মিডিয়া এড়িয়ে চলতে পচ্ছন্দ করেন সাকিব আল হাসান। গণমাধ্যমের সাথে সবসময়ই দুরত্ব বজায় রাখেন, এমনিক তীব্র বিতর্কিত পরিস্থিতিতে যেখানে বলা প্রয়োজনীয়, সেসব মূহুর্তেও চলেছেন একই নীতিতে। দেশের বাইরে ব্যক্তিগত কাজে যাওয়া কিংবা ফেরা এরকম পরিস্থিতিতে সাকিব তৈরী করেন আরো বড় দেওয়াল,। যে গেট দিয়ে আসা বা যাওয়ার কথা, সেটা এড়িয়ে অন্যকোন ব্যবস্থায় দেশ ছেড়েছেন কিংবা এসেছেন…বাংলাদেশের মিডিয়াকর্মীর এমন ভেলকি দেখার অভিজ্ঞতায় কমতি নেই। সেই তিনিই তৈরি করলেন ভিন্ন এক নজির, ব্যক্তিগত কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বললেন, তাও আবার তার টিমমেট সম্পর্কে। গণমাধ্যম কর্মী হবার দরকার নেই; যারা চেনে তাকে, অনুসরন করে..তাদের কাছে এরকম সাকিব একদমই অচেনা।
”বিশ্বকাপের ম্যাচ ডেতে ঘুমিয়েছিলেন তাসকিন, ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারেননি” সম্প্রতি দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হবার পর ব্যাপক শোরগোল। এই নিউজ যেই মিডিয়াতে এসেছে, সেটা ক্রিকেটের নানান খবর-বেখবরে বরাবরই আলোচিত-সমালোচিত। ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রতিযোগীতা থাকে, মিডিয়া হাউজগুলোর মধ্যেও তা। সেই আলোচিত খবর ইস্যু বানিয়ে বানিয়ে প্রতিদ্বন্দী মিডিয়া থেকে এমনভাবে সাকিবকে প্রশ্নটা করা হচ্ছিল…টিমের ভেতরকার খবর বাইরে আনার জন্য দোষটা সেই মিডিয়ারই, যাতে এমনভাবে জবাবটা দেন।
প্রসঙ্গক্রমে অতীতে বিভিন্ন সময়ে দলের ভেতরকার নিউজ পাবলিকল হওয়ায় বিরক্ত হিয়েছেন সাকিব। তবে যেখানে এবার বিসিবিও তাসকিন ইস্যুতে কোন কথা বলছে না, সেখানে সাকিব নিজেই খুলে ফেললেন পর্দা, সামনে নিয়ে সেদিনের ঘটনার প্রকৃত ছবিটা, দোষ তাসকিনেরই।
‘ক্রিকেটে একটা নিয়ম আছে যে দলের বাস কারও জন্য অপেক্ষা করে না। যদি কেউ কখনো বাস মিস করে, তারা পরে গাড়ি নিয়ে মাঠে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ট্রান্সপোর্টের সাপোর্টটা অনেক কঠিন ছিল। যখন তাসকিন পৌঁছেছিল মাঠে, টস হওয়ার ৫-১০ মিনিট আগে। স্বাভাবিকভাবে কঠিন ছিল ওই সময় তাকে দলে নেওয়া। তাসকিন পরে এর জন্য দলের সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে।’
উপস্থিত সাংবাদিকদের কেউ কেউ তারপরও তাসকিনের পক্ষে ব্যাট করতে মরিয়া ছিলেম। তাদের তরফ থেকে বলা হচ্ছিল, তাকে কি ঘুম থেকে ডেকে নেওয়া যেতো কি না, কিংবা অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল কি না? ডিফেন্ড করার তোয়াক্কা না করে এবারও টিমমেটকে কাঠগড়ায় দাড় করালেন, যেন আগে থেকে তিনি ঠিক করে রেখেছেন কি বলবেন, একটুও বাঁচাবেন না জুনিয়র টিম মেইটকে।
‘ক্রিকেটে এ রকম রীতি নেই যে কাউকে ঘর থেকে ডেকে আনবে। দল কখনোই কারও জন্য অপেক্ষা করে না। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে এমনও হয়েছে যে খেলোয়াড় দৌঁড়াচ্ছে, বাসের দরজা লেগে গেছে, বাস চলে যাচ্ছে। দলের বাস কখনো থামে না। একজনের জন্য পুরো দল কখনো থেমে থাকে না।’
বড় প্রশ্ন সত্য প্রকাশ না করে সাকিব আল হাসান ঘটনাটা আড়াল কিংবা এড়িয়ে যেতে পারতেন কিনা? শত হলেও তো তাসকিন আহমেদ তারই সতীর্থ। অন্য কোন ক্রিকেটারের বিতর্কের ব্যাপারে এর আগে কখনোই মন্তব্য করেননি সাকিব। এমনিতেও অনান্য দেশের বড় ক্রিকেটাররা আরেক টিমমেইটের কনট্রোভার্সি নিয়ে বলেন না, বরং পারলে তার পক্ষে কথা বলেন।
তাহলে কেন করলেন এমনটা? ঘটনার ভেতরে যাবার জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক…এর আগে ব্যর্থ বিশ্বকাপ মিশন শেষে দেশে ফেরা মাত্রই সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে যায় এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন তাসকিন। মিডিয়াতে বলেছিলেন ”দুইজন সিনিয়র ক্রিকেটার অফফর্মে থাকার প্রভাব দলের উপর অবশ্যই পড়েছে।”
এই কনটেনটি যখন লেখা হচ্ছে, তখান জানা গেল সাকিব আল হাসানের দেওয়া সবশেষ স্টেইটমেন্টে আবারও ভুল ধরেছেন তাসকিন। বলছেন, ‘‘ভারত ম্যাচের আগে আমার একটু দেরি হয়েছিল। তবে যেটা বলা হচ্ছে টসের পর গেছি, এটা ভুল। টস হওয়ারও আধঘণ্টা বা ৪০ মিনিট আগে পৌঁছেছিলাম মাঠে।’
সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদে বক্তব্য, পাল্ট বক্তব্যে ফুটে উঠছে বিশ্বকাপ চলাকালীন দেশের ক্রিকেটের ড্রেসিংরুম কেমন ছিল। সিনিয়র ও জুনিয়র খেলোয়াড়দের মধ্যে যে সম্পর্কটা সুবিধাজনক বিশ্বকাপে ছিল না…এমন একটা আচ তো পাওয়াই যায়। একটা বিভক্ত জাতি যেমন লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না, সাজঘরের বিভক্তিতে বড় টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারে না ক্রিকেট টিমও।
একসময়কার তাসকিনের মতো জুনিয়ররা এখন সিনিয়র হয়েছে, খেলা ছেড়ে দেবার সময় হয়েছে সাকিব-রিয়াদের মতো সিনিয়রদের। পালাবদলের এই সময়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে দিনের আলোর মতো পরিস্কার ভেতরকার আবহ একদম সুবিধের নয়। এরকম পাল্টাপাল্টি-অন্তর্দ্বন্দ্ব আরো বেশি প্রকাশ্যে আসতে পারে সামনে।