প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বে দেওয়া রায় নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উদাহরণ দিয়েছেন। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কদিন আগেই এক রায়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত রায়ের শুরুই হয়েছে ‘গডফাদার’ উপন্যাসের কথা দিয়ে, নওয়াজ শরিফকে তুলনা করা হয়েছে ‘গডফাদার’ এর সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি যেহেতু পাকিস্তান প্রসঙ্গ এনেছেন, তাই ওই রায়ের সূত্র ধরেই প্রশ্ন জাগে, প্রধান বিচারপতির ‘গডফাদার’ কে? অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধান বিচারপতির পেশাগত গুরু হলেন, ড. কামাল হোসেন। তাঁর ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হলেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সিলেট থেকে ঢাকায় এসে বিচারপতি সিনহা বিশিষ্ট আইনজীবী সবিতা রঞ্জন পালের চেম্বারে কাজ শুরু করেন। তাঁকে হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের কাছে সুপারিশ করেন ড. কামাল হোসেন।
ওয়ান ইলেভেনের সময় যখন দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে বিচারপতি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখনো তাঁকে বাঁচান ড. কামাল হোসেন। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে বিচার বিভাগে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে। সেই শুদ্ধি অভিযানে দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এদের এক এক করে অপসারণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়।
বিচারপতি সিনহাকেও চায়ের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল বঙ্গভবনে। কিন্তু তিনি পালিয়ে বাঁচেন। এ সময় ড. কামাল হোসেনের হস্তক্ষেপে তিনি বেঁচে যান। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের ব্যাপারে ড. কামাল হোসেনের ভূমিকাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রায়ে বিচারপতি সিনহা ড. কামাল হোসেনের উপস্থাপনা থেকেই বেশিটা অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই রায় থেকে একটি শব্দও বাদ দেওয়া অসম্ভব, তাঁর এই মন্তব্যের পর নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রায় পরিমার্জন করা যাবে কিনা, এ নিয়ে ড. কামাল কথা বলার কে? এ প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন মহল।শুধু এই রায় নয়, ড. কামাল আপিল বিভাগে আলাদা খাতির পান। এইতো ক’দিন আগেই প্রকাশ্য এজলাসে ড. কামাল হোসেন অ্যাটর্নি জেনারেলকে ‘বাস্টার্ড’ বলে গালি দিলেন। অথচ আপিল বিভাগ এরকম ‘অসদাচরণ” আমলে নিলো না।
গত ২৪ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন রায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ।সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে, বর্তমান সংসদের ১৫৪ জন এমপির বিনা নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদন খারিজ হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে করা ওই রিট দিয়ে ড. কামাল হোসেন ছুটির পরই আপিল বিভাগে যাবেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে ড. কামালের আবেদনের ভিত্তি হবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে দেওয়া আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ। আপিল বিভাগ যদি রায় দেয়, সংসদ সদস্যরা অবৈধ তাহলে শুধু এই সংসদ নয়, গণতন্ত্র ও বিপন্ন হবে। সেজনই কি এ আয়োজন? ড. কামাল কি প্রধান বিচারপতির ঘাড়ে বন্দুক রেখে গুলি করতে চাইছেন গণতন্ত্রকে? বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি একাধিকবার শপথ ভঙ্গ করেছেন। প ধান বিচারকের আসন থেকে তাকে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। এটি না হলে তার মেয়াদের আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে আরো বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি তো শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, তার আর প্রধান বিচারপতি থাকার কোনো যোগ্যতাই নেই, এখতিয়ারই নেই। তিনি নিজে বিচারকের চেয়ারে বসে বলেছেন যে আমি দিনেরবেলা শাস্তি পিস কমিটির সদস্য ছিলাম তবে রাত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছি। এটা তো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। এটি তো মুনাফেকি। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শীর্ষক ওই আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে সভায় সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা বলেন, অনেক পলিটিক্স করেছেন। কোনো জজ কোনো পলিটিক্যাল ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। আপনি কোন আইনে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করলেন? তাহলে আপনি ফখরুলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি আরো বলেন, আপনি বিচারকের আসন বিতর্কিত করবেন না। আজকে যে ভাষায় আপনার সমালোচনা হচ্ছে, তাতে আমাদেরও লজ্জা লাগছে। আপনি বিচার বিভাগকে মাফ করেন।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রায়ে যে অবজারভেশনগুলো লিখেছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত মত। অন্য বিচারপতিরা একমত হননি। এই অবজারভেশনগুলোর ৯০ ভাগই এই মামলার যে বিষয়বস্তু তা থেকে শত শত মাইল দূরে। এ রায়ের অবজারভেশন পড়ে বারবার মনে হয়েছে এগুলো কি কোনো আইনজ্ঞের লেখা, নাকি এমন কোনো ব্যক্তির লেখা, যিনি আইনজ্ঞ নন; কিন্তু ইংরেজিতে খুব ভালো। এই প্রশ্নটি কিন্তু আজ এসে গেছে। তিনি বলেন, এই ধরনের অবজারভেশন দিয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্ট ও জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, যার পরিণতি অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী হতে বাধ্য। আজ তিনি যে জঘন্য কথাগুলো বলেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য কথাগুলো হলো, এই দেশটা বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে স্বাধীন হয়নি। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনি আরো অত্যন্ত জঘন্য কথা বলেছেন, আমাদের পার্লামেন্ট নাকি অকেজো, অর্থাৎ ডিসফাংশনাল। পার্লামেন্ট যদি ডিসফাংশনাল হয় গত তিন মাস আগে তার যে বেতন বাড়ল, তা কোন পার্লামেন্ট বাড়াল?
একটি দৈনিক পত্রিকার নাম উল্লেখ করে সেই পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে আপিল বিভাগের এই সাবেক বিচারপতি বলেন, হাইকোর্ট এলাকায় আইএসআই গোয়েন্দার লোক হিসেবে পরিচিত একজন ব্যক্তি এই রায় দিতে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই যে একটি শক্তিকে, দেশবিরোধী চক্রকে যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না তাদের ক্ষমতায় আনার জন্য, একটি অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার জন্য তিনি যে কাজ করেছেন, শপথ ভঙ্গ করেছেন, এ জন্য এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয় মন্ত্রী আছেন তার মাধ্যমে আমরা দাবি করব তার যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা মহামান্য রাষ্ট্রপতি করেন।
শামসুদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, সেদিন যদি গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালাময়ী বক্তৃতা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক না দিতেন। তাহলে মীর কাসেম আলীর ফাঁসি হতো না, আপনারা এখন নিশ্চিত থাকতে পারেন। কারণ মীর কাসেম আলীর সঙ্গে বিচারপতির সিনহার একটা ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার পর বিএনপি এখন চাচ্ছে এই পার্লামেন্টকে বাতিল করার। সুতরাং আরো পাঁচ মাস কিন্তু এই প্রধান বিচারপতি আছেন। এই পাঁচ মাসে তার থলে থেকে আর কী বের হবে, তা আমরা জানি না। আমরা শঙ্কিত। আমরা চাই, আর কোনো ক্ষতি যেন না করতে পারেন তার আগেই প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ চেয়ারে বসে আপনি যদি বঙ্গবন্ধুকে দেখতে না পান তাহলে বলতে হবে আপনার প্রভু আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান নাকি আপনার নেতা জিয়াউর রহমান, মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে তা আপনাকে বলতে হবে।
একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, বিচারপতি সিনহা যে রায় দিয়েছেন তার দু-একটি শব্দ এক্সপাঞ্জ করে সমস্যার সমাধান হবে না। যদি এই রায়কে আমরা বৈধতা দিই তাহলে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি এস। কে সিনহার বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন সাবেক এই বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত না এমন অনেক কথা তিনি অবজারভেশনে বলেছেন, প্রধান বিচারপতির কাজ রাজনীতি করা না। যে প্রধান বিচারপতি রাজনীতি করে সেটা তার অযোগ্যতা। ‘এসব করে তিনি অনেক ভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। শপথ ভঙ্গ করেছেন, তার আর এই পদে থাকার কোনো অধিকার নাই তাঁকে অবশ্যই এই পদ ছেড়ে চলে যেতে হবে, বলেন বিচারপতি মানিক। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের লেখা দাবি করে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, ‘এই ষোড়শ সংশোধনীতে তাঁর লেখা রায় পড়লে আপনারা দেখতে পাবেন অনেক শব্দ আছে যেসব শব্দ তাঁর লেখা আগের কোনো রায়ে নাই। অর্থাৎ এত পরিষ্কার এই লেখা রায় তার লেখা নয়। অন্য কেউ লিখে দিয়েছে, সম্ভবত পাকিস্তানি কোনো আইএসআই লিখে দিয়েছে।
২৫ দিনে ৪০০ পৃষ্ঠার রায় কোনো ভাবেই দেখা কর মানিক বলেন, ‘উনি মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে ৪০০ পৃষ্ঠার কথা লিখেছেন, যেট (অসম্ভব), যেটা হতে পারে না। এটা তাঁর লেখা যায় মোট সময় প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে এই বিচারপতি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, তুমি শুধু প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়বা না, এই দেশ ছাড়তে হবে। এ দেশে থাকার কোনো অধিকার তোমার নাই। তুমি যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব স্বীকার করো না যেটা বিশ্ববাসী স্বীকার করে।
অবকাশের পর প্রধান বিচারপতিকে আর আদালতে বসতে না দেয়ার দাবি / জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, ‘তার (প্রধান বিচারপতি) কাছে দুটি জিনিস রয়েছে এই মুহূর্তে। একটি হল ত্রয়োদশ সংশোধনী, আরেকটি ১৫৪ জন এমপি, যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এটা কিন্তু সম্পূর্ণ বৈধ, সাংবিধানিকভাবে বৈধ। কেউ যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে, তাহলে এ নিয়ম আছে। ড. কামাল হোসেনও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এটা চ্যালেঞ্জ করা হলে হাইকোর্ট নস্যাৎ (বাতিল) করে দিয়েছেন। সেটা নাকি এখন তার আদালতে আছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, তিনি ছুটির (অবকাশ) পর আদালতে বসে এ দুটি বিষয় তুলে নেবেন। তার বিরাট পরিকল্পনা আছে এবং তার পেছনে বিরাট অপশক্তি আছে। সুতরাং সবাই শঙ্কিত এবং আমাদের দাবি, তাকে যেন আর (আদালতে) বসতে না দেয়া হয়।
মঙ্গলবার রাজধানীর ইন্সটিটিউট অব ডিপেন্ডামা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণসভা ও চলমান রাজনীতি বিষয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু একাডেমি এবং সম্মিলিত তরুণ পেশাজীবী পরিষদ যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিচারপতি মানিক বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা যে রায় এবং অবজারভেশন দিয়েছেন, তা আগেই লেখা ছিল। কারণ ১৩ জুলাই তিনি রায় দেন। এরপর রায়ের ওপর তিনি ৪০০ পৃষ্ঠার অবজারভেশন দিয়ে তা পূর্ণাঙ্গরূপে ১ আগস্ট প্রকাশ করেন। এ সময়ে তিনি আদালতের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ সব কাজ করে মাত্র ১৭ দিনে ৪০০ পৃষ্ঠার অবজারভেশন লেখা এক প্রকার অসম্ভব।
তাছাড়া আদালতের নিয়মানুযায়ী, প্রকাশের আগে রায় এবং অবজারভেশন অন্য বিচারকদের পড়তে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ৬ জন বিচারক যদি এটি পড়ার জন্য ৫ দিন করে সময় নেন, তাহলে অদ্ভুত ৩০ দিন প্রয়োজন । এসব বিষয় থেকে প্রমাণ হয়, রায় আগেই লেখা ছিল। তার এ বিশাল অবজারভেশনের ভেতর আইনের কোনো বিষয় নেই, পুরোটাই রাজনৈতিক ।সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় হল- কোনো একক ব্যক্তির অধীনে দেশ স্বাধীন হতে পারে না। তিনি আরও অনেক আপত্তিকর কথা সেখানে বলেছেন, গত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। নারী সংসদ সদস্যদের অনির্বাচিত বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সর্বোপরি তিনি এ সমাজকে পঙ্গু বলেছেন।
এসব লিখে তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারকে হেয় করেছেন। তার পেছনে অনেক দেশি-বিদেশি শক্তি কাজ করছে। সাবেক এ বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এসকে সিনহা গর্জে উঠলেন। ছিলেন বিড়াল, হয়ে উঠলেন সিংহ। তিনি নিয়মিত রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন। একজন দুর্নীতিবাজ বিচারপতিকে বাঁচাতে তিনি মুনকে চিঠি দিলেন, যে বিচারপতি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে ওই স্থানের মাটির ঘ্রাণ নিয়ে বলেছিলেন, এটা ভারতের কাজ। প্রধান বিচার এটা পারে না। এটাও একটি অপরাধ। তিনি নিজেও দুর্নীতিবাজ। তার দুর্নীতির খবর এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে আরো হবে। ১৫ আগস্টের নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যা সঙ্গে জীবিতদের বিচার হয়েছে। আইনপ্রণেতাদের কাছে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মরণোত্তর বিচার করতে আইন প্রণয়ন করু হত্যাকাণ্ডের বিচারে তিনি নিজে জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন। দেখা যায়।
কর্নেল ফারুক ও রশীদ যখন জিয়াকে বলেছে শেখ মুজিবকে আমরা হত্যা করতে যাচ্ছি, জিয়া তাদের বলেছিলেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অ উপসেনাপ্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব ছিল তাদের থামানো এবং মিলিটারি পুলিশ বিষয়টি আনানো। সাবেক সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহ আদালতে বলেছিলেন, ওইদিন সকালে সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে যখন সভা করা হয়, তখন সবাই অপ্রস্তুত ছিল। শুধু জিয়াই সেভ করে পোশাক পরে এসেছিলেন। অর্থাৎ তিনি বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। এছাড়া জিয়ার খনিষ্ঠ মওদুদ আহমদও তার বইয়ে লিখেছেন, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ি কখনও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না উল্লেখ করে বিচারপতি শামসুদ্দিন বলেন, জিয়া ছিে পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনীর এজেন্ট। তার সঙ্গে আরেকজন ছিলেন, তিনি খন্দকার মোশতাক। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরতরে ধ্বংস করা।শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করা হয়। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারছে দেশ এতদিনে পাকিস্তান হয়ে যেত। তিনি বলেন, একটি দেশি-বিদেশি চক মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই, জিয়া ও মোশতাকের সহায়তায় তারা ষড়যন্ত্র করেছে। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় তারা স্বাধীনতার শ্লোগান ‘জয় বাংলা’কে বন্ধ করে দিয়েছে। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়েছেন, যেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে, সেই ইতিহাস মুছে ফেলতে যেখানে শিশুপার্ক করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। তারেক রহমান আগে হাওয়া ভবন থেকে ষড়যন্ত্র করতেন। এখন যুক্তরাজ্যের কিংস্টন এলাকায় প্রাসাদতুল্য বাড়িতে আরাম-আয়েশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সরকার পতন হবে না। এটা বাংলাদেশ, পাকিস্তান না। কোনো জেনারেল, বিচারপতি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারবে না। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ২১ আগস্ট যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা একই গোষ্ঠীর কাজ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এগুলো করা হয়েছে। হত্যাকারীরা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু আরও বেশি শক্তিশালী। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ মাস্টারমাইন্ড হল মুসতাক ও জিয়া। তাদের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানান তিনি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের অবজারভেশনে প্রধান বিচারপতি যা বলেছেন, তা অনভিপ্রেত। তারা বড় বড় কথা বলে জাতিকে বিভ্রাড় করতে চান। তিনি বলেন, আজ যারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে মনে করেন, তারা সামরিক সরকারের তত্ত্বাবধানে নেতা হয়েছেন। তারাই ২১ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এতবড় হত্যাকাণ্ডের পর বলেছেন, এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। তিনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, দেশের বন্যার্ত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর রোহিঙ্গাদের জন্য মায়াকান্না কাঁদছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও ২১ আগস্টের বোমা হামলা দলের ভেতরের ও বাইরের শক্তি একজোট হয়ে করেছে। যতবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, ততবারই বাইরের শক্তির সঙ্গে দলের ভেতরের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, নেতারা বিক্রি হয়ে যায়, কিন্তু দলের সাধারণ কর্মীরা কখনও বিক্রি হয় না। তারা তাদের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দেয় না । ব্যারিস্টার জাকির আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব শাহজাহান আলী সাজু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন রুহুল, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজা প্রমুখ।
শোক দিবসের এই আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদও বক্তব্য দেন। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অসম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সরকার, এমনটা প্রমাণ করতে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ এক বিচারককে বাঁচানোর জন্য তিনি দুদকে চিঠি দিয়েছেন। দুর্নীতি যে করে এবং যে প্রশ্রয় দেয় উভয়ে সমান অপরাধী। এটা দুদকের ৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী তিনিও সেই অপরাধ করেছেন। বিএনপি প্রধান বিচারপতির ঘাড়ে বসে রাজনীতি করছে বলে দাবি করেছেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘তেল-গ্যাস আন্দোলনের ঘাড়ে বসে বিএনপি রাজনীতি করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখন বিএনপি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ঘাড়ে বসে রাজনীতি করছে।
ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এটাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাতের অপতৎপরতা হিসেবে দেখছেন তারা। এই জাতীয় অপতৎপরতা কখনো সফল হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। বুধবার রাতে চারু শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি করেন তাঁরা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ড. অনুপম সেন, অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, ড. হারুন অর রশিদ, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, ড. নিম ভৌমিক, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবেদ খান, ড. আনোয়ার হোসেন, ড. মিজানুর রহমান, সাংবাদিক রাহাত খান, সাংবাদিক গোলাম সারোয়ার, মঞ্চসারথি আতাউর রহমান, শাহরিয়ার কবির, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, রাষ্ট্রদূত ওলিউর রহমান, ড. দুর্গাদাস ভট্টাচার্য, ড. আতিউর রহমান, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শিল্পী হাসেম খান, শিল্পী রফিকুন্নবী (রণবী), নায়ক ফারুক, নায়ক এম এ আলমগীর, অধ্যাপক নিসার হোসেন, অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক শফিকুর রহমান, সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন, শিল্পী মো. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, গোলাম কুদ্দুস। বিবৃতিটিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সাম্প্রতিক সময়ে প্রদত্ত ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে কিছু অপ্রাসঙ্গিক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।
ফলে একটি অনভিপ্রেত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে আইনসম্মত, গণতান্ত্রিক সরকারকে প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে আমরা আরও উদ্বিগ্নবোধ করছি।’ তারা বলেন, ‘রায়ের পরে রায়কে কেন্দ্র করে অত্যন্ত সুকৌশলে নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে একটি অচলাবস্থা তৈরির অপপ্রয়াসও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল বিষয়টি নিয়ে অতি উৎসাহী তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। এতে মনে হয় পরিকল্পিতভাবে দেশে একটি কৃত্রিম রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির অপচেষ্টাও হচ্ছে।’ বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘আরও উদ্বেগের বিষয় কেউ কেউ বিবৃতি দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির এই অপপ্রয়াসকে প্রকারান্তরে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী নাগরিকবৃন্দ অত্যন্ত বিচলিত এবং উদ্বিগ্ন। আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই ধরনের অগণতান্ত্রিক অপচেষ্টা দেশের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না।’ তারা আরও বলেন, ‘তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান, এই অশুভ প্রক্রিয়া সম্পর্কে সজাগ থাকুন এবং ধৈর্য ধারণ করুন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার এই জাতীয় অপতৎপরতা কখনো সফল হতে পারে না।
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যকে অবৈধ ঘোষণা করার ফন্দি আঁটছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এই ঘোষণা দিতে পারলে সরকারকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে। আদালত প্রাঙ্গণের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, দুইদিন আগে এই বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন ড. কামাল হোসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ড. কামালের জামাতা ডেভিড বার্গম্যান। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৪ জন এমপির বিষয়ে আদালতে রিট করার জন্য ড. কামালকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ড. কামাল এই বিষয়ে শিগগিরই রিট আবেদন করবেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমান সংসদের ১৫৪ জন এমপির বিনা নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদন খারিজ হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে করা ওই রিট নিয়ে ড. কামাল হোসেন ছুটির পরই আপিল বিভাগে যাবেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে ড. কামালের আবেদনের ভিত্তি হবে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে দেওয়া আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ। আপিল বিভাগ যদি রায় দেয় সংসদ সদস্যরা অবৈধ তাহলে শুধু এই সংসদ নয়, সরকারও অবৈধ হবে। কা’কে কীভাবে ঘায়েল করতে হয় এবং কা’কে সরাসরি অথবা কা’কে কোন চ্যানেলে কিনতে হয়; জামায়াতিরা সব জানে ও নিয়মিত প্র্যাক্টিস করে। চীফ জাস্টিসের পেশাগত গুরু তথা গডফাদার ডঃ কামাল হোসেন; ফখরুদ্দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন বিচার বিভাগে শুদ্ধি অভিযান প্রক্রিয়া হিসেবে দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের তালিকা প্রণয়ন করে, তখন ডঃ কামালের হস্তক্ষেপে দুর্নীতিবাজদের ওই তালিকা থেকে বিচারপতি এসকে সিনহার নাম বাদ দেয়া হয়। এমনকি বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের নিকট এসকে সিনহার পক্ষে ডঃ কামাল সুপারিশ করেছিল। অতএব ডঃ কামালের নিকট চীফ জাস্টিস সাহেব সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে এবং এই কৃতজ্ঞতা দেখাতে তিনি কখনও ডঃ কামালের বিরুদ্ধে ‘কলম’ চালাবে না। তাইতো ষোড়শ সংশোধনী রায়ে বিচারপতি সিনহা ড. কামাল হোসেনের উপস্থাপনা থেকেই বেশিটা অংশ নিয়েছেন। সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এই রায় থেকে একটি শব্দও বাদ দেওয়া অসম্ভব, তাঁর এই মন্তব্যের পর নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পরিমাণ করা যাবে কিনা, এ নিয়ে ড. কামাল কথা বলার কে? এই রায়ের শব্দ গুলো কি ডঃ কামালের সাপ্লাই করা? এই রায়ের শব্দ গুলো কি আমায়তি টাকায় কেনা-বেচা হয়েছে? যুক্তি বলে, অসম্ভব কিছু নয় বরং রায়ের শব্দ গুলো জামায়াতি, টাকায় কেনা-বেচা হওয়া খুবই সম্ভব (ডঃ কামাল তার একমাত্র কন্যা দ্বারা খুবই প্রভাবিত। আইনজীবী ওই মেয়েও ডঃ কামালের চেম্বারের একজন অ্যাসোসিয়েটস এবং চেম্বারের ভবিষ্যত মালিক। তার ইহুদি বর ‘সাংঘাতিক’ ডেভিড বার্গম্যান জামায়াতি টাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত জামায়াতি লবিস্ট। আর কিছু মনে হয় বলার দরকার নাই। অতএব এই রায়ের পিছনে আছে জামায়ত-আইএসআই ষড়যন্ত্র from Dr Kamal chamber. ডঃ কামালের মেয়ে ও ইহুদি মেয়ে-জামাইয়ের সুবাদে তার চেম্বারের পুরো নিয়ন্ত্রণ এখন জামায়াতিদের হাতে। ওই জায়গায় থেকেই এখন আওয়ামী লীগ বিরোধী বিচার বিভাগীয় ষড়যন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে। ৭২-৭৫-এ ওরা জিয়াকে দিয়ে সেনাবাহিনী টার্গেট করে সফল হয়। এবার ওরা ডঃ কামালকে দিয়ে বিচার বিভাগ টার্গেট করেছে। অতএব সাধু সাবধান।
ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে / মাননীয় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থায় ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক বিশাল পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। রায়ের ২২৬ পৃষ্ঠা থেকে ২২৯ পৃষ্ঠায় তাঁর এই পর্যবেক্ষণ বিধৃত হয়েছে। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে বেশ কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যেমন, দেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি, রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণ, দুর্নীতি পরিস্থিতি, অকার্যকর সংসদ, স্বাস্থ্যখাতের অবনতি, জনপ্রতিষ্ঠান সমূহকে মেধাশূন্যকরণ, প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অপরাধের পরিবর্তিত ধরন, নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যর্থতা, নিয়ন্ত্রণবিহীন আমলাতন্ত্র, নির্বাহী বিভাগের উদ্ধত ও অদক্ষতা ইত্যাদি। তাহলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, তাঁর মতে,প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোনো কিছুই আশাব্যগ্রক নয়। তবে হ্যাঁ, ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে ২২৯ পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি লিখেছেন:
Even in this endless challenge, the judiciary is the only relatively independent organ of the State which is striving to keep its nose above the water through sinking.
অর্থাৎ তিনি লিখেছেন:
“সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝেও রাষ্ট্রের একমাত্র অপেক্ষাকৃত স্বাধীন অঙ্গ, বিচার বিভাগ, ডুবন্ত অবস্থায়ও নিজের নাক পানির ওপর ভাসিয়ে রাখবার লড়াই করে যাচ্ছে।” এই যে পানির ওপর নাক ভাসিয়ে আমাদের বিচার বিভাগ নিরন্তর লড়াই করে নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান সবার ওপরে রাখছেন, দুর্নীতি নিয়ে তার একটা সাম্প্রতিক প্রতিচ্ছবি দেখে আসা যাক।
মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে, ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তিনি অবসরে যান। আলোচিত এই বিচারপতি ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত বলে তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা গেছে। আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দেয় দুদক। জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে আমেরিকায় অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।
দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। যে কারও দুর্নীতির বিষয়ে তদস্ত করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে। দুদকের কাছে কোনো অভিযোগ এলে প্রথমে অভিযোগ অনুসন্ধান করা হয়।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এর জবাবে ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দুদকে পাঠায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
এই চিঠিতে বলা হয়, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেছেন। অনেক ফৌজদারি মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামির ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের দেওয়া রায় সকলের উপর বাধ্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তার দেওয়া রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে। সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনোরকম ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠি পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করেছে দুদক। চিঠিটি কমিশনের সভায় উপস্থাপন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এটির সঠিকতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিঠির সঠিকতা যাচাই করে তা আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট