মংসুইপ্রু চৌধুরীর কাহিনি যেন কোনো রূপকথার গল্প। মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে, শূন্য থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই ব্যক্তি একসময় সাধারণ পরিবারের একজন ছিলেন। বর্তমানে তার রয়েছে হাজার বিঘা জমি, অর্ধশতাধিক গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি, এবং বিশাল একটি লেক। কিন্তু একসময় তার আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ।
মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, রাজকীয় জীবনে পা রাখেন দুর্নীতির মাধ্যমে। স্থানীয় সাবেক সংসদ-সদস্য ও তার চাচাশ্বশুর কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার প্রভাব ব্যবহার করে তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাট, টেন্ডারবাজি, এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
মংসুইপ্রুর দুর্নীতির ইতিহাস শুরু হয় ২০১৫ সালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর। কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার মেয়েকে বিয়ে করার পর মংসুইপ্রু আরও প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদও পান। তার নিয়োগ বাণিজ্য এবং টেন্ডার দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন তিনি। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে ২০২১ সালে জেলা কৃষি অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম করেন তিনি। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ নেন।
মংসুইপ্রুর রয়েছে মেসার্স মং কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া সরকারি টেন্ডার দুর্নীতি, ফাঁকিবাজি করে প্রকল্পের অর্থ লুটপাট, এবং ভুয়া বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।
তিনি খাগড়াছড়ির পানছড়ি কাঁঠালমনিপাড়ায় ১২৫০ বিঘা জমির একটি আমবাগানের মালিক। এছাড়া খাগড়াছড়ি শহরে বিলাসবহুল বাড়ি, বিভিন্ন জায়গায় ইটভাটা এবং মায়াবিনি লেক নামে একটি বিশাল লেক গড়ে তুলেছেন। তার গাড়ির সংখ্যা অর্ধশতাধিক, যেগুলোর বাজারমূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মংসুইপ্রুও পাহাড়সমান সম্পদ ফেলে আত্মগোপনে রয়েছেন।