বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এবং সুরকার শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। তিনি মাইলস ব্যান্ডের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি মাইলসের বেজ গিটারিস্ট এবং প্রধান গায়ক ছিলেন।
ব্যান্ডের বাইরে তিনি সলো ক্যারিয়ারেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। এ ছাড়াও বেশকিছু সলো কিংবা মিক্সড অ্যালবামে তার অসংখ্য জনপ্রিয় গান রয়েছে।
শাফিন আহমেদের মা সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সুরকার কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোট বেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন।
বাবার কাছে মাঝে মাঝে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিখেছেন আর মার কাছে শিখেছেন নজরুলগীতি। এর পর বড়ভাই হামিন আহমেদ সহ ইংল্যান্ডে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ড সঙ্গীত শুরু করেন এবং মাইলস ব্যান্ড গড়ে তোলেন, যা পরবর্তিতে বাংলাদেশের অগ্রগামী ব্যান্ডদলসমুহের মধ্যে অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
তিনি সেইসময় বিটিভিতে মাইলসকে নিয়ে করা অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন।
১৯৭৯ সালে মাইলসে বেজ গিটারিস্ট ও প্রধান গায়ক হিসেবে যোগ দেন শাফিন। শুরু দিকে ব্যান্ডে শুধু ইংরেজি গান করতেন। ১৯৯১ সালে ‘প্রতিশ্রুতি’ অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা গানে তাদের পথ চলে শুরু হয়।
এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান তার কণ্ঠে সৃষ্টি। শাফিন আহমেদের জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে আজ জন্মদিন তোমার, চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ফিরিয়ে দাও প্রভৃতি।
২০১০ সালের শুরুর দিকে একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ান শাফিন। কয়েকমাস পর ফের ব্যান্ডে ফেরেন।
এর পর ২০১৭ সালে অক্টোবরেও তিনি আবার মাইলস ছেড়ে দেন। এর কয়েকমাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে আবারও ব্যান্ডে ফিরেছিলেন। ২০২১ সালের নভেম্বরে সর্বশেষ তথা তৃতীয়বার মাইলস ছাড়েন তিনি।
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি ব্যক্তিগত কারণে মাইলস ত্যাগ করে রিদম অব লাইফ নামে নতুন একটি ব্যান্ডদল প্রতিষ্ঠা করেন শাফিন। এই দলে তার সাথে যোগ দেন ওয়াসিউন (গীটার), শাহিন (গীটার), সুমন (কি-বোর্ড), উজ্জ্বল (পার্কিশন), শামস (বেজ গিটার) এবং রূমি (ড্রামস)।
শাফিন তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকে মাইলস থেকে বেরিয়ে এসে ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামে ব্যান্ড গঠন করে কনসার্ট করে আসছিলেন।
রাজনীতিতেও নাম লিখিয়ে ছিলেন শাফিন। ২০১৭ সালে ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের সদস্য হিসেবে মনোনীত হোন।
২০১৯ সালে জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু, ঋণখেলাপির অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে।
২০২১ সালে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।
২০২৪ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকদের বরাতে জানা গেছে, শাফিন আহমেদের বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়। সেইসাথে তিনি কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন।
শাফিন আহমেদের এর আগেও দুটো হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তার পেসমেকার বসানো হয়েছিল।
তৃতীয় অ্যাটাকটি হলে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে তার হৃদপিণ্ডে স্টেন্ট বসানো হয়। একই সঙ্গে তার কিডনি জটিলতা থাকায় ডায়ালাইসিসও চলছিল।
তবে অক্সিজেন স্যাচুরেশনও কমে আসতে থাকায় তার শরীরের প্রত্যঙ্গগুলো একে একে অকার্যকর হতে শুরু করে।
এভাবে পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।