বুধবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪
28 C
Dhaka

ভুগর্ভস্থ পানি শেষ হয়ে গেলে কি হবে?

আরো পড়ুন

- Advertisement -

পানির অপর নাম জীবন। এই পানি ছাড়া একদিনও কল্পনা করা যায় না। আবার পৃথিবীর মোট আয়তনের তিন ভাগের দুই ভাগই পানি। তবে এত পানি থাকলেও পানযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই অল্প। এই পান যোগ্য পানির অন্যতম উৎস হচ্ছে ভুগর্ভস্থ পানি। বিশ্বের ৯৭ শতাংশ বিশুদ্ধ পানির উৎস এ ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু নানা কারণে দিন দিন এই ভুগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো এই পানি শেষ হয়ে যাবে। যদি সত্যি সত্যি এই পানি শেষ হয়ে যায়, তাহলে কি হবে? ভুগর্ভস্থ পানি নিঃশেষ হয়ে গেলে আমাদের কি ক্ষতি হবে? পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতে তার প্রয়োজনীয়তাই বা কতটুকু!

 

ভূগর্ভস্থ পানি বলতে বোঝানো হয় মাটির নিচে অবস্থিত পানিকে। বৃষ্টির পানি মাটির স্তর ভেদ করে পাথর ও শিলাখণ্ডের মাঝে জমা হয়ে থাকে ভূগর্ভস্থ পানি হিসেবে। এ ভূগর্ভস্থ পানি আমরা কুয়া বা পাম্পের সাহায্যে উত্তোলন করে ব্যবহার করি। কেবল দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজেই নয়, ভূগর্ভস্থ পানির ২৫ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যবহার করা হয়। এতেই বুঝা যায় এই পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

 

বর্তমানে বিশ্বে সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে ৭৬ কোটিরও বেশি মানুষ। বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ৭০০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে পড়বে। এখনই বিশ্বে প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ পানি পায় না অথবা তাদের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছায় না। সুপেয় পানির সুযোগ বঞ্চিত জনসংখ্যার দিক থেকে বাংদেশের অবস্থান সপ্তম। এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশ মানুষ খাওয়ার জন্য নিরাপদ পানি পায় না। আবার বাংলাদেশের প্রায় ১৩০০ নদীর মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া ২১২টি নদীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসবই মূলত ভুগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ার ফল।

 

অন্যদিকে বিশ্বে সেচের জন্য ৪০ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে ব্যবহার করা হলেও বাংলাদেশে ব্যবহূত হয় ৬০-৭০ শতাংশ। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বড় বড় নগরীগুলো বিশুদ্ধ পানির জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু আশঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশে দখল-দূষণে নদী, খাল, বিল ধ্বংস করা ও পানির অপব্যবহারের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে আশঙ্কাজনক হারে। জাতিসংঘের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা দেশের তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১০টি দেশ স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামলে কমবে সুপেয় পানির উৎস। কৃষি ও শিল্পখাত পড়বে মহা সমস্যায়। আশঙ্কা আছে বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগেরও।

 

মূলত অতিরিক্ত ব্যবহার এবং ভুল পরিকল্পনার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ কমছে। কারণ যে হারে ভূগর্ভ থেকে পানি তোলা হচ্ছে; সে হারে যদি পানি রিচার্জ না হয় তাহলে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন বাঁধের মাধ্যমে পানি সরিয়ে ফেলায় পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যাতে জলাশয়গুলো হারিয়ে না যায়। নদী দখলমুক্ত হয়, সীমানা পিলার, ওয়াকওয়ে নির্মাণের নামে নদীর স্বকীয়তা নষ্ট না করা হয়।

 

পরিবেশবিদরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় প্রথম যে বিপদ দেখা দেবে তা হলো-চরম পানি সংকট। পানি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভে থাকা টেকটনিক প্লেটের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হলে ভূমি দেবে যাওয়া আশঙ্কা তৈরি হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে নদী-নালা শুকিয়েও যাবে। এমনকি দেশ পুরো মরুকরণের দিকে চলে যেতে পারে। এতে হারিয়ে যাবে অনেক প্রাণী। মূলত কোনো এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি না থাকা মানে সেই এলাকাটাই ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

 

গবেষকরা বলছেন, প্রতি বছর পানির স্তর ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। গত ৫০ বছরে পানির স্তর এভাবে নেমে গেছে প্রায় ৭০ মিটার। এর জন্য মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই সঙ্কট মোকাবেলায় মাটির উপরিভাগের পানির ব্যবহার বাড়ানোর দাবি তাদের।

আলোচিত

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Click to Call Call Now

সর্বশেষ