বার্মা সীমান্তে (বর্তমানে মায়ানমার) ছিল ১০ নং সেক্টর এর অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশটির সরকার বাংলাদেশকে সহযোগিতা না করায় এ সেক্টরটির কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় নি। পরে ১০ নম্বর সেক্টরকে একটি বিশেষ সেক্টর হিসেবে সংগঠিত করা হয়। ভৌগোলিক সীমারেখাবিহীন এ সেক্টরটি বাংলাদেশ ফোর্সেস সদর দপ্তর কর্তৃক বিশেষভাবে প্রণীত রণকৌশল বাস্তবায়ন করতে প্রধান সেনাপতি নিজেই এ সেক্টরের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ সেক্টরের অধীনে বিশেষ নৌ-কমান্ডো এবং প্রধান সেনাপতির বিশেষ দল গঠন করা হয়। দেশের নদীনালা, খালবিল ও সমুদ্র উপকূল ছিল এদের অপারেশন এলাকা। এ সেক্টরে ছিল বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নাবিক ও ফ্রগম্যান।
জুন মাসে বিভিন্ন যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এদের সংগ্রহ করে ভারতীয় নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মুর্শিদাবাদের পলাশির প্রান্তরে ভাগীরথী নদীতে এসকল যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর নৌ-বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মার্টিস ও লেফটেন্যান্ট দাসের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাত্র ২ মাসের মধ্যে এ এসকল তরুণ গ্রাম্য ছেলেরা দক্ষ ফ্রগম্যান হয়ে বেরিয়ে আসেন। ফ্রান্সে প্রশিক্ষণরত পাকিস্তান নৌবাহিনীর আট জন বাঙালি নৌ-কর্মকর্তার উদ্যোগে নৌ-কমান্ডো বাহিনী নিয়ে গঠিত হয় এই বাহিনী। তারা হলেন-
-গাজী মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ (চীফ পেটি অফিসার)
-সৈয়দ মোশাররফ হোসেন (পেটি অফিসার)
-আমিন উল্লাহ শেখ (পেটি অফিসার)
-আহসান উল্লাহ (এম. ই-১)
-এ.ডব্লিউ.চৌধুরী (আর.ও-১)
-বদিউল আলম (এম. ই-১)
-এ.আর মিয়া (ই.এন-১) এবং
-আবেদুর রহমান (স্টুয়ার্ড-১)
দিল্লির পার্শ্ববর্তী যমুনা নদীতে এই আটজন বাঙালি নাবিককে ভারতীয় নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নৌ-প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান নৌবাহিনীর কিছুসংখ্যক নৌ-সেনা তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন। বিভিন্ন সেক্টর থেকে এমন ১৫০ জন ছাত্র ভলান্টিয়ারকে বাছাই করা হয়। মূলত যারা দক্ষ সাতারু হিসেবে পরিচিত এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য এই ক্যাম্পে পাঠানো হয়। তাদের লিম্পেট মাইন ব্যবহারের কৌশল ও বোমা নিক্ষেপ এবং জাহাজ ধ্বংসের জন্য শিক্ষা দেয়া হয়। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে এদের চারটি দল চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি ও মংলা বন্দরে পাঠানো হয় প্রশিক্ষণ শেষে। তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল উপকূলে নোঙ্গর করা জাহাজ ধ্বংস করা। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে এই চারটি দল একযোগে আক্রমণ চালিয়ে বেশ কিছুসংখ্যক পাকিস্তানি জাহাজ ধ্বংস করে। চট্টগ্রাম বন্দরে এ ডব্লিউ চৌধুরীর নেতৃত্বে নিয়োজিত দলটি পাকিস্তানি কার্গো জাহাজ এমডি ওহ্রমাজ্দ ও এমভি আল-আববাস সহ সাতটি জাহাজ ধ্বংস করে। এবং পরে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে দেশের সকল বন্দরে অনুরূপ আরো কয়েকটি অপারেশন চালানো হয় এবং বেশ কিছুসংখ্যক সমুদ্রগামী ও উপকূলীয় জাহাজ বন্দরে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এম.এন সুমন্ত ভারতীয় কমান্ডার এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।