শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
22 C
Dhaka

দেশে ডেঙ্গু টীকা মিলছেনা সহসাই

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

ডেঙ্গু পরিস্থিত মহামারি পর্যায় পৌঁছালে গত বছর জুলাইয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় দেশে ডেঙ্গু টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সরকার কাজ করছে। তবে এখনও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি মেলেনি। মূলত দুইটা টিকার সুরক্ষা ও কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণে করা হচ্ছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ এবং ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্ট ও জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিভি-০০৫ নামের একটি টিকা উন্নয়নে কাজ করছে। এই টিকার দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে বাংলাদেশে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাও এখানে হওয়ার কথা ছিল। তবে অর্থ সংকটে এই প্রক্রিয়া আটকে গেছে। বর্তমানে ভারতে এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এই টিকা বাজারে আসতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। এছাড়া জাপানে উৎপাদিত ‘কিউডেঙ্গা’ টিকা দেশে এনে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা ছিল। এটিরও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে দেশে ডেঙ্গুর টিকা সহসায় মিলবে না।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গুর টিকা দেশে প্রয়োগের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিতভাবে জেনে বা দেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধী দুটি টিকা প্রয়োগ হচ্ছে, এর একটি ফ্রান্সের বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সানোফির তৈরি ডেঙ্গুভ্যাক্সিয়া; অন্যটি জাপানের ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাকেদার বানানো কিউডেঙ্গা। তবে সব বয়সীকে এ টিকা দেওয়া হচ্ছে না। জাপানের টিকাটি গত বছর প্রয়োগে অনুমোদন দিয়েছে ডব্লিউএইচও। এই টিকা টিকার কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে দেশের টিকা টিকাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (নাইট্যাগ)।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধী টিভি-০০৫ নামের টিকার প্রথম প্ররীক্ষামূলক প্রয়োগ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষামূলক করা হয় বাংলাদেশে। ভারতে তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষামূলক ২০ হাজার মানুষের উপরে প্রয়োগ করা হবে। দুই বছর ধরে এই টিকার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিপরীতেই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরির প্রমাণ মিলেছে।

 

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও ডেঙ্গুর টিকার পরীক্ষার নেতৃত্বদানকারী রাশিদুল হক। তিনি বিডি আরকাইভকে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু রোগের টিকার দ্বিতীয় পর্যায়ের সফল পরীক্ষা হয়েছে। তবে অর্থ সংকটে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আমরা এখনও বিভিন্ন দপ্তরে অর্থ সংগ্রহের কাজ করছি। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখার করা পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের দেশে এই পরীক্ষা করা গেলে, দেশে উৎপাদন ও কম দামে টিকা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। এই টিকা বাজারে আসতে আরও দুই বছর সময় লাগবে বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।

 

তিনি বলেন, এই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা আংশিকভাবে ব্রাজিলে হয়েছে। ব্রাজিলে এই পরীক্ষার সময় সেখানে শুধু ডেঙ্গুর ১ এবং ২ ধরন ছড়িয়েছিল। ফলে সেখানকার ট্রায়ালে ডেঙ্গুর ১ এবং ২ ধরনের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা লক্ষ করা গেছে। সব বয়সীর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রায় ৮০ শতাংশ। ডেঙ্গুর এ পর্যন্ত যতগুলো টিকা এসেছে, তার মধ্যে কার্যকারিতার দিক থেকে এই হার সর্বোচ্চ।

 

দেশে টিকা অনুমোদন ও প্রয়োগের বিষয়ে সরকারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করে থাকে টিকাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (নাইট্যাগ)। এই কমিটির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, জাপানের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা একটি বৈঠক করবো। সব কিছু দেখে সরকারকে পরামর্শ দেবো। জাপানের ‘কিউডেঙ্গা’টিকা ৪ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের দেয়া যাবে। তবে এ টিকা ডেঙ্গুর ডেন-২ ধরনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে অন্য তিনটি ডেন থেকে সুরক্ষা দেবে কি না সেটা পরীক্ষা করে দেখা জরুরি। দ্রুত এ বিষয়ে বৈঠক হতে পারে। আসলে দেশের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা টিকা প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে টিভি-০০৫ নামের টিকার বিষয়ে তথ্য নেই এই বিশেষজ্ঞের কাছে।

 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্রশাসন) মো. সালাহউদ্দিন বলেন, করোনা টিকার মতো এ প্রতিষেধকও আমদানি করতে ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি দেশে ডেঙ্গু টিকা আনতে নিবন্ধন নেইনি।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু টিকা নিয়ে এখন পর্যন্ত পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বিভিন্ন দেশের উৎপাদিত ডেঙ্গু টিকার তথ্য সংগ্রহ করছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। এখন পর্যন্ত টিকার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাইনি। আইসিডিডিআরবির টিকার ট্রায়ালের বিষয়ে আমি অবহিত না।

 

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় এবার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিরোধ,  চিকিৎসা এবং লসিস্টিক সাপ্লাই এই তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছি। প্রতিরোধের জন্য বছরে তিনটি জরিপ করে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করেছি। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিটি হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে সব জায়গায় যাতে তথ্যগুলো ঠিকমতো প্রচার হয় সেটা লাইফ স্টাইল হেলথ এডুকেশনকে দিয়ে কাজ করছি। হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। কোভিডের সময় যে-সব হাসপাতাল আমরা ডেডিকেটেড করেছিলাম সেগুলো তো আছে, আরও শয্যা যদি লাগে যোগ করবো। ডেঙ্গু চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় আইভি ফ্লুইড,। আইভি ফ্লুইডের জন্য এরইমধ্যে সব ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির সাথে কথা বলেছি। কি পরিমাণ ফ্লুইড লাগবে তার চাহিদা দেয়া হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশা নিধন করতে হবে। গবেষকেরা বলছেন মশা এখন দিন রাত মানছেনা, রাতেও কামরাচ্ছে। ময়লা পানিতেও এডিস মশা জন্মাচ্ছে যা চিন্তার। আবার মশার ওষুধও নাকি কাজ করছেনা-এসব নিয়ে কাজ করতে হবে সিটি করপোরেশনকে।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও