জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বদলে যাচ্ছে দেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা। সেই সাথে বদলে যাচ্ছে এক ঋতুর সঙ্গে আরেক ঋতুর তফাত। আবহাওয়ার এই বদলে যাওয়ায় এখন সারা বছর জুড়েই দেখা যায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের আগ্রাসন। মৌসুম না হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন না ডেঙ্গু হয়েছে। তাই দেরি হচ্ছে হসপিটালে আসতে। এর কারণে বাড়ছে মৃত্যু। মুগদা হসপিটালের পরিসংখ্যান বলছে, গেলো বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মৃত্যু ছিলো ১ জন। চলতি বছরে এ হাসপাতালে ৮ মে পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের।
এডিস মশার প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সংখ্যার দিক থেকে গেলো দু বছরের প্রথম ‘পাঁচ মাসের’ তুলনায় প্রায় ৭ গুণ।এডিস মশার প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সংখ্যার দিক থেকে গেলো দু বছরের প্রথম ‘পাঁচ মাসের’ তুলনায় প্রায় ৭ গুণ। গত বছর এই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিলো ১৩ জন এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৭ জন।
মৌসুমের আগে ও পরে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারন জলবায়ু পরিবর্তন বলছে আইইডিসার। থাকলেও এবার তা ১৩ জন।সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম। কারণ, এই সময়ে বর্ষাকাল শুরু। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়। প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। রাস্তা উঁচু করার ফলে নিচু হয়ে যাওয়া বাসাবাড়ির জমা পানিতেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২১ মের মধ্যে আক্রান্ত (হাসপাতালে ভর্তি হওয়া) ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০ জন। এই সময়ের মধ্যে কোনো মৃত্যু ছিল না। পরের বছর ২০২২ সালেও এই সময়ের মধ্যে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২৪৩ জন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ২১ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী ১ হাজার ৪৪৭ জন, যা গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯৬ গুণ বেশি। আর ২০২১ সালের তুলনায়, প্রায় সাড়ে ১৪ গুণ। এ বছর এ পর্যন্ত ১৩ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু এখন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক কোনো রোগ নয়। সারা দেশেই মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, নানান কারণে সারা বছরই এখন পানি জমে থাকছে। মে মাসে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এডিসের আরও বেশি প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। সমাধানের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নগরবাসীকে সিটি করপোরেশনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। করপোরেশনের উচিত আক্রান্ত রোগীর এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার পরে যে টাটকা রোদ হয় তাতে এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কয়েকগুন।কাজেই এ সময়টাতে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান সংশ্লিষ্টদের