শনিবার, জুন ১০, ২০২৩

বিচারপতি সাত্তারের শাসনকাল

- Advertisement -

বিচারপতি সাত্তারের শাসনকাল (৩০শে মে ১৯৮১-২৪শে মার্চ ১৯৮২)

ক. রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ ও সেনাবিদ্রোহ দমন

- Advertisement -

১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামে এক সেনাবিদ্রোহে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার (বয়স ৭৩) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময়ে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এবং বিভিন্ন সেনাছাউনির সমর্থনে বিচারপতি সাত্তার চট্টগ্রাম সেনাবিদ্রোহ দমনে সফল হন। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও বেসামরিক শাসনের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে, যা বিদ্রোহ দমনে বৃদ্ধ সাত্তারকে শক্তি ও সাহস জোগায়।

খ. সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী

সংবিধানের ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রপতির শূন্যপদ নির্বাচনের মাধ্যমে পূরণে সাত্তার শীঘ্রই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর সংবিধানের সংশোধনী প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কেননা, তিনি উপরাষ্ট্রপতি থাকাকালে প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাই সংবিধানের ৬৬ ধারার ২ উপধারা অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য। ১৯৮১ সালের ৮ই জুলাই জাতীয় সংসদে সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী পাস হয়। এর দ্বারা উপরাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক পদ নয়’ ঘোষণা করা হয়। ফলে বিচারপতি সাত্তারের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না।

গ. রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

১৯৮১ সালের ১৫ই নভেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোট ৩১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন বিএনপি প্রার্থী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. কামাল হোসেনের মধ্যে। বিচারপতি সাত্তার বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন।

সারণি-৪ : ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল।

দলের নাম                                         প্রার্থী                                                   প্রাপ্ত ভোট

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী                    বিচারপতি আবদুস সাত্তার                  ৬৫.৮০

দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ             ড. কামাল হোসেন                             ২৬.০৫

         অন্যান্য ও স্বতন্ত্র                                                                               ০৮.১৫

মোট                                                                                              ১০০

উৎস : সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ষষ্ঠ সংস্করণ, ঢাকা ১৯৯৭, পৃ. ৬৬৪-৬৫

*          এদের মধ্যে মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ (হাফেজ্জী হুজুর) (খেলাফাত আন্দোলন), জেনারেল এম এ জি ওসমানী (নাগরিক কমিটি), মেজর (অব.) এম এ জলিল (জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দল নিয়ে গঠিত ‘তিনদলীয় ঐকাজোট’), অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (ন্যাপ- মোজাফফর) ও মাওলানা আব্দুর রহীম (ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ) উল্লেখযোগ্য।

ঘ. ক্ষমতা থেকে বিদায়

নির্বাচনের পরপর ক্ষমতাসীন বিএনপির মধ্যে উপদলীয় কোন্দল ও অনৈক্য মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং শীঘ্র তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। ৪ মাসের ব্যবধানে দুবার মন্ত্রিসভা রদবদল করতে হয়। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একের পর এক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে ১৯৮২ সালের ২৪ই মার্চ বিচারপতি সাত্তার সেনাবাহিনীর অনুকূলে ক্ষমতা ত্যাগ করেন। সাত্তারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার ১২৮ দিনের মাথায় তা ঘটে।

- Advertisement -
spot_img

Latest articles

Related articles

spot_img