বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
29 C
Dhaka

পতনের বৃত্ত থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কতোটা প্রস্তুত নতুন বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ?

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিগত ৫০ বছরে কোনো নীতিনির্ধারকগণ শেয়ারবাজারের গুরুত্ব উপলব্ধি করেনি। ফলসরুপ, উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি পুঁজিবাজার দিয়ে সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর হলেও বাংলাদেশে কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে না গিয়ে ব্যাংকে যাওয়ার ঝোঁক বেড়েই চলেছে। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন করছে। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যংকগুলো রেগুলেটরি ক্যাপিটাল সংরক্ষনে হিমশিম খাচ্ছে। তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। যার ফলে ডোমিনো ইফেক্টের প্রভাব কিছুটা হলেও ব্যাংকিং খাতকে সামাল দিতে হচ্ছে,- গ্রাহকদের নগদ অর্থের চাহিদা অন্য দিকে তারল্য সংকটজনীত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির আসল ভিত বলা হয় শেয়ারবাজারকে। এ বাজার বাদ দিয়ে একটা পুজিঁবাদী অর্থনীতির অস্তিত্ব অকল্পনীয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুঁজি আহরণের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী করতে যথেষ্ট সময়ক্ষেপণ হয়েছে। পুঁজির জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা আমাদের বর্তমানকে বিপদসীমার কাছাকাছি পৌছে দিয়েছে।

এই সংকট কাটাতে প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রকৃত বিনিয়োগকারী যারা নিজেদের সঞ্চয়ের অর্থ নিয়ে আসে, তাদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের সাথে যে ঝুঁকি জড়িত সেটি বিবেচনা করেই বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। পুঁজি বাজার যে স্বল্পমেয়াদে অতিরিক্ত লাভ করার জায়গা নয় সেটিও বিবাচনায় রাখতে হবে বিনিয়োগকারীদের। দৈনন্দিন বাজার করার সময় আমরা যেমন দেখেশুনে বুঝে ভালোটা ক্রয় করি, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের এর থেকেও আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগ মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ মানসিকতা তৈরি করা জরুরী।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে মূলধনের শতকরা ২৫ শতাংশ সীমারেখাতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু এটি তাদের মুল ব্যবসা নয়। ফলে লাভ কমার ইঙ্গিত পেলেই ব্যাংকগুলো তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। এটিও পুঁজিবাজারে সংকটের অন্যতম কারণ। এই সংকট দূরীকরণে নতুন বাংলাদেশের কাঙ্ক্ষিত সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বিনিয়োগকারী যেমন পুঁজিবাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঠিক তেমনি সামষ্টিক অর্থনীতির উপাদানগুলো যেমন – সুদের হার, মুদ্রার বিনিময় হার, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জিডিপির, রফতানি, ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট, পোর্ফোলিও ইনভেস্টমেন্ট, মুল্যস্ফিতি প্রভৃতি উপাদানগুলোর ইতিবাচক পরিবর্তন পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা এবং শক্তিশালী করতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও কি ধরনের কোম্পানী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে সেটিও পুঁজিবাজারের স্থিতিশীল কাঠামো আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ।

বহুজাতিক বড় বড় কোম্পানীগুলো বাংলাদেশে ব্যবসা করছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চাই না। কারণ কোম্পানিগুলো কী পরিমাণ আয় করছে, সরকারকে কী পরিমাণ ট্যাক্স দিচ্ছে, তিনমাস অন্তর অন্তর আর্থিক অবস্থা প্রকাশ করতে হবে যেটা অনেক কোম্পানিই করতে চায় না। এমনটা হলে সরকার তার প্রাপ্য ট্যাক্স থেকে বঞ্চিত হবে এবং দেশের সাধারণ মানুষ কোম্পানির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হবে। নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার সরকার চাইলে সেই কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

গণঅভ্যুত্থানের আড়াই মাস পর শেয়ার বাজারের সূচক ২০ শতাংশ পতনে ৫ হাজারের নিচে চলে গেছে। সূচকের উত্থান-পতন সাময়িক এবং তা হতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার কতটা টেকসই এবং মজবুত তা নির্ভর করবে ভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে কিনা তার ওপর।

সুশাসনের অভাব এমন কোম্পানীগুলোকে শুধু জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করে থেমে না থেকে বরং পাশাপাশি বাজারে ভালো এবং লাভজনক কোম্পানীগুলোর শেয়ার তালিকাভুক্ত করার জন্য নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশার সরকারকে দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাও ফেরত আসবে।

২০১০ সালের নজিরবিহীন উত্থান ও পতনের সাক্ষী বাংলাদেশকে কি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সরকার একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার ও সুশাসন উপহার দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জ থাকবে রেফারির ভূমিকায় এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পদায়ন হবে ফিফার ভুমিকায়?

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও