মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩

বিশ্ববাসী জনমত গঠন

বিশ্ব জনমত

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ বিপ্লবকে পাকিস্তান একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ও সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তা পারে নি। এর অনেক কারণও ছিল।

প্রথমত, বাঙালিরা ছিল পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেজরিটির দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। সাধারণত মাইনরিটির মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ লক্ষ করা যায়।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ বিপ্লবের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেছনে ছিল জনগণের ম্যান্ডেট। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁর দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অথচ তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সংকটের সামরিক সমাধানের পথ বেছে নেয়।

তৃতীয়ত, মুজিব একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন’ (UDI), এরূপ অভিযোগ আনা সহজ ছিল না। তিনি আলাপ- আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন, এ ধরনের একটি ধারণা পর্যবেক্ষক মহলে ন্যায়সংগত কারণেই জন্মলাভ করে। ২৫শে মার্চ গভীর রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়লে কেবল তখনই মুজিব সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

চতুর্থত, বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী নির্বিচার গণহত্যা চালিয়ে যায়। ভীত-সন্ত্রস্ত ১ কোটি মানুষ (মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ ভাগের ১ অংশ) পার্শ্ববর্তী ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই শরণার্থী সমস্যা শুধু ভারত নয়, বিশ্বসম্প্রদায়ের জন্যও একটি বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

- Advertisement -

 সর্বোপরি বিশ্বের মানচিত্রে পাকিস্তান ছিল একটি অদ্ভত রাষ্ট্র, যার নজির পাওয়া দুষ্কর। ভারতের ভূখণ্ড দ্বারা বিভক্ত হাজার মাইলের অধিক দূরত্বে দুটি অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে এর প্রতিষ্ঠা। শুধু ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতাই নয়, ওই দুই অংশের মধ্যে প্রায় সর্বক্ষেত্রে ছিল অমিল। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেখা দেয় সংহতির সংকট। পাকিস্তানি শাসনের ২৩ বছরে তা কেবল বৃদ্ধি পেয়ে ৭১-এ রাষ্ট্রকাঠামোটি ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম লাভ করে।

বিশ্ব জনমতের সহানুভূতির কারণ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ দেশে-বিদেশে একটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সংগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত হয়। এরূপ সাধারণ ধারণা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খুবই সহায়ক হয়। সে কারণে, বিশ্ব জনমত, বিশেষ করে পশ্চিমের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের জনগণ, প্রচার মাধ্যম এবং অনেক সরকার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। যুক্তরাজ্য বহির্বিশ্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের প্রচারণার হেডকোয়ার্টার্স-এ পরিণত হয়েছিল।

- Advertisement -

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

  • সাবস্ক্রাইব করুন তথ্যবহুল সত্য খবরের জন্য 

    You are our valued subscriber. We send weekly newsletter. NO SPAM

আরও পড়ুন

ভারত ও রাশিয়ার ভূমিকা

দুই পরাশক্তির অবস্থান বহির্দেশের মধ্যে ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন...

সেক্টরর্স

মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন ও পরিচালনা ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর...

পাকিস্তান-পূর্ব ভাষা বিতর্ক

ভাষাআন্দোলন ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।...

ঐতিহাসিক ছয় দফা

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরু থেকেই পশ্চিমা শাসক...

২৫শে মার্চ ১৯৭১

২৫শে মার্চ ১৯৭১। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ২৫শে মার্চ ১৯৭১...

২৪শে মার্চ ১৯৭১

২৪শে মার্চ তারিখেও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার মধ্যে কোন...

২৩শে মার্চ ১৯৭১

২৩শে মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। এদিন সরকারী ও বেসরকারী...

২১শে মার্চ ১৯৭১

মুজিব ইয়াহিয়ার আলোচনার আলোকে প্রেসিডেন্ট হাউস হতে ঢাকা সফরের...

২০শে মার্চ ১৯৭১

২০ শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও শেখ মুজিবের মধ্যে...

১৯শে মার্চ ১৯৭১

১৯শে মার্চ সকাল ১০টায় ইয়াহিয়া ও শেখ মুজিবুর রহমানের...