শুক্রবার, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
22 C
Dhaka

বাংলা চলচ্চিত্রের ‘ভুবন সোম’ মৃণাল সেন

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

মৃণাল সেন – এই নামটির সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে আছে একটা অন্য সময়, একটা অন্যরকম কলকাতা তথা ভারতবর্ষ। পারস্পরিক সাম্যের আদর্শে মৃণাল সেনের বিশ্বাস মিশে ছিলো, যার প্রত্যক্ষ করা যায় তাঁর জীবন-যাপনে, তার বিশ্বাস এবং তার কথাবার্তায়। তার পরিচালিত সিনেমার ক্ষেত্রেও সেটার ব্যতিক্রম ঘটেনি৷

মৃনাল সেনের সমকালীন বিশ্বের অনেক খ্যাতিমান পরিচালকরা ছিলেন তাঁর কাজের অনুরাগী। তিনি নিজেও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সম্পর্কে ছিলেন আগ্রহী। তবে মিষ্টার সেন বরাবরই কলকাতা এবং নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের জীবনের গল্পই উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন স্ক্রিনে একটা র’ নেসের মধ্য দিয়ে। নিজেকে সেই সময়ের একজন সাধারণ মানুষ কল্পনা করেই সমাজ এবং মানুষের জন্য সিনেমা বানিয়েছেন তিনি৷ তার সময়কে তিনি ধারণ করেছেন প্রতিটি সিনেমায়।  যুদ্ধ, দেশভাগ, অসহায় মানুষের জীবনযুদ্ধ, সমাজের ক্রান্তিলগ্ন সবই উঠে এসেছে তার সিনেমায়৷ মধ্যবিত্তের স্বপ্ন উড়াল দিলেও বাস্তবতার ধাক্কা খেয়ে আছড়ে পড়ছে তপ্ত রাজপথে, এমন ধারায় সিনেমা বানিয়েছেন মৃনাল হক।

মৃণাল সেনকে কেউ কেউ বলেন ‘পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো সবথেকে বলিষ্ঠ নির্মাতা’। তবে এরই সাথে বারবারই নানা আলোচনায় উঠে এসেছে তার সিনেমার বিষয়বস্তু এবং বাস্তবতার সাথে মিলেমিশে যাওয়া অসাধারণ সংলাপ। তার প্রথম সিনেমা ‘রাতভোর’ থেকে শেষ সিনেমা ‘আমার ভুবন’ প্রতিটি সিনেমাতেই শিল্পমানের পাশাপাশি তিনি দেখিয়ে গেছেন সৃজন ভাবনা এবং মননের এক অবিশ্বাস্য অধ্যায়। সমসাময়িক সময়ের আরেক কিংবদন্তি নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাটিক ভাবনার বিপরীত ভাবনায় মৃনাল সেনের চলচ্চিত্র গুলো বিশ্ব দরবারে পেয়েছিলো ক্ল্যাসিক সিনেমার মর্যাদা। যদিও বাংলা চলচ্চিত্রকে ‘ক্লাসিক’করে তোলার বিষয়ে তেমন ভাবে বিশ্বাস ছিলো না তাঁর বলে নিজেই জানিয়েছেন নানা সাক্ষাৎকারে।

ষাট এবং সত্তর দশকে কলকাতায় বহু মানুষ সমাজ এবং আর্থিক অবস্থা বদলের যে দিনবদলের স্বপ্ন দেখতেন, তখনকার আটপৌরে মধ্যবিত্ততায় মিশে ছিলো কল্পনা আর বাস্তবতার সাংঘর্ষিক বক্তব্যতে। সেই কলকাতার ছবিটাই সারা বিশ্বকে দেখিয়েয়েছেন মৃনাল সেন। সেই সময়ে যে কলকাতায় টাকাপয়সার চেয়ে মেধার ঊৎকর্ষের মূল্য বেশি ছিল যে তিলোত্তমায়, তারই এক প্রকৃত বাসিন্দা ছিলেন মৃণাল সেন। ২৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৪টি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় ৬টি চলচ্চিত্র বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থও লিখেছেন মৃণাল সেন।

মৃণাল সেন বরাবরই বিশ্বাস করতেন কম খরচে ভালো সিনেমা তৈরি করা সম্ভব। তবে সেই ক্ষেত্রে পুরো টিমের সেই ইচ্ছাটা থাকতে হবে বলে জানিয়ে গেছেন তিনি। সমাজে উচুনিচুর ভেদাভেদ ছিল না তার কাছে৷ মৃণাল সেনের সিনেমার শুটিংয়ে একসঙ্গে বসেই খেতেন পরিচালক, নায়ক, নায়িকা থেকে শুরু করে কলাকুশলীদের প্রত্যেকে।

সিনেমায় আধুনিকতার নিরিখ তার চলচ্চিত্র গুলোতে চোখ বুলালেই পাওয়া যায়।  ‘বাইশে শ্রাবণ’ থেকে ‘ভুবন সোম’, ‘অন্তরীণ’, ‘কলকাতা ৭১’ ‘ইন্টারভিউ’ থেকে ‘পদাতিক’ প্রতিটি সিনেমাতেই তিনি নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন বহুভাবে। মৃণাল সেন বার বার বলতে চেয়েছেন সাধারণ মানুষের কথা। যে মানুষ ক্লান্ত, অনেক কিছুর ভীড়ে যার কিছুই তেমন করা হয়ে উঠছে না জীবনে, যে মানুষগুলো প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে লাঞ্ছিত, স্বপ্ন দেখতেও ভয় পায়, সেই মানুষের উপরও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় মৃণালের সিনেমা দেখলে। নির্মাতার স্বার্থকতা কি একেই বলে!!

১৯২৩ সালের ১৪ মে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলা শহরের সদর এলাকার ঝিলটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন মৃনাল সেন।  ফরিদপুরেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়ালেখা সম্পন্ন করে পশ্চিম বাংলার কলকাতায় স্থায়ী হন তিনি। এই সাবকন্টিনেন্টের নিরীখে নিজের বিশ্বাস এবং চিন্তাধারা চলচ্চিত্রের পর্দায় ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও