ইসলামে নারীকে দিয়েছে মায়ের সম্মান, স্ত্রীর অধিকার ও কন্যার স্নেহ। এমনকি ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে পৃথিবীর প্রথম নারী হলেন হজরত আদম (আ.)-এর স্ত্রী হাওয়া (আ.)। মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবী সৃষ্টির শুরুতেই পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমঅধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতেই একই দিনে একই সঙ্গে দুনিয়াতে নর ও নারীর আবির্ভাব ঘটান।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি কোনো নারী উপার্জন না করে এবং সে তার স্বামীর প্রতি নির্ভরশীল হয় তখন স্বামী তার প্রতি বিরক্ত হয় এবং অনেক সময় এমন ভাব দেখায় যে তার দয়ায় সেই নারীর জীবন চলছে। তার দয়াতে সে নারী বেঁচে আছে। এমন ভাব দেখানো কোনো পুরুষের ই উচিত না। কারন পৃথিবীতে সবাই যার যার রিজিক নিয়ে জন্মায়। আল্লাহ সবার রিজিক নির্ধারন করে দিয়েছেন। এমনওতো হতে পারে সে নির্ভরশীল মানুষগুলোর রিজিকের কারনে সেই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি উপার্জন করতে পারছেন।
হতে পারে সে ব্যক্তি কোথায় কত টাকা উপার্জন করবে তা তার মা দাদি কিংবা স্ত্রীর জায়নামাজ থেকে আসছে। এমন কখনো কোন মানুষের চিন্তা করা উচিত নয় যে তার অনেক টাকা জমা হয়ে যেতো যদি সে স্ত্রীর পেছনে খরচ না করতো কিংবা মা এর পিছনে বা মেয়ের পিছনে খরচ না করতো। এই নির্ভরশীল মানুষগুলোর জন্যই হয়তোবা সেই মানুষটা বেঁচে আছে।
একজন শিক্ষিত নারী যখন নিজের ক্যারিয়ার , নিজের স্বপ্ন সব বিসর্জন দিয়ে সংসার সামলানোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন একজন পুরুষ যদি তার আত্মসম্মানে আঘাত হানে কিংবা তার উপার্জনহীনতা নিয়ে অবমূল্যায়ন করে তখন সে পুরুষের কি এইটা চিন্তা করা উচিত নয় যে সে তার একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি আরেকজন এর উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
তাহলে তো বলাই যায়, বস্তুবাদ ও ধনতন্ত্র যখন সমাজের পুরুষদের এই মূল্যবোধ কেড়ে নিচ্ছে, তখন পুঁজিবাদী এই সমাজে নারীরা কেবল উপার্জন সক্ষমতাতেই নিজেদের অর্থ খুঁজে নিবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়?
প্রতিটা পুরুষের তাই বুঝা উচিত তার স্ত্রীর প্রতি সে কোন অনুগ্রহ করছে না, বরং তার স্ত্রী নিজের খোদার পক্ষ হতে তার প্রতি সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ।
ইসলামে স্ত্রীর ভরণপোষণের পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তায়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “পুরুষরা নারীদের উপর তাদের অভিভাবক, কারণ আল্লাহ তাদেরকে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠ করেছেন এবং তাদের সম্পদ থেকে ব্যয় করেছেন। সুতরাং যে নারীরা সৎ ও আনুগত্যশীল, তাদের প্রতি পুরুষদের উচিত তাদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান করা এবং তাদের প্রতি সুন্দরভাবে আচরণ করা। আর যে নারীরা অবাধ্য ও বিদ্রোহী, তাদের সাথে পুরুষদের উচিত ভালোভাবে কথা বলা, তাদের বিছানা থেকে তাদের আলাদা করে রাখা এবং তাদের শাস্তি দেওয়া।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৪)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর উপর। স্ত্রীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব স্বামীর। স্ত্রীর যদি কোন সম্পত্তি না থাকে, তবে স্বামীকে তার সম্পদ থেকে তার ভরণপোষণ করতে হবে।
এছাড়াও, স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। স্ত্রীর সাথে মিষ্টিভাবে কথা বলতে হবে এবং তার মতামতকে সম্মান করতে হবে।
ইসলামে স্ত্রীকেও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি আনুগত্যশীল ও সৎ থাকতে হবে। স্বামীর ঘরে থাকতে হবে এবং তার অনুমতি ছাড়া বাইরে বের হতে পারবে না। স্বামীর সম্পত্তির যত্ন নিতে হবে এবং অপচয় করবে না।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, বোঝাপড়া ও সহযোগিতা থাকলে দাম্পত্য জীবন সুখের ও সমৃদ্ধ হয়।