শুক্রবার, মার্চ ২৮, ২০২৫
22.8 C
Dhaka

প্রবাসীদের নিয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারনা

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

কোটি বাংলাদেশী প্রবাসী নিজের দেশ,আত্মিয়-স্বজন পরিবার পরিজন ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। পরিবারের স্বপ্ন পুরন আর সচ্ছলতার দাঁয় কাঁধে চেপে মাতৃভূমি থেকে হাজারো মাইল দূরে থাকা প্রবাসীরা আসলে কেমন থাকে পরবাসে?

 

আমাদের দেশের বিভিন্ন পেশার লোক প্রবাস জীবন যাপন করছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে । তাদের নিয়ে দেশে থাকা স্বজনদের উদ্বিগ্নতা ও কৌতুহল যেমন থাকে, তেমনি ভুল ধারনাও থাকে অনেকের। খুব কাছের মানুষেরাও হয়তো অনেক সময়ই ভাবে, অনেক শান্তিতে- সুখেই আছে তারা! কারণ প্রবাসে থাকা বেশিরভাগ মানুষই আড়াল করেন দেশে থাকা প্রিয়জনদের কাছে তাদের কষ্টের কথা।  

 

পরিবারের মানুষের সঙ্গে তারা এই বিষয়গুলো খুলে বলতে পারেন না। কারণ একজন প্রবাসীই জানে, পরিবারের কত বড় দায়িত্ব নিয়ে দেশের মায়া ত্যাগ করে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই নিজের দুঃখ-কষ্ট চেপে দায়িত্ব নামক মহান শব্দটি তাদেরকে নিরব করে রাখে।

     

প্রত্যেকটা জাতির কাছে নিজস্ব সংস্কৃতি খুব প্রিয়। প্রবাসে গিয়ে নিজের সংস্কৃতিকে খুঁজে পাওয়া দুর্লভ বিষয়। আমরা সকলেই জানি একটা মানুষের মন সুস্থ রাখতে হলে সংস্কৃতির অবদান অপরিসীম। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। প্রবাসীরাও চায় এইসব মুহূর্তগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকতে, উল্লাসে মেতে উঠতে দেশের মাটিতে । পহেলা বৈশাখের জন্য যখন দেশের মানুষ উল্লাসে মেতে ওঠে তখন তারা দায়িত্বের দাবানলে চাপা পড়ে শরীরের ঘাম ঝরাতে থাকে। 

 

প্রবাসী বলতে সুখি মানুষকে ইঙ্গিত করা হয় যাদের কোনো অভাব নেই, পকেট ভর্তি টাকা। সবকিছু যেন তাদের হাতের নাগালে, ইচ্ছে হলেই উপভোগ করতে পারে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

 

প্রবাসীর বুকে এই কষ্ট সব চেয়ে বেশী জায়গা দখল করে বসে আছে। অথচ তাদের বুকের এই যন্ত্রনাকে দেশের মানুষ বড় করে দেখে না; এমনকি কেউ জানতেও চায় না। বাস্তব সব সময় একটু তেতো হয়ে থাকে, তবুও তাদের এই ভাগ্য অন্বেষণের দৌড়-ঝাঁপ চলছেই।

 

দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রবাসীদের স্বার্থপর হিসাবেই জানে। তারা নাকি নিজেদেরকে নিয়েই ব্যাস্ত। তারা যদি সত্যি সত্যি স্বার্থপরই হয়, তাহলে কেন বার বার দেশের মাটিতে ফিরে যায়? কেন প্রবাসীদের চোখের জল শুকায় না? কেন সবকিছু ভুলে প্রবাসে পড়ে থাকে?

 

লক্ষ লক্ষ প্রবাসীরা যদি স্বার্থ্পর হতো তাহলে এই বাংলার অন্য এক রূপ ধারন করতো। বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াবার মতো সুযোগ হতো না। এটা বলতেই হয়, নিঃসন্দেহে তাদের সাহায্য সহযোগীতার প্রমাণ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যমান।   কষ্টার্জিত প্রবাসীদের এক একটি পয়সা দেশের মানুষের সুখের পিছনে ব্যয় হচ্ছে, তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারবে? বেশীর ভাগ মানুষ এই বাস্তব সত্য বিশ্বাস করে না। না জেনে না বুঝে তাদেরকে দোষ দেয়া হয়, তাদেরকে ভূ্ল বুঝে অপবাদ দেয়া হয়, আঘাত করা হয়।   

 

অনেক কষ্টদায়ক বিষয় হচ্ছে, প্রবাসীদের সম্পর্কে যা বলা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবের সাথে মিল রেখে বলা হয় না। যাদের ভালো রাখার জন্য শরীরের রক্ত ঘাম হয়ে ঝরে পড়ে ওরা যখন বলে, প্রবাসীরা স্বার্থপর; এই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না। এই কষ্ট প্রবাসীরা না পারে সইতে, না পারে প্রকাশ করতে।

 

প্রবাসীরা শুধু একটু ভালোবাসা পেলে নিজের সবকিছু বিলিয়ে দিতে তারা প্রস্তুত। সকল প্রবাসী যদি স্বার্থপর হত তাহলে এই সোনার বাংলায় তার রূপ পরিবর্তন করতে পারত না। প্রবাসীদের এই রেমিটেন্সের টাকার কারণে সোনার বাংলা আজকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

 

একটা জ্বলন্ত মোমবাতির মত নিজে জ্বলে পুরা দেশ জাতি এবং পরিবারকে আলোকিত করে রাখার চেষ্টা করে প্রবাসীরা। তারা খোঁজখবর নিতে না পারলেও এটা ভাবা ঠিক হবে না যে, আপনাদেরকে ভুলে গেছে। হয়তো সময়ের অভাবে খোঁজ নিতে পারছেন না। তাই প্রবাসীদের ভালোবাসুন, যেন সকল প্রবাসীরা তার মায়ের কোলে সুস্থভাবে ফিরে আসতে পারে। কামনা করুন, ভালো থাকুক সকল প্রবাসী।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও