শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৩

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ এর সম্ভাবনা কতটুকু?

বাংলাদেশ হতাশার গল্প ছাপিয়ে এবার তারুণ্যনির্ভর শাকিবের দলটি আবার দেখাচ্ছে আশার আলো। এবার কি ইতিহাস গড়তে পারবে বাংলাদেশ?

 

তিনবার হৃদয় ভাঙলেও এবার টাইগারদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতেই পারে গোটা দেশবাসীর। কেননা ভালো ব্যাটার ভালো বলার, ভালো নেতৃত্ব তুখোড় ফিল্ডিং এবং জীবনীশক্তির সব উপাদান এই দলটার রয়েছে। অভিজ্ঞতায় ও পিছিয়ে নেই সাকিব-মুশফিকরা তাইতো তাদের হাত ধরেই  শিরোপার উল্লাসে মাতার অপেক্ষায় ১৭ কোটির বাংলাদেশি।কোটি বাঙালির স্বপ্ন পুরন এর উদ্দেশ্যে ভারতে টাইগারদের যাত্রাতে কতটুকু সফল হবে বাংলাদেশ?

 

বাংলাদেশ এর বিশ্বকাপ  যাত্রায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টাইগার দের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রবেশ ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে। ৩১ মার্চ ১৯৮৬ সালে, বাংলাদেশ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার প্রথম ওডিআই ম্যাচ খেলে।৪৪ বছরে টাইগারদের আন্তর্জাতিক শিরোপার আক্ষেপ মেটাতে হাথুরু এবং তার সেনারা আঁটি বেঁধে নেমেছে।

- Advertisement -

 

আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড দ্বারা আয়োজিত হবে এবং বাংলাদেশ দল ভারতীয় ভালো কন্ডিশনের পিচের সুবিধা পেতে যাচ্ছে। ভারতে আসন্ন ২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি অংশগ্রহণ এর সুযোগ  পেয়েছে। এবারের বিশ্বকাপ জয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে।

 

কোচ হাথুরুসিংহে এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অধীনে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে পারি জমাবে।বাংলাদেশ দলে  বোলিংয়ে অনেক বিকল্প রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে গত চার বছরে ওয়ানডেতে এটি তাদের অন্যতম প্রধান শক্তি।২০১৯ বিশ্বকাপে আমরা যে বোলিং খরা  দেখেছি এবং প্রচুর রান দিতে দেখেছি তার থেকে এটি একটি বিশাল উন্নতি, আশা এবং আকাঙ্ক্ষিত দিক। 

 

বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে স্পিন-নির্ভর দল। ২০১৫ থেকে আমরা ফাস্ট বোলিং ইউনিটের উত্থান দেখেছি। তাই দ্বিতীয় সেরা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণ গ্রহণ যোগ্যতা পেয়েছে। তারা অবশ্যই বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা পেস আক্রমণগুলোর একটি তাছাড়া এটি এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।অ্যালান ডোনাল্ড এবং তার শিষ্যরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ এর পর থেকে পরিসংখ্যান এর দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ওডিআই পেস আক্রমণ।২০১৯ বিশ্বকাপ এর পর থেকে বাংলাদেশ ৪৫ ম্যাচে পেস আক্রমণে ২৮.৩৩ গড়ে মোট ১৮৯  উইকেট পেয়েছে। 

 

তাসকিন আহমেদ যিনি তার ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ফর্মে আছেন। তার বোলিং লাইন এবং দৈর্ঘ্য যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পেস আক্রমণের জন্য উপযুক্ত। তিনি বর্তমানে পেস বিভাগের প্রধান পেস বোলার। এছাড়াও আমাদের কাছে মুস্তাফিজুর রহমান, তরুণ হাসান মাহমুদ, ইবাদত হোসেন ,শরিফুল ইসলাম রয়েছেন। যদি তারা তাদের ফর্ম ঠিক রেখে এবং লাইন-লেংথ চালিয়ে যেতে পারে তবে তারা এই বিশ্বকাপে একটি দুরন্ত সূচনা এনে দিতে পারে।

 

তবে একটি বড় সমস্যা হতে পারে খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থা এবং ইনজুরি। এশিয়া কাপ চলছে এবং এশিয়া কাপের পরে খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি হিসেবে নিউজিল্যান্ডের সাথে সিরিজ রয়েছে,দলে ইনজুরির সমস্যা থাকতে পারে যা বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিনে ফেলতে পারে। সম্প্রতি এবাদত হোসেন হাঁটুর ইনজুরির কারণে ২০২৩ সালের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়েছেন। এবাদত হোসেনের জায়গায় মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী অথবা তরুণ তাঞ্জিম হাসান সাকিব এর ডাক পরতে পারে দলে। 

- YouTube -

 

আর তাছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য খারাপ খবর হতে পারে  যে তাদের কাছে কোনো পেস বোলিং অলরাউন্ডার নেই। ভারতীয় পিচ এ পেস বোলিং অলরাউন্ডার দলে দারুণ প্রভাব ফেলতে পারে। সেখানে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন হতে পারত বাংলাদেশ দলের ট্রাম্প কার্ড। কিন্তু তার ইনজুরি এবং সাম্প্রতিক ফর্মের কারণে তাকে বিশ্বকাপ দলের বিবেচনায় রাখা হয়নি।

 

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা স্পিন আক্রমণ করেছে। তারা ২০১৯ বিশ্বকাপের পর ৪৫ ম্যাচে ৮৬৫ ওভার বোলিং করেছে। এবং তারা প্রতি ওভারে ৪.৬ রান রেটে ২৭.৩ গড়ে ১৪৬ উইকেট পেয়েছে।এভাবে তারা আগ্রাসন চালিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ এর বিশ্বকাপ জয় খুব দূরে নয়।

 

রাঙ্গানা হেরাথ এর অধীনে বাংলাদেশ এর স্পিন আক্রমণ হয়ে উঠেছে অন্যতম শক্তিশালী একটি স্পিন বিভাগ।স্পিন বিভাগে বাংলাদেশের ১ জন নিয়মিত স্পিনার এবং 2 জন অলরাউন্ডার স্পিনার ব্যাটসম্যান রয়েছে। নাসুম আহমেদ স্কোয়াডে নিয়মিত স্পিনার। সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজ এই বিশ্বকাপে স্পিন এবং ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। টাইগারদের এখন রয়েছে বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে গতিশীল, কৌশলগত এবং শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ ৷ তারা যদি সঠিক সময়ে  তাদের সেরাটা খেলতে পারে তবে আমরা এই বিশ্বকাপে একটি ইতিহাস তৈরি করতে পারি৷

 

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে কিছু তরুণ খেলোয়াড় আছে। ২ জন সিনিয়র ক্যাম্পেইনার আছে যারা ইতোমধ্যেই ৪ টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট খেলেছে। এই বিশ্বকাপে সাকিব ও মুশফিককে বড় ভূমিকায় দেখা যাবে। তামিম ইকবাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন, তিনি বাদ পড়েছেন। তার জায়গায় ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব নেন সাকিব আল হাসান। 

 

ইতিমধ্যে, নাইম শেখ বা তানজিদ হাসান তামিম,লিটন কুমার দাসের সাথে ওপেনিং এ ব্যাটিং শুরু করতে পারে। তারা ক্লাসিক্যাল ব্যাটসম্যান যারা ইতিমধ্যে জাতীয় প্রিমিয়ার লিগে তাদের যোগ্যতা দেখিয়েছে। তাদের একটি স্মরণীয় বিপিএল মৌসুমও ছিল, যেখানে তারা তাদের বাউন্ডারি হিটিং করার ক্ষমতা দেখিয়েছে। তারা উইকেটের মধ্যে থিতু হয়ে খেলার যোগ্যতা রাখে তাই তারা স্কোরকার্ড সচল রাখতে পারার ক্ষমতা রাখে। নাজমুল হোসেন শান্ত গত বছর দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন, তাই তাকে ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে দেখা যেতে পারে। এটি ব্যাটিং ইউনিটকে শক্তিশালী করবে, কারণ সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিম সবাই ভাল ফরমে এবং রান এ রয়েছেন।

 

তৌহিদ হৃদয় বাংলাদেশের ব্যাটিং এ ভরসার প্রতীক হিসেবে নিজেকে অনেকবার প্রমাণ করেছেন।তিনি ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কা তে টি টুয়েন্টি লিগে জাফনা কিংস এর হয়ে খেলে এসেছেন ।সেখানে তিনি ৬ ম্যাচ খেলে ১৫৯ রান করেছেন। যার মাঝে একটি অর্ধ শতক রয়েছে।মেহেদি হাসান মিরাজ একজন প্রকৃত অলরাউন্ডার যিনি ৮ নম্বরে ব্যাট করতে পারেন। সব মিলিয়ে বলা যাচ্ছে বাংলাদেশ এর জন্য এই বিশ্বকাপটি হতে পারে স্মরণীয় একটি বিশ্বকাপ।

 

ভারতের ধর্মশালায় ২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান এর প্রথম ম্যাচ দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে টাইগার দের বিশ্বকাপ  যাত্রা। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অল-টাইম ফেভারিট না হলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তার সামর্থ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে তারাও বিশ্বকাপ এর দাবি রাখে। পৃথিবীর সব দলের জন্যেই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এক ভয়ংকর দল।

 

বাংলাদেশ এর সোনালি ক্রিকেট প্রজন্মের শেষ সুযোগ এটি।কোটি মানুষ এর স্বপ্ন পুরন হোক এবার।এবারের বিশ্বকাপ হোক আমাদের,লাল সবুজ এর জয়ের পতাকা বিশ্ব আবার দেখুক,বিশ্ব আবার দেখুক বাঘের গর্জন,জয়ধ্বনি আসুক দেশ জুড়ে,এই প্রত্যাশা কোটি বাঙালির।

- Advertisement -

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

  • সাবস্ক্রাইব করুন তথ্যবহুল সত্য খবরের জন্য 

    You are our valued subscriber. We send weekly newsletter. NO SPAM

আরও পড়ুন

শোকগাথা লেখার আগে মাহমুদউল্লাহ কি লিখবেন গৌরবগাঁথা?

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই গৌরবগাঁথা মনে আছে নিশ্চয়। টাইমমেশিনে চড়ে...

সালমান শাহ: ফরএভার ইন দ্য স্পটলাইট

কী এমন ছিল সালমানের মধ্যে যার জন্য তাকে আইডল...

বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরবে কবে?

সালমান শাহ থেকে শুরু করে ফেরদৌস, শাকিব খান অথবা...

বিটিএস নিয়ে উন্মাদনা

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সংগীত উন্মাদনার নাম বিটিএস। দক্ষিণ কোরিয়ান...