বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৫
29 C
Dhaka

বুদ্ধ পূর্ণিমা

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

বৈশাখ পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন কারণ এই দিনেই মহামানব গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিজ্ঞান লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ ঘটেছিল।প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত লুম্বিনী নামক উদ্যানে শাক্য রাজা শুদ্ধোধনের ঔরসে রানী মহামায়ার গর্ভে এই পূর্ণিমা তিথিতে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একই পূর্ণিমা তিথিতে ভারতের বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়ার বোধিদ্রুমমূলে ৩৫ বছর বয়সে বোধিপ্রাপ্ত হন। ৮০ বছর বয়সে এই বৈশাখের এমনই এক তিথিতে কুশীনারায় মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।


শাক্য রাজা শুদ্ধোধন ও রানি মহামায়ার পুত্ররূপে জন্মগ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। শিশুর দেহে বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণ দেখে অসিত ঋষি রাজাকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “এই শিশু রাজা হবেন না, বরং তিনি ধর্মের ছায়াতলে জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।”


রাজপুত্র সিদ্ধার্থের জীবন ছিল সুখ-সমৃদ্ধি ও বিলাসবহুল। কিন্তু জীবনের চরম অর্থ কী? এই প্রশ্নটি তাঁর মনের কৌতূহল হয়ে উঠে।


পরবর্তীতে গৃহত্যাগ করে সাধনা বলে এমনই এক বৈশাখি তিথিতে বৈশাখ পূর্ণিমার রাতের প্রথম প্রহরে, বুদ্ধদেব বুদ্ধগয়ায় বটবৃক্ষের নিচে বসে, তিনি জাতিস্মর জ্ঞান অর্জন করেন। এর অর্থ হল তিনি তার পূর্ববর্তী জন্মগুলি স্মরণ করতে সক্ষম হন। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে বুঝতে সাহায্য করে যে জীবন চিরন্তন এবং আমরা জন্ম ও মৃত্যুর চক্রে বারবার ঘুরতে থাকি।


দ্বিতীয় প্রহরে, বুদ্ধদেব সকল প্রাণীর জন্ম-রহস্য উদ্‌ঘাটন করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে সকল প্রাণীই দুঃখের অধীন এবং তারা এই দুঃখ থেকে মুক্তি কামনা করে।


তৃতীয় প্রহরে, বুদ্ধদেব জীবজগতের কার্যকারণ নীতি উপলব্ধি করেন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু হতে পরিত্রাণের উপায় উদ্ভাবন করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে অবিদ্যা বা অজ্ঞানতাই দুঃখের মূল কারণ এবং এই অবিদ্যা দূর করলেই আমরা দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

বৈশাখ পূর্ণিমার রাতের শেষ প্রহরে, ধ্যানস্থ হয়ে বুদ্ধদেব দুঃখের কারণ হিসেবে অবিদ্যা বা অজ্ঞানতাকে উদ্ভাবন করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে যখন আমরা জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকি, তখন আমরা ভুল ধারণা ও কামনার দ্বারা পরিচালিত হই, যা আমাদের দুঃখের দিকে ধাবিত করে। বুদ্ধদেব উপলব্ধি করেন যে অবিদ্যা দূর করতে পারলেই আমরা দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং নিবার্ণ লাভ করতে পারি। নিবার্ণ হল জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে চিরতরে মুক্তির অবস্থা, যেখানে আমরা স্থায়ী শান্তি ও সুখ অর্জন করি।


কারণ হল অবিদ্যা বা অজ্ঞানতা। আমরা যখন জীবনের সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকি, তখন ভুল ধারণা ও কামনার বশে জীবনযাপন করি, যা আমাদের প্রতিনিয়ত দুঃখের দিকে ধাবিত করে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা বাংলাদেশে একটি সরকারি ছুটির দিন। এই দিন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ আগ্রহের সাথে গৃহের পূজাকর্ম সম্পাদন করে আহারাদি সহ পূজোপকরণের  থালা মাথায় নিয়ে সবাই নতুন কাপড় পরিধান করে বৌদ্ধ বিহারে সমবেত হন। উপাসক-উপাসিকাগণ বুদ্ধ পূজা সহ পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্র পাঠ, সূত্র শ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা এবং নানাবিধ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।বিকেলে, ধর্মীয় সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ধর্মীয় গুরুরা বুদ্ধের জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে বক্তৃতা দেন। সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।


                         “সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু।“

                     “জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।“

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও