বাংলাদেশের নির্বাচন আসলেই তৎপর হয়ে উঠে বিশ্বের সব বড় মোড়ল খ্যাত দেশগুলো। এমনকি নির্বাচনকে ঘিরে সরকারী দল,বিরোধী দল সব দলেরই যোগাযোগ-কূটনীতিক তৎপরতা বেড়ে যায়।ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে,“যার সমস্যা তার খোজ নাই,পাড়া পড়শির ঘুম নাই”।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় আমাদের দেশে সকল কিছু গনতান্ত্রিক পন্থায় চালিত হয়।নির্বাচনের সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশে সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে এটি নিয়ে রয়েছে নানা তর্ক-বিতর্ক। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা, এমনকি হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধান ভূমিকায় রয়েছে। কয়েকটি ইউরোপিয়ান দেশও তৎপরতা দেখিয়ে আসছে।
তবে দেখা যাচ্ছে এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিদেশি আগ্রহ অনেক তীব্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের আনাগোনার মিছিল বেশ কয়েক মাস ধরে চলমান রয়েছে। যারা এ দেশকে শাসন করতে চান তাদের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি চোখে পড়ার মতো বলে মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও এনডিআই ও আইআরআই এ’র দুটি পৃথক প্রাক নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল ঢাকা সফর করেছে। তারা বৈঠক করেছে সরকারের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বৈশ্বিক তৎপরতার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে গত মে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার মধ্য দিয়ে। যদিও দুই দেশের বহুমাত্রিক সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার নানা কার্যক্রমও পাশাপাশি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশ সফর করছে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। ফলে যারা বাংলাদেশে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ বা বানচাল অথবা বিধিবহির্ভূত পদক্ষেপের মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল নিজের করে নিতে পদক্ষেপ নেবেন তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। এ ছাড়া অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে যেগুলো কেমন হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। যেকোনো দেশের সরকার সে দেশে কাকে যেতে দেবে এবং কাকে যেতে দেবে না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু দেশটির সঙ্গে বিবাদমান নয় এবং ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, এমন সব দেশের সঙ্গে সমনীতিভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।
বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া উচিত বলে অনেক দেশ মনে করলেও ভারত এ বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি। সাধারণত, রাশিয়া এবং চীন অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কথা বলে না, তবে এবার তারা বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলেছে। তারা বলেছে যে তারা নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের সাথে একমত নয়।
যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রিটেন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়নকে খুশি না করতে পারলে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না এমন একটি চিন্তা রাজনীতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যায়। এর পেছনে অবশ্য অর্থনৈতিক কারণও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ৭৫-এর পর বাংলাদেশের অর্থনীতি পরনির্ভরতার পথে যাত্রা শুরু করে।শর্তের জালে বন্দি হয় আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন ভাবনা। সাহায্য বা ঋণের চেয়ে শর্তের ফর্দ লম্বা হতে থাকে। কিন্তু এখান থেকেই বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কেউ নাক গলাতে পারেনি। নাক গলাতে না পারলেও তারা ষড়যন্ত্র করেছে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আন্তর্জাতিক মদদ এবং ষড়যন্ত্রের কথা এখন সবাই জানে। মার্কিন দলিলপত্রেই তখন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিস্টার বুস্টারের ভূমিকার কথা জানা যায়। ৭৫-এর পর থেকেই পশ্চিমা দূতাবাসগুলো ক্ষমতাবান হতে শুরু করে।
কিন্তু শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাব কিছুটা হলেও কমে গেছে।সুতরাং,আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজিত হবে বলে আশা করাই যায়।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি আরকাইভ অনলাইন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।