জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সেনা কর্মকর্তা এবং অনেক সামরিক ও বেসামরিক ষড়যন্ত্রকারীর দ্বারা এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সে দিনের মতো আজও সারা বিশ্বে এই হত্যাকাণ্ড ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছে। এক কথায় বাঙালি জাতির গায়ে এ ঘটনার মধ্যদিয়ে কালিমা লেপন করা হয়। এতে দেশের রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে সরাসরি অভিঘাত তৈরি হয়। বিপর্যয় নেমে আসে সর্বত্র। যা কখনো পূরণ করা সম্ভব হবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাঙালির সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়ন হয়ে পড়ে অসম্ভব। সব কিছুই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। স্বপ্ন পরিণত হলো দুঃস্বপ্নে। বাংলাদেশ যুক্ত হয় পিছিয়ে পড়া রাষ্ট্রের মিছিলে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এই নবীন রাষ্ট্রের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যুদ্ধকালীন নয় মাস পাকিস্তানের কারাগারে চরম দুর্বিসহ জীবন কাটিয়ে লন্ডন-ভারত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশের মানুষ তাঁকে মহামানবের আসনে স্থান দেয়। তিনি নিজেও এতে আবেগ আপ্লুত ও অভিভূত না হয়ে পারেন নি। এরপর শুরু হল বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ। ক্ষমতা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শক্ত হাতে দেশ শাসন করার ইচ্ছা পোষণ করেন। সে জন্য তাঁকে অনেক ক্ষেত্রে নিজ সিদ্ধান্তে কখনো কখনো অটল থাকতে হয়েছে। কিন্তু সমালোচকেরা মনে করেন, এমন কি এখনো অনেকে মনে করেন প্রথম থেকেই তিনি জাতির পিতা বা দেশের প্রেসিডেন্ট না হয়ে তিনি যেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট- এ পরিণত হলেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের বিভিন্ন প্ররোচনার উর্ধ্বে নিজেকে স্থির রাখতে পারেন নি। কেননা তখন তাঁর কাজের শীতলতা তা অনেকাংশে প্রমাণ করে। তাঁকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন অনেকে। তিনি নিজেও সরল বিশ্বাসে অনেকের কথা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ পছন্দ করেছিলেন। অথচ দেশ পরিচালনায় তাঁর অতীব প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে নেতা-নেত্রীরা প্রেসিডেন্টের পদ খালি রেখেছিলেন। সকলেই মনে করেছিলেন তিনি প্রেসিডেন্ট হলেই তাতে দেশের মঙ্গল বেশি হবে। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের পদে আসীন হওয়ার পিছনে অবশ্যই যুক্তি ছিল। কিন্তু জনগণ এ বিষয়টিকে তাঁর প্রতি একটি নেতিবাচক ধারণা হিসেবে দেখেছিল। আসলে সত্য বিষয় ছিল এটি যে, তিনি প্রেসিডেন্ট না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের অন্যতম কারণ হলো ৬ দফার আলোকে দেশে একটি সুন্দর সংসদীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, যা পাকিস্তানে অনুপস্থিত ছিল। সুতরাং এই অভিযোগ সত্য ছিল না যে, তিনি তাজউদ্দীন আহমেদকে ক্ষমতাহীন রাখতে চেয়েছিলেন। তাঁর এই রূপ সিদ্ধান্তের কারণেই প্রথম থেকেই সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমেদের সঙ্গে একটি অদৃশ্য টানাপোড়েন শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গিকে বিশালতা দিয়ে বিচার করতে পারলে ভালো হত। ক্ষমতার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু কেমন ছিলেন। উত্তরটি সহজ। তিনি সম্ভবত একমুখী ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর বিরোধীরা মনে করেন, নিজের ক্ষমতা আরো সুসংহত করার জন্য অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদটি দেয়া হল। