শুক্রবার, জানুয়ারি ২৪, ২০২৫
22 C
Dhaka

ভাষার জন্য বাঙ্গালির আত্মদান

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা সফরে এসে রেসকোর্সের জনসভা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করলে তৎক্ষণাৎ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ওঠে। ধারণা করা হচ্ছিল, এরপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সতর্ক ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এদিকে ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাহ মৃত্যুবরণ করলে খাজা নাজিমউদ্দিন গভর্নর জেনারেল হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।


১৯৫১ সালে আততায়ীর গুলিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান নিহত হন এবং খাজা নাজিমউদ্দিন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে ছাত্রসমাজের সঙ্গে স্বাক্ষরিত (১৫ই মার্চ ১৯৪৮) চুক্তি সম্পূর্ণ ভঙ্গ করে ১৯৫২ সালের ২৬শে মার্চ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার নতুন ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব।


১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠন করা হয়। এর পূর্বে ১৯৫১ সালের ১১ই মার্চ আবদুল মতিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি। ১৯৫২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশ থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট ও সভা-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।


এদিকে, ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরুর বেশ আগে থেকেই কারাবন্দী অবস্থায় ছিলেন প্রতিশ্রুতিশীল যুব নেতা শেখ মুজিব। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী থাকা এবং পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যগত কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলে, সেখান থেকে তিনি বাইরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালন এবং সেদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গেরও নির্দেশনা দেন। ১৫ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ও সহবন্দী মহিউদ্দিন আহমদকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।


পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ই ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও মহিউদ্দিন আহমদ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ এবং ‘রাজবন্দীদের মুক্তি’র দাবিতে ফরিদপুর কারাগারে আমরণ অনশন শুরু করেন, যা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। এ বিষয়ে আলোচনার দাবি করে পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে মূলতবি প্রস্তাব আনা হয়। মিসেস আনোয়ারা খাতুন এই প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন–


I beg to move that the Assembly do adjourm its business of today to discuss indefinite matter of urgent public importance and of recent occurance, namely the situation created by the failure of the govt. of East Bengal to prevent hunger strike resorted to by Mr. Sheikh Mujibur Rahman, a Security Prisoner from 16th February 1952.


সরকার কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারির আগের দিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে সমাবেশ অনুষ্ঠান ও মিছিল বের করার চেষ্টা করে। বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখে অনুষ্ঠিত এমনই সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। শহীদ হন সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে রচিত হলো এক রক্তাক্ত অধ্যায়। এরপর পাকিস্তানি শাসনগোষ্ঠী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে সম্মত হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে তা স্বীকৃত হয়।


রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ‘শুধু ভাষার আন্দোলন ছিল না, বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সার্বিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নও এর সাথে জড়িত ছিল। ভাষা আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক জাতীয় চেতনা দিনে দিনে প্রবল হয়ে ৭১- এ স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করে।বাঙালিই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি, যারা ভাষার দাবিতে জীবন দিয়েছে। এই আত্মদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিশ্বের সকল ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকারের স্বীকৃতি এটি। জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও