাদের রয়েছে অনেক প্রভাবশালী কিছু টেক কোম্পানী যেমন: স্যামসাং,ফক্সকন,মিডিয়া টেক,ইত্যাদি। বিশ্ব অর্থনীতিতেও তাদের অবদান রয়েছে অনেক।বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কম্পিউটার চিপস তাইওয়ান উৎপন্ন করে।
সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়,তারা বিশ্বের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি শিল্প নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন যে ,এই মুহূর্তে চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করছে না। কারণ চীন তাদের অর্থ ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে ব্যস্ত। যাইহোক, চীন সৌদি আরবের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে চুক্তি করতে শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে তাইওয়ানে আক্রমণ করার বিষয়ে তাদের আরও ইতিবাচক বোধ করছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্ব নিরাপত্তা নিয়ে দেয়া ভাষনে যখন বলেন, ‘সমুদ্রে ঝড় উঠতে যাচ্ছে’ তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, প্রশান্ত মহাসাগর অশান্ত হতে খুব বেশি দেরি নেই।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি আরকাইভ অনলাইন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।