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, প্রেসিডেন্ট চৌধুরী ছিলেন ভদ্র, শান্ত ও অনুগত। অপর দিকে তিনি ছিলেন একজন সংগঠক। সুতরাং প্রেসিডেন্ট চৌধুরীর যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রকার সংশয় প্রকাশ অবান্তর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে (১৯৭২-১৯৭৫) দেশে নানা সংকট সৃষ্টি করা হয়েছিল তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য। এই সংকটের দু’টো চরিত্র ছিল। প্রথমত; নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশের মানুষের মনে বঙ্গবন্ধু বিরোধী চেতনা অনুপ্রবেশ করানো হয়েছিল। অবশ্য এর বিপরীতে প্রশাসনের পক্ষ হতে আওয়ামী লীগ কোন প্রকার প্রচার প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছিল বলে মনে হয় না। দ্বিতীয়ত; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরল বিশ্বাসে প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে এমন সব ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন যারা সঠিকভাবে কর্তব্য পালন না করে শুধুমাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিলেন। তিনি এসব ব্যক্তিবর্গকে বিশ্বাস করে প্রশাসনিকভাবে যে ভুল করেছিলেন তা এখন সবাই অকপটে স্বীকার করছেন। আসলে বঙ্গবন্ধু অসৎ মানুষকে বিশ্বাস করে নিশ্চিতভাবে ঠকেছিলেন। আর এই ভুল শোধরাতে হলো তাঁকে তাঁর জীবন দিয়ে। তিনি যখন ক্ষমতায় বসেন তখন দেশে কোনো কিছুই স্বাভাবিক ছিল না। পাকিস্তানিরা সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শ্মশান বানিয়ে রেখে গিয়েছিল। মানুষ প্রত্যাশা করেছিল বঙ্গবন্ধু সেসব সমস্যা দ্রুতই সমাধান করতে পারবেন। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশার চেয়ে কাজ হচ্ছিল ধীরগতিতে। ফলে মানুষের মনে কিছু সন্দেহ দানা বাঁধে। সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ সময় দরকার ছিল। অথচ মানুষ সরকারকে বেশি সময় দিতে চাইছিল না। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের গতি, কালোবাজারী, চোরাচালানী, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, চুরি ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছিল অতি মাত্রায়। মানুষ আইনের প্রতি এবং পরিণামে সরকারের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলেছিল। এটা সরকারের অন্যতম ব্যর্থতা হিসেবে বিরোধী শক্তি মানুষকে প্ররোচিত করত। বিরোধী খবরের কাগজও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে সমাজে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আত্মপ্রকাশ করে। তারা ভারত বিরোধী নানা প্রচারণা চালায়। এই ভারত বিরোধিতা শেষে বঙ্গবন্ধু বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়। স্বাধীনতার লড়াইয়ের মাধ্যমে আগত নবীন জীবন দর্শন, যা স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মুক্তি আনল তা গণমানুষকে প্রভাবিত করতে পারেনি। তাই মতলববাজ সাম্প্রদায়িক নেতারা পুরাতন ঠিকানা ফিরে পাবার জন্য বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানান অনৈতিক অভিযোগ দাঁড় করাল। সকলে না হলেও কিছু মানুষ তা বিশ্বাস করলো এবং অন্যদেরকে তার দ্বারা প্রভাবিত করল। পরিণামে সরকারের জনপ্রিয়তা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পেতে থাকল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরাও কম দায়ী ছিল না। দেশ স্বাধীন হবার পর তারা যেন হাতে আলাদিনের প্রদীপ পেয়ে যান। সকলে দেশ সেবার আড়ালে আখের গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা দলগতভাবে লাইসেন্স, পারমিট ও এজেন্সি অন্যায়ভাবে হস্তগত করে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যারা এসব কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা বঞ্চিত হয়। রাষ্ট্রের প্রতি তাদের ক্ষোভ বাড়ে। এরাই প্রচার করতে থাকে যে, সরকার দেশের সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। এতে মানুষের মনে আওয়ামী লীগ বিরোধী মনোভাব দানা বাঁধতে থাকে। একই সঙ্গে একশ্রেণি আমলার নীতিভ্রষ্ট কর্মকাণ্ড বঙ্গবন্ধু সরকারের ভরাডুবির জন্য দায়ী ছিল। কেননা তাদের কর্মকাণ্ড জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমালোচকের অভাব ছিল না। শুরু থেকেই তারা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ভারতের স্বার্থ রক্ষাকারী নেতা ও দল বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে। এমনকি ভারতের জন্য নিজের দেশের স্বার্থও জলাঞ্জলি দিচ্ছেন এমন কথাও প্রচার করে। অথচ, এসবই ছিল সত্য থেকে অনেক দূরে। একই সঙ্গে নিন্দুকেরা প্রচার করে যে, বাংলাদেশ ক্রমে ভারতের উপনিবেশ হচ্ছে। ভারত তার যুদ্ধকালীন সেনাবাহিনী সরাবে না। সাধারণ মানুষের অনেকে তাতে করে কিছুটা ভীত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর সমালোচনায় শরীক হয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সরকার পরিচালনার শুরুর দিকে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ব্যবহৃত বহু অস্ত্র দেশের মানুষের হাতে রয়ে যায়। এ অস্ত্র এখন সমাজবিরোধী কাজে ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি তথাকথিত বামপন্থী দলও তখন এসব অপকর্মের মধ্যে বিপ্লবের আবহ খুঁজে পায়। তারাও অনেক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের জন্য আর্থিক প্রয়োজনে এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাংক বীমা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়েন মর্মে এখন তা প্রমাণিত। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে। উঠে। আর তার দায় বর্তায় বঙ্গবন্ধু সরকারের উপর। এ সুযোগে দেশি বিদেশি সংস্থা ও শক্তিসমূহ বাংলাদেশে আর্থিক ও কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। বঙ্গবন্ধু নিজেও এক সময় অভিযোগের সুরে বলেছিলেন যে, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের চাল কিনে নদী কিংবা সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে। তাদের এরূপ কাজের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বিপদে ফেলা। একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। তারা তাতে সফল হয়েছিল। একই সঙ্গে তারা সমাজে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়। এতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল ভাবমূর্তির সংকটে পড়েন।
বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক ছিল না। তথাপিও মানুষের মুখে মুখে তা উচ্চারিত হতো। মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে এমনটি করেছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা শফিউল আলম প্রধান আওয়ামী লীগের একুশ জন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন । দেশের মানুষ নিজ দলের মানুষের আনা এসব অভিযোগ সত্য বলে মেনে নেয়। অথচ এতে সবটুকু সত্য ছিল না। অন্যদিকে ১৯৭২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পল্টনে আ.স.ম. আবদুর রব বঙ্গবন্ধুর শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। এ পথে অন্যরাও উৎসাহিত হয়। শুরু হয় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলেন ১৫ আগস্ট ভোরে। সকাল সাড়ে ছ’টার সময় মেজর ডালিম বেতারে ঘোষণা দিলো যে, খোন্দকার মোশতাক আহমদের নেতৃত্বে দেশপ্রেমিক সৈন্যবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। এ সংবাদে বাংলাদেশের মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছিল। সকাল ৭.০০টায় মোশতাক আহমদ এক বেতার ভাষণে জানান যে, ‘ইতিহাসের প্রয়োজনে’ তাকে দেশের প্রেসিডেন্টের আসনে বসতে হয়েছে। লোকে বিস্মিত হল । তিনি ছিলেন ‘বাকশাল’-এর অন্যতম সদস্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রীসভার বাণিজ্য মন্ত্রী। সাধারণ মানুষ বুঝে নিল বাকশালেরই একটি অংশ অন্য অংশকে ধ্বংস করে ক্ষমতা হস্তগত করেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা সুনিপুণভাবে যে তাদের পরিকল্পনা প্রণয়ণ করেছিল এতে তা বোঝা যাচ্ছে। এখানে একটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। খুনী সৈন্যরা ১৫ আগস্ট তিনটি বাড়িতে হানা দিয়ে মানুষ খুন করেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা ছিলেন পরস্পরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। ইতোপূর্বে গুজব রটানো হয়েছিল যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাংলাদেশে তিনি ‘শেখশাহী’ প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ ধরণের গুজব ছড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এর উদাহরণ স্বরূপ তারা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ মনির নাম প্রচার করত। তিনি ছিলেন প্রভাবশালী যুব নেতা। তার সব পরামর্শ বঙ্গবন্ধু মেনে নিতেন বলে ষড়যন্ত্রকারীরা অতি মাত্রায় প্রচার করত। তিনি ছিলেন জাতীয় দল বাকশালের অন্যতম সম্পাদক। অন্য দু’জন সম্পাদক ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃতদেহ ৩২ নম্বর ধানমণ্ডি ভবনে পড়ে থাকা অবস্থায় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা মোশতাকের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। ক্ষমতায় এসে মোশতাক ‘বাকশালের’ ইতি টানেন। তিনি আওয়ামী লীগকে পুনঃস্থাপন করেন। থানায় থানায় নির্দেশ পাঠানো হলো আওয়ামী লীগ নেতা ও কর্মীদের উপর যেন কোনো আঘাত না আসে। তাদের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে হবে। এতে সকলেই ভেবে নিলেন বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও ক্ষমতা এখনো আওয়ামী লীগের হাতেই রয়েছে। সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও ক্ষমতা তারা ধরে বসে থাকেনি। মোশতাকের এইরূপ নীতির কারণে জনমনে যে ক্ষোভ জমে ছিল তা বিপ্লবে পরিণত হতে পারে নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাংবিধানিক রাজনীতির দীর্ঘ যে ধারা তার প্রতিফলন লক্ষ করা গেল। অন্য অর্থে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জনমনে যাতে কোনো রকম ক্ষোভ জমে গণবিপ্লব ঘটাতে না পারে খন্দকার মোশতাকের নির্দেশনামা তা প্রশমনে সহায়তা করে। তার উদ্দেশ্য সফল হল। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নিকট আপাত মন্দের ভালো আর বিদ্রোহীদের নিকট সংকট উত্তরণের একমাত্র অবলম্বন। দুই পক্ষকে সামলে মোশতাক বাংলাদেশে অবৈধ শাসন কায়েম করার সুযোগ পেলেন। আসলে তিনি চতুরতার সাথে সুযোগের সদব্যবহার করলেন।
বঙ্গবন্ধু বিরোধীরা প্রচার করতে থাকে— ইতোমধ্যে গণতন্ত্র নস্যাৎ করে একদলীয় শাসন ‘বাকশাল’ গঠন করা হয়েছে। জেলা গভর্নর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই ‘বাকশালকে’ নিশ্চিহ্ন করতে হবে। প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে হবে। দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এই মতে তারা সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে ইন্ধন পান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হলে জিয়াউর রহমান তাদের সমর্থন করবেন এটা ছিল হত্যাকারীদের বিশ্বাস।
দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রও সেদিন বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। তারা নানাভাবে দিনের পর দিন কুৎসা প্রচার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্র হননের প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।
গবেষকগণ মনে করেন, বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীর মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারেন নি। আর স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল মত ও পথের মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত না করা ছিল তার প্রশাসনের একটি দুর্বল দিক। কেননা রণাঙ্গনে যারা শক্তি সামর্থ প্রদর্শন করেছেন তারা যখন দেখলেন তারা রাষ্ট্র কর্তৃক যথাযথ সম্মান পাচ্ছেন না—তখন তারা এ প্রশাসনকে নিজের মনে করতে পারে নি। আসলে এটা বুঝার সুযোগ ও সময় বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনের কতটুকু ছিল তা এখনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন হিসেবেই রয়েছে। অথবা তারা জেনেশুনে না বোঝার ভান করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ও শেখ পরিবারের নিকট আত্মীয়দের হত্যার অন্যতম কারণ ছিল—এ পরিবারের চলমান জনপ্রিয়তা এবং ভবিষ্যত নেতৃত্বের শূন্যতা সৃষ্টি করা। এ উদ্দেশ্যেই তারা বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ মনি এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে হত্যা করে। আর এর অন্য কারণ হতে পারে পরে যাতে কেউ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে নেতৃত্ব দিতে না পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার ষড়যন্ত্র হয় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই। এই ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয় দেশি বিদেশি শক্তিবর্গ । তারাই বঙ্গবন্ধু বিরোধী প্রচারণা এবং ষড়যন্ত্র জালকে বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে দিয়েছে। উগ্র সাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগিয়ে তুলে বঙ্গবন্ধুকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। এ ষড়যন্ত্রের আপাত সমাপ্তি ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার মধ্য দিয়ে।