সালমান শাহ থেকে শুরু করে ফেরদৌস, শাকিব খান অথবা ধরুন রিয়াজ এই নাম গুলো কে না চিনে?
এই নামের মানুষগুলোর মুখ যখন সিনেমার পর্দায় আসতো তখনি সিনেমা হলের সেই উৎসব মুখর পরিবেশ বা নায়কের কোনো ডায়লগ!
বাংলা সিনেমার সেই সোনালি পাতার দিন গুলো আজও যেন হাতছানি দেয় বাংলার চলচ্চিত্র প্রেমীদের মনে, উঁকি দিয়ে বলে আসবে সেদিন, আবার যেদিন বাংলার চলচ্চিত্র হবে বিশ্বখ্যাত।
এমন একটা সময় ছিলো যখন কোনো নতুন সিনেমা আসতো তখন আমাদের দেশের গ্রামের বা শহরের সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতো সেই সিনেমাটি। সমবয়সি ছেলেদের দল বেধে সাইকেল চালিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা। পরিবার,প্রিয় সঙ্গিনী সবাইকে নিয়ে নতুন সিনেমা দেখতে যাওয়া , এ যেনো একটি উৎসব ছিলো। কিন্তু কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছে এখনকার সেই সিনেমা জগৎ। এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না মানুষের সেই আগ্রহ,নতুন সিনেমার উৎসব।
এখন যেমন শাকিব খান,অনন্ত জলিল,সিয়াম,শরিফুল রাজসহ কয়েকজন জনপ্রিয় নায়ক রয়েছেন তেমনি একসময় পর্দা মাতিয়েছেন রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানার মতো নায়কেরা। কিন্তু এখনকার শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কিন্তু আসলেই কি এখনকার শিল্পীদের অভিনয় দক্ষতার মান নিচের দিকে?
জবাবে চিত্র শিল্পী অঞ্জনা বলেন, “এখনকার শিল্পীদের মেধার অভাব নেই। প্রধান সমস্যা হলো অর্থনৈতিক আর মেধাসম্পন্ন পরিচালকের অভাব। এখন যে টেলিফিল্ম কোনটা, কোনটা নাটক সেটাই তো দর্শক বুঝতে পারছেনা। এ কারণেই সমস্যা হয়েছে”।
বাংলা সিনেমাতে কালজয়ী সিনেমা কখনো আসেনি,কথাটি এমন নয়। কালজয়ী অনেক সিনেমাই বাংলা সিনেমাতে এসেছে এবং দর্শকদের মন জয় করতেও সক্ষম হয়েছে। যেমনঃ মনপুরা,হাওয়া,ইত্যাদি। কিন্তু এসব সিনেমাগুলোর মাঝে যেনো একটি বড়ো সময়ের ব্যবধান রয়ে গিয়েছে। সময় যাওয়ার সাথে সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের ইচ্ছা,আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে।মানুষ আরো উন্নত সিনেমা চায় এখন।কিন্তু এর মাঝেও বাংলা চলচ্চিত্র যে ভাল সিনেমা উপহার দেয়নি তেমনটা নয়।
তবে সিনেমা হলগুলোর অনেক খামখেয়ালিপনার জন্যও বাংলা সিনেমার আজকের এই দশা অনেকটা দায়ী। সিনেমা হলগুলোর মান কমিয়ে দেয়াও এজন্য অনেকটা দায়ী,তার সাথে রয়েছে রুচিসম্মত সিনেমার অভাব।
দেশে ১ হাজার ২০০ সিনেমা হলের মধ্যে এখন রয়েছে মাত্র ৬৬ থেকে ৭০টি। কোনো কোনো জেলাশহরে এখন আর সিনেমা হলই নেই। যে শহরে পাঁচটি ছিল, সেখানে এখন মাত্র একটি সিনেমা হল। এ পরিস্থিতির মধ্যে করোনা মহামারি যেন বাংলা সিনেমার বুকে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিয়েছে। এখন সরকার সিনেমা হল খুলে দিতে বললেও হলমালিকরা খুলছেন না।
অথচ কী রমরমা অবস্থাই না ছিল আমাদের চলচ্চিত্রের! বাংলা সিনেমার স্বর্ণালী যুগের কথা বলতে গিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন। প্রথমত বললেন, নায়করাজ রাজ্জাক ভারতের হিন্দি, বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু চলচ্চিত্রকে বাংলাদেশের সিনেমা হল থেকে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) হটিয়ে দিয়েছিলেন। নির্মাণ, গল্প সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ এতটাই ছিল যে, হিন্দি সিনেমা না চালিয়ে রাজ্জাকের সিনেমা চালানো হতো। একসময় ভারতীয় হিন্দি সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা বাংলাদেশের সিনেমার এই অবস্থা কেন হলো? এ প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকের সামনে। তারা বললেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাইতে এর দায় প্রধানত সরকারের। সময়ের প্রয়োজনে আধুনিক ফিল্ম নির্মাণের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবেই বাংলা সিনেমা আজ ধুঁকছে। তার পরও যে বাংলা সিনেমা টিকে আছে, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত দেখার অপেক্ষায় আজও অনেকে সিনেমা বানাচ্ছেন সেটা চলচ্চিত্রে নিবেদিতপাণ শিল্পী, পরিচালক, প্রযোজক ও কলাকুশলীদের কারণেই।
বাংলা চলচ্চিত্র ১৯৬০ থেকে ১৯৯০ এর দশকে উত্তরণের সময়কালে ছিল। বাংলা চলচ্চিত্র তার নিজস্ব ভাষা অর্জনের পাশাপাশি একটি শক্তিশালী বাজার অবস্থান তৈরি করেছিল। কিন্তু তারপর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সিনেমা ব্যবসাও শুরু হয় একজনের ওপর নির্ভর করে। সালমান শাহ, মান্না এবং এই মুহূর্তে শাকিব খান। নায়িকার ক্ষেত্রেও আলাদা নয়। শাবনূর ,মৌসুমী। বর্তমানে অনেক নতুন মুখ বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছুদিন আগেই বাংলা সিনেমার সোনালি সময়ের কিছুটা হলেও আভাস পেয়েছে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। শাকিব খান অভিনীত প্রিয়তমা সিনেমাটি সারা ফেলেছিলো পুরো দেশজুড়ে।সাথে ছিলো নতুন নায়ক আফরান নিশো অভিনীত সিনেমা সুড়ঙ্গ । এই দুটি সিনেমা বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও হল পেয়েছিলো যা বাংলা সিনেমার নতুন দিগন্তের সূচনা এনে দিচ্ছে।এই সিনেমা গুলো দেখার জন্য দর্শকদের উপচে পরা ভিড় যেন বহুকাল দেখেনি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি!এই সিনেমাগুলো দেখার জন্য কোথাও শোনা গিয়েছে জনগণ নিজেদের উদ্যোগে অস্থায়ী সিনেমা হল বানিয়েছে।
বাংলা সিনেমা এখনো হারিয়ে যায়নি ! এখনো কিছু নতুন মুখ, নতুন করে শুরু করা নায়ক,নায়িকারা এবং উন্নত রুচিশীল কিছু প্রযোজক পরিচালিত কিছু সিনেমার জন্য এখনো যেনো বাংলা সিনেমা মানুষের বুকে কিছুটা হলেও আশার আলো নিয়ে বসে আছে।