শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
25 C
Dhaka

নিজ পরিবারের মধ্যেই অন্তঃপ্রজনন!

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

পৃথিবীতে অনেক বিরল রোগই রয়েছে। তবে এ যেনো এক বিরলতম ভিন্ন রোগ! তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এর উদঘাটনও হয়েছে ভিন্ন ভাবে। তবে এই রোগের নামেই তৈরি হয় পুরো একটি দ্বীপের মানুষের জীবনধারা। কি হচ্ছে সেই দ্বীপে? সেটাই জানার চেষ্টা করবো এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।


রোগের নামেই আস্ত একটি দ্বীপের নামকরণ। কারণ জনসংখ্যার ১০ শতাংশই বর্ণান্ধ। গোটা বিশ্বের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০ হাজারে ১ জন লোকের মধ্যে এই রোগটি ধরা পড়ে। সেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের এই ক্ষুদ্র প্রবাল দ্বীপে অধিকাংশই এই রোগের শিকার। সে কারণে এই দ্বীপকে ‘বর্ণান্ধ দ্বীপ’ বলেও ডাকা হয়ে থাকে।


পিঙ্গেলাপ অ্যাটল। অ্যাটল শব্দের অর্থ ক্ষুদ্র প্রবাল দ্বীপ। সেই দ্বীপে এমন একটি বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছিল যার ফলে দ্বীপের বাসিন্দাদের জীবনে ঘটে যায় আমূল পরিবর্তন। ১৯৯৬ সালে প্রথম বার সংবাদের শিরোনামে আসে পিঙ্গেলাপ দ্বীপটি। এই দ্বীপের বাসিন্দাদের অধিকাংশের চোখের আলো সাদা-কালো অথবা ধূসর।


চিকিৎসা পরিভাষায় এই বিরল অবস্থাটি নাম ‘অ্যাক্রোমাটোপসিয়া’। অ্যাক্রোমাটোপসিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা উজ্জ্বল আলোর প্রতি খুব সংবেদনশীল। দিনের আলোয় কোনও কাজ করা তাঁদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। অন্য দিকে সাধারণ দৃষ্টিশক্তির মানুষের তুলনায় রাতে তাঁদের দৃষ্টিশক্তি বেশ খানিকটা বৃদ্ধি পায়


পিঙ্গেলাপের বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় এই রোগের শিকার। কী ভাবে এই রোগের কবল পড়লেন তাঁরা? সেই ইতিহাস জানতে ফিরে তাকাতে হবে ২৫০ বছর আগে।


১৭৭৫ সালে ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায় পিঙ্গেলাপের উপর দিয়ে। সেই ঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যায় হয়ে জনবসতি। অধিবাসীদের সিংহভাগই প্রাণ হারান ঝড়ের কবলে। বরাতজোরে বেঁচে যান সেখানকার রাজা ও তাঁর গুটিকয়েক আত্মীয়। এঁদের মধ্যে ছিলেন কয়েক জন মহিলা।



দ্বীপের জনবসতি বাঁচাতে রাজা নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই সহবাস শুরু করেন। রাজার ঔরসে দ্বীপে টিকে থাকা প্রতিটি মহিলার গর্ভে আসে সন্তান। বেঁচে যায় আস্ত একটি জনজাতি। দ্বীপকে জনমানবহীন হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দেন রাজা।


কিন্তু গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক যৌন সম্পর্ক বা অন্তঃপ্রজননের (ইনব্রিডিং) ফলে দেখা দেয় জিনগত ত্রুটি। দোহাকেসা মওয়ানেনিহসেদ নামের শাসক এই রোগটির বাহক ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় আসার পর চার প্রজন্মের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব না ছড়ালেও পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ৫ শতাংশ জনসংখ্যা এই রোগে আক্রান্ত হয়।


ইনব্রিডিঙের ফলে জিন বৈচিত্রের অভাব এবং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই ব্যাধিটি এখন প্রায় ১০ শতাংশ জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনা জীববিজ্ঞানীদের গবেষণার উপাদান হয়ে ওঠে।


এই ঘটনার পর একটি ধারণার ব্যাপক ভাবে চর্চা শুরু হয়। পৃথিবীতে মহাপ্রলয় নেমে এলে মাত্র দু’জন নর-নারী বেঁচে থাকলেও কি আবার পৃথিবীতে মানবসভ্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব? বিষয়টি নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকলেও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি গবেষকদের একাংশ।


তাঁরা জানিয়েছেন, বর্ণান্ধতা ছাড়া পিঙ্গেলাপে ইনব্রিডিঙের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে ভয়াবহ কোনও জিনগত ত্রুটি দেখা দেয়নি।


সাধারণ ভাবে গোষ্ঠী বা পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক যৌন সম্পর্কের ফলে যে সন্তান জন্মায় তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্রমাগত অন্তঃপ্রজনন ঘটলে দুর্বল বংশধরদের জন্মানোর আশঙ্কাও থাকে। প্রথম প্রজন্মের সবাই ভাই এবং বোন হবে। এই প্রজন্মের পর থেকে অন্তঃপ্রজনন শুরু হবে।


মা-বাবার থেকে জিনের দু’টি সংস্করণ পায় তাঁদের সন্তান। সেই দু’টি জিনেই ত্রুটিপূর্ণ হলে সন্তানের মধ্যে সেই ত্রুটি প্রবলমাত্রায় থাকার আশঙ্কা থাকে। এমনকি সেই সন্তান মারাও যেতে পারে।


এই ধারণাতেও অবশ্য পুরোপুরি সহমত হতে পারেননি অনেক জীববিজ্ঞানী। তাঁদের মতে অন্তঃপ্রজননের ফলে জন্মানো নবজাতকদের ৭৫ শতাংশ সুস্থ জীবনযাপন করতে পারবে।


সেই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁরা উদাহরণ তুলে ধরেছেন মানবজাতির সূচনা পর্বের। সৃষ্টির আদিতে এক জোড়া নর-নারীর মিলনের পর যে প্রজন্ম তৈরি হয় তাদের মধ্যেও ইনব্রিডিং বা অন্তঃপ্রজননের নজির ছিল।


তা হলে কি মাত্র দু’জনের পক্ষে সারা পৃথিবীকে জনসংখ্যায় ভরিয়ে দেওয়া সম্ভব? জেনেটিসিস্টরা নির্ধারণ করেছেন যে, অন্তঃপ্রজননের ক্ষতিকারক প্রভাব এড়াতে এবং দীর্ঘমেয়াদি আয়ু পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৫০০ জন প্রয়োজন।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও