বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

প্রবাসীদের দুঃখের সাথি হবে কে?

আকর্ষণীয় প্রবাস জীবনের পেছনে লুকানো থাকে অনেক ত্যাগ। কেউ হয়তো কর্মজীবনের কিছু সময়ের জন্য প্রবাসী হন, আবার কেউ সারা জীবন কাটাতে। এ জীবন কারো জন্য সুখের, কারো জন্য দুঃখের। দেশ থেকে মানুষ বিদেশ যায় দেশের মানুষগুলোকে ভালো ও আনন্দে রাখার জন্য। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও প্রবাসীদের ভূমিকা কম নয়। প্রবাসের কর্মজীবীরা মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানকে ভালো রাখার জন্যই রাত-দিন পরিশ্রম করে থাকেন। তাই প্রবাসের জীবন একটু ভিন্ন।

 

মানুষ কেন আপন জায়গা ফেলে পরবাসে চলে যান? শুধু মাত্র একটু ভালো থাকার লোভে? নাকি নিজের অভাব অনটনের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনার জন্যে? আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের অভাব, বিদেশের মতো সুযোগ-সুবিধা নেই, বেতন কম ইত্যাদি কারণেই অনেক মানুষ বিদেশে পাড়ি জমানো। এই কারণগুলোও থাকত না, আমরা যদি আমাদের দেশের ভেতরের, দেশের মানুষদের জন্য যদি সঠিক উপায়ে সুষ্ঠু কর্মসংস্থানের বৃদ্ধি করতে পারতাম। এ নিয়ে আসলে একার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়, কাজ করতে হবে সরকারকেও।

 

দেশ থেকে প্রবাসে গিয়ে কি খুব ভালো থাকে কেউ? একজন মানুষ তার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনদের রেখে যখন প্রবাসে গিয়ে এক থাকে, কাজ করে তখন তার মনটা কিন্তু পড়ে থাকে দেশের মাটিতেই। মনে পড়ে তার মা-বাবার কথা, ভাই-বোনের কথা, স্ত্রী-সন্তানের কথা। তখন তার ইচ্ছে হয় সবকিছু ছেড়ে দিয়ে পুনরায় দেশে চলে আসতে। কিন্তু  সময় এবং পরিস্থিতির কারণে তারা আটকে যায়। তাদের ভাবনা জুড়ে থাকে, বিদেশ থেকে দেশে এসে পড়লে  আপন মানুষগুলো অর্থকষ্টে ভুগবে, তিনবেলার খাবার একবেলা খেতে হবে, কোনো কোনো বেলা আবার না খেয়েই থাকতে হবে। এটা কারোর চোখের সামনে ঘটলে সে সহ্য করতে পারবে না।

- Advertisement -

 

তাই একটি মানুষ শত যন্ত্রণার পরও দেশের মাটি, মায়া, মমতা ত্যাগ করে প্রবাসে থাকে প্রিয় মানুষগুলোকে একটু ভালো রাখতে স্বস্তিতে রাখতে, সুন্দর রাখতে। পরবর্তীতে দেশে ফিরে মানুষগুলোর হাসিমুখ দেখলে, দেশের বাইরে থাকা, খানিকটা কষ্ট করা তাদের কাছে সার্থক মনে হয়।

 

১. প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ

একটি মানুষ কখনো সুখী হয়ে প্রবাস জীবন বেছে নেয় না। বরং নিজের পরিবারকে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী বানানোর জন্যই পাড়ি দেয় বিদেশ। শুধু তাদের পরিবার নয় বরং দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশেরও অনেক উপকার করে তারা। দেশের ও পরিবারের মানুষের আনন্দের মাঝেই প্রবাসীরা তাদের এই কষ্টের সময়টাতেও সুখ খুঁজে নেয়।

 

২. দেশাত্মবোধ ও নাড়ির টান

প্রবাসে বসবাস করা মানুষেরা নাড়ির টানে কারণেই দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা নিজের মধ্যে ধারণ করে থাকে। তাকে অনুপ্রেরণা দেয় নিজ দেশের জন্য ভালো কিছু করার। নিজের পরিবার ফেলে এতো দূরে একলা থেকেও যদি নিজের পরিবার বা দেশের কোনো উপকারে নাই আসতে পারে, তাহলে সেই মানুষটির প্রবাস জীবন ব্যর্থ। প্রবাসীদের এই কঠোর পরিশ্রমের ফলেই আমাদের দেশ আজ আর্থিকভাবে সচ্ছল একটি দেশ।

 

৩. দেশে প্রবাসীদের গুরুত্ব

- YouTube -

আমাদের দেশে প্রবাসীদের কোনো গুরুত্ব নেই, আছে অবহেলা। একজন প্রবাসী দেশের জন্য কাজ করতে গিয়েও যতটুকু অবহেলা সহ্য করে, আত্মসম্মানের বোধ ত্যাগ করে কাজ করে সেটা আসলে আমাদের এই দেশ কখনোই বোঝার চেষ্টা করেনি। আমাদের দেশে প্রবাসীদের মূল্য শূন্য। আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রবাসীরা যদি দেশ ত্যাগ না করলে দেশ বৃন্দাবনে চলে যেত। ব্যাপারটা অনেকটা হাস্যকর মনে হলেও সত্যি।

 

৪. দেশের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পর্ক

দেশের সঙ্গে প্রবাসীদের সম্পর্ক গভীর হয়েও গভীর হতে পারে না, তার কারণ প্রবাসীদের কখনোই দেশ সম্মানের চোখে দেখে না বা তাদের মূল্যবোধের জায়গাটা দেয় না। বেশ বড় বড় মানুষ বলে, প্রবাসীরা দেশ ছেড়েছে দেশের প্রতি তাদের মায়া, দেশের প্রতি তাদের টান নেই বলে, কিন্তু তারা এটুকু বোঝে না বা এটুকু বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই যে, আমাদের দেশে কর্মসংস্থানেরর অভাবেই তারা দেশ ছেড়েছে, আমাদের দেশের মানুষজনদের ভালো রাখার জন্য তারা দেশ ছেড়েছে। দেশ প্রবাসীদের ভুলে গেলেও প্রবাসীরা কখনো দেশের কথা ভোলে না, তারা ভুলতে পারে না, কেননা তারা সেদেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে। তাই প্রবাসীদের সঙ্গে দেশে সম্পর্কটা ততটা বন্ধুত্বপূর্ণ না হলেও দেশের প্রতি প্রবাসীদের একটা টান আছেই শুরু থেকে।

 

৫. দেশ-বিদেশের পার্থক্য

দেশে যে মানুষটা রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে সমাজ তাকে অবহেলার চোখে, অনীহার চোখে দেখে, কেননা সে মানুষটা রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করছে। কিন্তু বিদেশে সেই মানুষটা গিয়ে এই একই কাজ করছে। কিন্তু এতে লজ্জা কোথায়। সে তো চুরি করছে না, সে কর্ম করছে, কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করছে। এতে লজ্জা থাকবে কেন। এটাই তফাৎ দেশ আর বিদেশের মধ্যে। আমাদের দেশটা যে কারণে পেছনে পড়ে আছে তা হলো দেশের মানুষগুলোর মন ও মানসিকতা এখনো খুব নিচু হয়ে আছে। যে দেশ নীচু মনমানসিকতার মানুষ লালন করে সে দেশ কী করে এগিয়ে যাবে বা তার যোগ্য অনুযায়ী কর্ম দেবে, তা কখনোই সম্ভব নয়।

 

৬. প্রবাসীদের ভাবনা

যারা প্রবাসে চলে গেছেন দেশ ছেড়ে তাদের আপন মানুষজন ছেড়ে তাদের ভাবনায় শুধু একটা ভাবনাই থাকে, আমার মা ভালো আছে তো! আমার বাবা ভালো আছে তো! আমার সন্তানরা ভালো আছে তো! এই ভাবনাগুলো থেকেই তাদের যত কষ্টই হোক না কেন তারা উপার্জন করে যায়। তখন তারা বুকে পাথর চাপা দিয়ে কাজে নেমে যায়, যে নেমে যাওয়ার মধ্যে আর কোনো দ্বিধা থাকে না, দ্বন্দ্ব থাকে না। তারা চায় পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। যাতে কোনো ক্লান্তি থাকবে না, তৃষ্ণা থাকবে না।

 

প্রবাসীরা হলো একটি দেশের মোহর। যে মোহরের কারণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে দেশ এবং দেশের মানুষ। তাই প্রবাসীদের ভালো থাকা বা ভালো রাখা আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে কিন্তু আমরা তার কতটুকু পালন করতে পেরেছি বা পারি তা হয়তো একটু লক্ষ্য করলেই বলতে পারি। দেশ থেকে প্রবাসীরা যখন বিদেশ যায় তখন তাদের প্রতি আমাদের বোধের জায়গাটা আরো খোলাসা হওয়া উচিত, যে খোলাসায় থাকবে স্পষ্টতা, গভীরতা, মমতা ও সম্মানবোধ।

- Advertisement -

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

  • সাবস্ক্রাইব করুন তথ্যবহুল সত্য খবরের জন্য 

    You are our valued subscriber. We send weekly newsletter. NO SPAM

আরও পড়ুন

প্রবাসীদের জন্য এয়ারপোর্টে কেন আরো সুবিধা দেয়া হয় না?

১৮ ডিসেম্বর সারা বাংলাদেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।...

সর্বাধিক পঠিত