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্ত হয়ে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পূর্ববঙ্গের মানুষের ভাগ্য নিয়ে চিন্তা- ভাবনা শুরু করেছিলেন। প্রথম থেকেই বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য তিনি যে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তা ছিল প্রকৃতই একজন অভিভাবক, পদপ্রদর্শক ও দার্শনিকের। সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর ছিল মায়ামমতা। তাদের তিনি আন্তরিকভাবে কাছে টেনে নিতেন। সরকারপ্রধান থাকাকালীনও তিনি একই কাজ করেছেন। তিনি মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন একজন সার্থক নেতা। বঙ্গবন্ধু সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল বাঙালি জাতির বৃহত্তম স্বার্থে পরিচালিত। সমকালীন সভা-সমিতি, সমাবেশ, পথসভা, বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারে তিনি যেসব কথা বলতেন, তাতে তিনি শোষিত, নির্যাতিত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত ও অত্যাচারিত মানুষের কথাই বলতেন। তিনি বাঙালির কথাই বলতেন সুযোগ পেলে। আর এজন্য তাঁকে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। জেল, জুলুম, কারাভোগ ও নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। তিনি ছিলেন বাঙালির জাতি গড়ার কারিগর। পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিনি সুদীর্ঘ ২৪ বছর বাংলার স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। তাঁর সোনার বাংলা ও স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা ছিল যথার্থ।
আজ থেকে ৪৪ বছর আগে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্বর ও নির্মম ঘাতকের বুলেটে নিহত (শহিদ) হন । সঙ্গে নিহত হন তাঁর পত্নী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তাঁর তিন পুত্র, দুই পুত্রবধূসহ অনেকে। ঘাতকরা ভেবেছিল তারা মুজিবকে হত্যা করে চিরদিনের জন্য ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পেরেছেন। কিন্তু ব্যাপারটা সে রকম নয়। তারা বুঝতে পারেনি মুজিব কোনো একজন মানুষ নন। একটি আদর্শের নাম মুজিব। তাই মুজিব মৃত্যুহীন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শুধুমাত্র জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তিনি ছিলেন জাতীর মুক্তির মহান বীর। মৃত্যুর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। তারও আগে প্রধানমন্ত্রী। এসব পদ-পদবির প্রতি তাঁর কোনো লোভ ছিল না। তাই এসব তাঁর মুখ্য পরিচয় নয়। তিনি ছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একটি স্বাধীন জাতির স্রষ্টা। তাঁর গঠিত স্বাধীন রাষ্ট্র যতদিন টিকে থাকবে ততদিন তাঁর মৃত্যু নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের সিংহভাগ সময় সংগ্রাম করেছেন প্রতিক্রিয়াশীল, অগণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসানের জন্য। একজন দেশপ্রেমিক, জাতীয়তাবাদী ও মুক্তিকামী নেতার রাজনৈতিক শত্রু- মিত্র থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর উপনিবেশবাদ বিরোধী জাতীয় নেতৃবৃন্দের আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক পর্যায়েও বিরোধী পক্ষ থাকে। এখন ভেবে দেখতে হবে ১৫ আগস্ট তারা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের পিছনে মদদদাতা করা ছিলেন। কী লক্ষ্য ছিল এর পশ্চাতে। প্রকৃত সত্য ঘটনা হলো-ঘাতকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না। আসলে একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িকা, ক্রিয়াশীল, পাকিস্তানবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক আদর্শকে সহ্য করতে না পেরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল। আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন এই আদর্শের দার্শনিক, প্রবক্তা ও স্রষ্টা। খুনিরা জানত এবং বুঝতে পেরেছিল তাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন পর্বত সমান বাধা। তারা বুঝতে পেরেছিল তাকে জীবিত রেখে এই আদর্শকে ধ্বংস করা যাবে না। তাই বলা যায় ব্যক্তিগত শত্রুতার বিষয়টি এখানে মুখ্য নয়।
১৯৬৬ সালে ‘ছয় দফা কর্মসূচি প্রদানের মাধ্যমে তিনি এদেশের মানুষের নয়নের মণিতে পরিণত হন। মানুষ বুঝতে পেরেছিল এই মানুষটির মাধ্যমে তাদের মুক্তি অর্জন সম্ভব হবে । এজন্য মানুষ পাকিস্তানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আগরতলা মামলায় বন্দী মুজিবকে মুক্ত করে নিয়ে আসে। তাঁর অস্তিত্ব বাংলার সর্বত্র। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে ও ঐতিহ্যে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ প্রত্যেক বাঙালিকে একটি নামে একত্রিত করেছে, যার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বন্ধী করে পাকিস্তানের জেলে রাখা হয়। পাকিস্তানের কারাগারে থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সমগ্র বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু। মুজিবনগর সরকারসহ অন্যান্য স্বাধীনতাকামী মানুষ তাঁর নামেই যুদ্ধ করেছে, মুক্তি ছিনিয়ে এনেছে, শেষে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে এনেছে।
পাকিস্তানি সামরিক ও বেসামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে সংগ্রাম আন্দোলন করে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে বলে রাখা ভালো যে, রাষ্ট্র পরিচালনার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। তাই নতুন রাষ্ট্রের নানা প্রকার কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন ছিল অভিজ্ঞতার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ গঠনের সময় ও সুযোগ পাননি। আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে তা হলো মানুষ মাত্রই ভুল করেন। বঙ্গবন্ধু মানুষ ছিলেন। তাই তার কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একটি গণতান্ত্রিক দেশে একজন রাষ্ট্রনায়কের সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি ও আদর্শ দেশের সকল মানুষের চাহিদা পূরণ করবে এটা কখনো হতে পারে না। একটি রাষ্ট্রে প্রশাসনের প্রতিপক্ষ থাকাটাই স্বাভাবিক। সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশ একমাত্র দৃষ্টান্ত যেখানে রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষের হাতে রাষ্ট্রশক্তির বিপর্যয় হলো এবং জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম একটি গুণ ছিল তিনি মানুষকে খুব আপন করে নিতে পারতেন। অন্যদিকে তিনি বিরোধী মতের যেকোনো মানুষকে ক্ষমা প্রদর্শন করতেন। যেমন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ দেশের স্বাধীনতার বিরোধী বহু মানুষকে বিচারের আওতায় এনে এদের গর্হিত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা করে দিয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বিরোধী ব্যক্তিবর্গ ও শক্তি তাঁকে কোনো প্রকার ছাড় দিতে রাজি ছিল না। মৃত্যুকালীন এবং মৃত্যুর পরও তাঁর অচেতন দেহের প্রতি যে অবমাননা হয়েছে তা ইতিহাসের কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতকরা মনে করেছিল তাঁর মৃত্যুর ফলে তিনি চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যাবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তাদের ভাবনা যথার্থ ছিল না। এক্ষেত্রে তারা ছিল অজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু যে একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মহৎ মানুষ, রাখাল রাজা, জাতীয় বীর তার মতো এমন মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী। এমন ব্যক্তিত্ব যে কোনো জাতির যুগ সন্ধিক্ষণে আবির্ভাব ঘটে। তার দ্বারা বাঙালির যুগান্তর এসেছিল। মৃত্যু তাঁকে দেশের নিকট থেকে দূরে সরিয়ে দিলেও তাঁর আদর্শ, রাজনীতি, সংস্কৃতি, জাতীয়তাবাদী এবং বাঙালি সাম্যবাদী অর্থনৈতিক আদর্শের কারণে তিনি বাঙালি হৃদয়ে অম্লান থাকবেন চিরকাল। আর তিনি ১৯৭২ সালে গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক সমতাভিত্তিক যে সংবিধান আমাদের জন্য দিয়েছিলেন তার মধ্যেই বঙ্গবন্ধু চর্চা হবে এদেশ যতদিন টিকে থাকবে ততদিন।
শেষে বলা যেতে পারে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড একদিকে যেমন ছিল রাজনৈতিক মতাদর্শিক অন্যদিকে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর হিংস্র প্রতিক্রিয়া। তা না হলে শিশু রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হতো না। স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি এবং প্রতি আঘাতের মধ্য দিয়ে ‘৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি আরকাইভ অনলাইন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।