মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩

রোহিঙ্গা সমস্যার শেষ কোথায়?

‘অবাক হয়ে ভাবি।

রোহিঙ্গাদের কতটাই ছিলো এমন দাবি।

একটি ভিটে, একটি ঘর, একটি সংসার।

তীব্র ঝড়ের আঘাতে তা হয়ে গেলো ছারখার।

মানবতা আজ নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত।‘

- Advertisement -

 

কবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কন্ঠে এভাবেই প্রকাশ পেয়েছে রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠীর নিপীড়ন, শোষণ,অত্যাচার।

 

২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ২৫ তারিখের এক গভীর রাতের কথা। বাংলাদেশের অঞ্চলের পাহাড় সাগর পথ দিয়ে রোহিঙ্গারা আসতে থাকে দলে দলে, সেই রাতে মিয়ানমার আর্মি তাদের উপর চালিয়েছিলো গণহত্যা,শুধু সেই রাতেই ঘর ছাড়া করেছিলো ৬,৫৫,০০০ থেকে ৭,০০,০০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে। ২৫ আগস্ট ২০১৭ “নিধন কার্যক্রম” শুরু হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা ২৪,০০০ এরও বেশি রোহিঙ্গা নিহত হয়েছিল। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে সব মিলিয়ে অন্তত ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। আর সে তালিকায় প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে নতুন জন্ম নেওয়া ৩০ হাজার রোহিঙ্গা।

 

কিন্তু তাদের বাংলাদেশে এই প্রত্যাবর্তন আমাদের দেশের জন্যও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।প্রায় ১৭ কোটির এই দেশে আমরা আমাদের জনগণ কেই জায়গা দিতে পারছি না। তার সাথে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীগুলোর বাসস্থান প্রদান।

 

বর্তমানে ক্রমবর্ধমান রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভার বহন করা বাংলাদেশের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। রোহিঙ্গারা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা, পরিবেশ সুরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে দ্বন্দ্বসহ নানা সংকটের কারণ হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটের দুটি সমাধান –

 

১. সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন, 

- YouTube -

 

২. তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তর।

 

গত এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলায় মিয়ানমারকে তাদের যুক্তি পেশ করতে হয়েছে। যুক্তিতর্কে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার একটা বিশদ ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে। এই যুক্তি-তর্ক বেশ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ফলে নামমাত্র এই প্রত্যাবাসন আইসিজের কাছে সংকট সমাধানে মিয়ানমার আন্তরিকতা প্রমাণের একটি কৌশল হতে পারে।

 

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হলো আমাদের জন্য রোহিঙ্গা বোঝা ক্রমেই যেন ভারী হচ্ছে। রীতিমতো অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তবে সরকার বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েও তাদের নিজ দেশে পাঠাতে পারছে না। রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মানবিক কারণ ও সরল বিশ্বাসে সেই আশ্রয় দেওয়াটা যেন এখন ক্রমেই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য।

 

ইদানীং রোহিঙ্গারা শরণার্থী ক্যাম্পের নিয়মের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বসতি স্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, তাদের অবাধ বিচরণের কারণে স্থানীয় শ্রমবাজারে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ বাড়ছে।

 

এখন প্রশ্ন হলো, এভাবে কত দিন আমাদের জন্য বোঝা হয়ে থাকবে রোহিঙ্গারা?

 

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশীদেরও হত্যা করেছে। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবাসনের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ এবং শক্তিশালী দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সেদিকে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ মেয়াদে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে থমকে যাবে এই প্রক্রিয়াটি। রোহিঙ্গা ইস্যু নিষ্পত্তি করতে হলে মিয়ানমারকে সর্বোচ্চ চাপে রাখতে হবে।তবে সরকার রোহিঙ্গাদের নতুন আবাসনের জন্য ভাসানচরে জায়গা ঠিক করেছিলো। কিন্তু সেটি স্থায়ি সমাধান নয় । বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করতে হয়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

 

মায়ানমার একটি ASEAN সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, ২০২১ সালে অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকার উৎখাত হওয়ার পর থেকে জান্তাকে কোনো ASEAN সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেই অভ্যুত্থানের ফলে সমগ্র মায়ানমারে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। “পাঁচ দফা ঐকমত্য” নামে পরিচিত মিয়ানমারের জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনাও আসিয়ান দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা এ বিষয়ে কিছুই করছে না।

 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মিয়ানমার সংকটের একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।এখন দেখার বিষয় সরকারের এই রোহিঙ্গা বিষয়ে স্থায়ি সমাধানে আসতে আর কতো দিন লাগবে!

 

এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি আরকাইভ অনলাইন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।

- Advertisement -

কমেন্ট করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

  • সাবস্ক্রাইব করুন তথ্যবহুল সত্য খবরের জন্য 

    You are our valued subscriber. We send weekly newsletter. NO SPAM

আরও পড়ুন

আসছে আইফোন ১৫ ! কি কি থাকছে?

“যেকোন কিছু হতে পারে কারণ স্মার্টফোনে বিপ্লব এখনও প্রাথমিক...

আমরা কতুটুকু নারীবাদী?

বাঙালি পুরুষের পক্ষে নারীবাদী হয়ে ওঠা খুব কঠিন ও...

ভারত-কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক কোনদিকে যাচ্ছে?

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন যে , পৃথক...

সকল রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে কার গাড়িটি শক্তিশালী?

লেখাপড়া করে যে,গাড়ি-ঘোড়ায় চরে সে !   আমার স্বপ্নের গাড়িটি হতে...

জাফর ইকবাল : কেন কিশোর পাঠকের প্রথম পছন্দ?

আমার বন্ধু রাশেদ থেকে শুরু করে দীপু নাম্বার টু...

ট্রয় নগরী ধ্বংস : ইতিহাস নাকি কাব্য 

ট্রয় নগরী, অবস্থিত ছিল প্রাচীন এশিয়ার মাইনরে, যা বর্তমানে...

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রসওয়ে উদ্বোধন করা...

লিভারের চর্বি কমাবেন কিভাবে?

চিকেন ফ্রাই, বার্গার,পাস্তা বা পোলাও,কোরমা,রোস্ট,বিরিয়ানি?   কার ভালো লাগে না এসব...