শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩

প্রবাসীদের জন্য এয়ারপোর্টে কেন আরো সুবিধা দেয়া হয় না?

১৮ ডিসেম্বর সারা বাংলাদেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। এই দিনে আয়োজন করা হয় নানা ধরনের কর্মকাণ্ড। এই দিনকে ঘিরে যখন প্রবাসীদেরকে প্রশ্ন করা হয়, “তাদের অনুভূতি কি?” বেশিরভাগেরই একটি পাল্টা প্রশ্ন থেকেই যায়, “এই দিবস পালন করে কি আমাদের হয়রানির আশঙ্কা কমার কোন সম্ভাবনা আছে?”

 

পুরো বিশ্বের আনাচে কানাচে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করে। এসব প্রবাসী দেশে ফেরত আসাকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হয় সেখানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দ্বারা। সম্মুখীন হতে হয় অসদাচরণ ও দুর্নীতির। প্রবাসী হয়রানি বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যেমন,

 

•    বছরের পর বছর সংবাদ প্রকাশ

- Advertisement -

•    মন্ত্রী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

•    সিভিল অ্যাভিয়েশনের কড়া তদারকি

•    প্রশাসনিক নজরদারি

•    গোয়েন্দা বিভাগের নানামুখী তৎপরতা

 

কিন্তু এসবের পরেও বন্ধ হয়নি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও কথর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে  বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রী হয়রানি বন্ধ করার ব্যাপারে। কিন্তু এতেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।

 

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১১০ থেকে ১২৮ টি ফ্লাইট এই বিমানবন্দরে উঠানামা করে। আনুমানিক ২০,০০০ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন এই বিমানবন্দর দিয়ে। কিন্তু নিরাপত্তা তল্লাশির নামে ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীদের। শুধু তাই নয় বরং টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসা  বিদেশিদেরও হেনস্তার শিকার হতে হয় বিমানবন্দরে। নিজের পরিবার থেকে দূরে, বিদেশে কঠোর পরিশ্রম করে নিজ দেশের উন্নতির স্বার্থে রেমিট্যান্স পাঠায়। কিন্তু এরপরেও তাদেরকে নিজের দেশে ফিরতে হয় জীবনের শঙ্কা নিয়ে। বিমানবন্দরের যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাবেই ডাকাতদের কবলে পরতে হয় প্রবাসীদের।

 

ফ্রি ইন্টারনেট ও ফ্রি সিম ব্যবহারের সমস্যা

- YouTube -

যেসব প্রবাসী অনেকদিন ধরে বিদেশে বসবাস করছেন তাদের কাছে বাংলাদেশি কোনো সিম থাকে না। যার ফলে বিমানবন্দর থেকে আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে ও পরিবহন সেবা নিতে সমস্যায় পরতে হয়। তাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড বা বিটিসিএলের সহায়তায় ৪টি টেলিফোন বুথ স্থাপন করেছে প্রবাসীদের সুবিধার জন্য। বিমানবন্দরে ফ্রি ইন্টারনেট সেবার আয়োজন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ “আমরা” ও “উই” এর মাধ্যমে।

 

কিন্তু প্রবাসীরা কি আদৌ এই সেবা ভোগ করতে পারছে? যাত্রীদের মতামত অনুযায়ী, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্রী-টেলিফোন ও ফ্রি-ইন্টারনেট সেবার নামে এক ধরনের ভূতুড়ে আয়োজন করে রেখেছে বলে জানা যায়। কেননা বিমানবন্দরে বাংলাদেশি সিমে পাঠানো ওটিপি ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া হয়না প্রবাসীদের। কিন্তু বিশের অন্যান্য দেশে পাসপোর্ট নাম্বারের মাধ্যমেই ফ্রি ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকে খুব সহজেই।

 

লাগেজ নিয়ে দুশ্চিন্তা

বিমান থেকে নামার পর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় লাগেজ সংগ্রহের জন্য। বিমানবন্দরের ভেতরে সংঘবদ্ধ চক্র লাগেজ গায়েব করে ফেলে, আবার অনেক সময় লাগেজ কেটেও ফেলে। লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার সময় বিমানবন্দরে দেখা যায় ট্রলির সংকট। ফলে এতদূর ভ্রমণ করেও প্রবাসী যাত্রীদেরকে দেখা যায় তাদের ভারি ভারি লাগেজ মাথায় করে নিয়ে বের হতে।

 

বিদেশ যাত্রায় ভোগান্তি

যেকোনো বিমানবন্দরে ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী যাত্রীদেরকে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কথাও ঠিকভাবে সেই ফ্লাইট শিডিউল দেওয়া থাকে না। যার কারণে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। অনেক যাত্রী ভুল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ফ্লাইট মিস করে। এমনকি বিমানবন্দরের ভেতরে কিছু হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা থাকলেও সেই জায়গায় কোনো কর্মকর্তা থাকে না। ইমিগ্রেশনের সময়ও যাত্রীদের সাথে প্রচুর বাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যাত্রীদের ভাষ্যমতে, তাদেরকে “তুই” বলে সম্বোধন করা হয়ে থাকে। এক রকম চাকরদের মতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও গালিগালাজ করে তাদের সাথে কথা বলা হয়ে থাকে।

 

যাত্রীরা ফ্লাইটে উঠার আগে যখন শেষবার তাদের শরীর ও ব্যাগ তল্লাশি করা হয় তখনও তাদেরকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। কোনো রকম অতিরিক্ত টাকা না দেওয়া হলে তাদেরকে অনেক জিনিসপত্র নিয়েই বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না বলে থাকে। 

 

ফেরার পরের ভোগান্তি

দেশে ফেরার পর বিমান বন্দর থেকে বের হওয়ার আগে তাদেরকে যেতে হয় হেল্প ডেস্কে। কিন্তু যাত্রীরা জানিয়েছেন সেই ডেস্কে নেই কোনো শৃঙ্খলা। ফরম পূরণ করার জন্য কর্মকর্তাদের কাছে কলম চাইলে সেটার জন্যও তারা অতিরিক্ত টাকা চার্জ করে থাকে। তাছাড়া রাতে ও ভরের দিকে যেসব যাত্রীরা আসেন তাদের ইমিগ্রেশনে অনেক সময় লাগে কারণ ইমিগ্রেশন ডেস্কে সেখানকার কর্মকর্তারা থাকেন না।

 

বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে হটলাইন

প্রবাসীদের এসব হয়রানি মোকাবেলার জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে চালু করা হয়েছে হটলাইন যেখানে ২৪ ঘণ্টা যাত্রী সেবা পাওয়া যাবে। গত বছরের জুলাই মাসে এই সেবা চালু করা হয়েছে। এই হটলাইনের মাধ্যমে যেকোনো যাত্রী যেকোনো সময় যেকোনো বিষয়ে বিমানবন্দরের যেকোনো জায়গা থেকে নিজের মতামত বা অভিযোগ জানাতে পারবে। এই অভিযোগের সমাধানও করা হবে গনশুনানির মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব। এই প্রক্রিয়ায় যাত্রীদের ফোন নাম্বারে ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে একটি টিকেট তৈরি করা হবে এবং সর্বোচ্চ ২-৩ দিনের মধ্যে টিকেট নিষ্পত্তি করা হবে।

 

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, “প্রবাসী কর্মীর বাইরে মূলত বিমানবন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা কম। কিন্তু বিমানবন্দরের এই প্রধান ব্যবহারকারীদেরকেই দেওয়া হয় না ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা। কেন তাদেরকে গালিগালাজ করা হবে, কেন তাদেরকে নিজ দেশের বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হতে হবে? তাই শুধুমাত্র অবকাঠামো বৃদ্ধি করলেই হবে না বরং সেবা দেওয়ার মন মানসিকতাও থাকতে হবে বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাঝে।

- Advertisement -

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

  • সাবস্ক্রাইব করুন তথ্যবহুল সত্য খবরের জন্য 

    You are our valued subscriber. We send weekly newsletter. NO SPAM

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের দুঃখের সাথি হবে কে?

আকর্ষণীয় প্রবাস জীবনের পেছনে লুকানো থাকে অনেক ত্যাগ। কেউ...

সর্বাধিক পঠিত