দুই পরাশক্তির অবস্থান
বহির্দেশের মধ্যে ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদান করে। অপর দিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। এভাবে দুই পরাশক্তি (সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র) বিরোধী দুই পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। তবে বাংলাদেশের পক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থান যতটা দৃঢ় ছিল, পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ততটা ছিল না। ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় তা স্পষ্ট হয়ে যায়। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল এ অঞ্চলে তার কৌশলগত স্বার্থ বিবেচনা থেকে অধিকতর নির্দেশিত।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা
২৫শে মার্চে পাকিস্তানি আক্রমণের বিরুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে উঠলেও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলায় তা ছিল অপ্রতুল। তাই প্রাথমিক প্রতিরোধ শেষে গেরিলাযুদ্ধের কৌশল নেওয়া হয়। এরপর এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার গঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধ একটি সুশৃঙ্খল কাঠামোগত ভিত্তি লাভ করে। গড়ে ওঠে এক বিশাল মুক্তিবাহিনী। সংখ্যায় স্বল্প হলেও একপর্যায়ে নিয়মিত বাহিনীও গঠিত হয়। ৭১- এর অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় শুরু হয় সরাসরি আক্রমণ ও সম্মুখযুদ্ধ। সৃষ্টি হতে থাকে একের পর এক মুক্তাঞ্চল। অবস্থা বেগতিক দেখে ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান প্রথম ভারতে বিমান হামলা চালায়। এভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ৬ই ডিসেম্বর ভারত স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যোগ দিয়ে যৌথ কমান্ডের অধীনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে পূর্ব রণাঙ্গনে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়। ১৩ দিনের ব্যবধানে ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি দখলদার সৈন্য নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। অর্জিত হয় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।
এভাবে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক গৌরবোজ্জ্বল ও বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম, দেশবরেণ্য অনেক বুদ্ধিজীবীর নির্মম হত্যা এবং দেশের অবকাঠামোর ধ্বংসস্তূপের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের।