সম্পাদকীয় নীতিমালা

সূচনা থেকেই শ্রেণি, বয়স, লিঙ্গ, সম্প্রদায় ও মতবিশ্বাস-নির্বিশেষে সবার তথ্য ও মতামতের চাহিদার প্রতি বিডি আর্কাইভ’ সজাগ থেকেছে। এর সম্পাদকীয় নীতির কেন্দ্রে রয়েছে উদার গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, আপামর মানুষের মঙ্গল ও উন্নয়ন এবং  মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবিচল দায়বদ্ধতা। নারী, শিশু, ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মমর্যাদা ও অধিকারে বিডি আর্কাইভ’ বিশ্বাসী। এর সাংবাদিকতার লক্ষ্য আপামর জনমানুষের সৃষ্টিশীল উদ্যোগের সহযোগিতা এবং ভবিষৎমুখী মঙ্গল ও উন্নয়ন।

১. পূর্ণ সত্য উদ্‌ঘাটনে ও পরিবেশনে আমরা সংকল্পবদ্ধ।

২. তথ্য পরিবেশনে আমরা বস্তুনিষ্ঠ, আপসহীন ও পক্ষপাতশূন্য।

৩. এ দেশের নাগরিকদের সৃষ্টিশীল উদ্যম এবং বর্তমান ও ভবিষৎ-মুখী উন্নয়নে   আমরা আস্থা রাখি।

৪. মানুষের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি আমরা সজাগ ও সংবেদনশীল।

৫. শ্রেণি, বয়স, লিঙ্গ, সম্প্রদায় ও মতবিশ্বাস-নির্বিশেষে সবার তথ্য ও মতামতের চাহিদার প্রতি আমরা সজাগ।

৬. একক বা গোষ্ঠীগতভাবে শিশু-কিশোরদের বিপন্নতা, অধিকারের লঙ্ঘন বা তাদের প্রতি অন্যায়ের ঘটনাকে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রতিবেদন, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয়কে সে বিষয়ে সচেতনতা, জনবিতর্ক ও জনমত তৈরিতে সক্রিয় থাকি।

৭. বয়স, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থা, ধর্মবিশ্বাস, নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বা প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদি কোনো কিছুর ভিত্তিতেই আমরা শিশু-কিশোরের প্রতি বৈষম্য করি না। আমাদের লেখা, ছবি, ভিডিও বা কার্টুন প্রকাশের সময় এ ব্যাপারে সচেতন থাকি। বরং বিপন্ন কোনো শিশু বা কিশোর কিংবা শিশু-কিশোর সম্প্রদায়ের প্রতি আমরা বিশেষ মনোযোগ দিই।

৮. লেখা, ছবি বা ভিডিওতে আমরা মাদক সেবন, নেশার অনুভূতি, আত্মহত্যার উপায়, বিস্ফোরক বানানোর পদ্ধতি–জাতীয় অপরাধমূলক ঘটনার বিশদ বিবরণ দেয়া থেকে বিরত থাকতে সচেষ্ট হবো। বরং শিশু-কিশোরদের এ-জাতীয় প্রবণতার প্রতিরোধমূলক তথ্য দিতে আমরা সচেষ্ট থাকি।

৯. শিশু-কিশোরদের অসংগতভাবে উপস্থাপন করা বিজ্ঞাপন যাতে প্রকাশিত না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকি। আমরা নজর রাখি, যাতে কোনো বিজ্ঞাপন প্রকাশের কারণে শিশু-কিশোরেরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

১০. দ্ধৃতিচিহ্নের ভেতরে সবার মৌখিক বক্তব্য আমরা হুবহু পরিবেশন করি। কেবল স্থানবিশেষের আঞ্চলিক বাংলা বা বিদেশি ভাষা উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহারের সময় মান বাংলায় রূপান্তর করা হয়। সরাসরি উদ্ধৃতি না দিয়ে বক্তব্যের সারকথা বা চুম্বক অংশ পরোক্ষ উক্তি হিসেবে পরিবেশনের সময় আমরা বক্তার মূল বক্তব্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করি না।

১১. ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া বক্তব্যের কোনো উদ্ধৃতি বক্তার পূর্বানুমতি ছাড়া আমরা ব্যবহার করি না।

১২. আমরা কোনো বই, জার্নাল, পত্রপত্রিকা, ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য, ছবি বা ভিডিও পরিবেশন করলে তার সূত্র যথাযথভাবে উল্লেখ করতে সচেষ্ট থাকি।

১৩. সম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করি।

১৪. আমরা অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রে গভীরভাবে বিশ্বাস করি। তাই  উপসম্পাদকীয় স্তম্ভে আমাদের সঙ্গে সম-অবস্থানধর্মী না হলেও আমরা নানা বিষয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করি। উপসম্পাদকীয় স্তম্ভে আমরা বিচিত্র মতের সমাহার ঘটাই এবং পর্যালোচনামূলক বিতর্ককে উৎসাহিত করি।

১৫. ‘মহিলা’ শব্দটির বদলে আমরা যথাসম্ভব ‘নারী’ ব্যবহার করি।

১৬. ধর্ষণ, অ্যাসিড হামলা, যৌতুক বা অন্যান্য নারী নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির ছবি ছাপাতে হলে তাকে ‘অপরাধী’ না লিখে ‘অভিযুক্ত’ লিখি। এ-সংক্রান্ত মামলা চলাকালে তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক আইন মেনে চলি।

১৭. ‘ধর্ষিতা’ শব্দটির বদলে আমরা যথাসম্ভব ‘ধর্ষণের শিকার’ কথাটি ব্যবহার করি।

১৮. বাংলাদেশের বিবিধ আইনের আলোকে ১৮ বছরের কম বয়সীদের আমরা শিশু-কিশোর হিসেবে গণ্য করি।

১৯. আমরা কোনো বই, জার্নাল, পত্রপত্রিকা, ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য, ছবি বা ভিডিও পরিবেশন করলে তার সূত্র যথাযথভাবে উল্লেখ করি।

২০. বিজ্ঞাপনসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক বিবেচনায় আমরা আমাদের সাংবাদিকের কর্তব্যকে ক্ষুণ্ন করি না।

২১. আমাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য নই, রাজনৈতিক মতাদর্শ কোন কন্টেট এ প্রভাব বিস্তার করে না।

২২. আমাদের মধ্যে কেউ দেশের প্রভাবশালী কোনো পরিবারের সদস্য হলে বা তাদের সঙ্গে আত্মীয়সূত্রে আবদ্ধ থাকলে কিংবা তাদের সঙ্গে কোনো ব্যবসায়িক লেনদেনে যুক্ত থাকলে, সে তথ্য সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে আমরা আগেই অবগত করি।

নীতি প্রয়োগ

১. কোনো ঘটনায় কোনো শিশু-কিশোর জড়িত থাকলে লক্ষ রাখি, যাতে তথ্য পরিবেশনের সময় তার নিরাপত্তা, স্বার্থ ও সুরক্ষা ক্ষুণ্ন না হয়। শিশু-কিশোর আইনের সংস্পর্শে বা আইনের সঙ্গে সংঘাতে এলে তার পরিচয় প্রকাশ করি না কিংবা এমন কোনো তথ্য দিই না, যাতে তাকে শনাক্ত করা যায়। আদালতে সাক্ষ্যদাতা শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম মেনে চলি। শিশু-কিশোরের প্রতি কোনো অন্যায়, অবিচার বা অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রমাণের জন্য ছবি ছাপানোর প্রয়োজন হলে তার মুখ অস্পষ্ট করে দিই।

২. শোকাতুর, যৌনলাঞ্ছনা বা নির্যাতিত, এইচআইভি/এইডস সংক্রমিত, মাদকাসক্ত, আইনের সঙ্গে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে থাকা শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কথা বলার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দিই। কথা বলার সময় পরিস্থিতি বিবেচনা করে তার অভিভাবক, হিতৈষী বা বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে রাখি। তাদের পরিচয় ও শনাক্ত করার মতো তথ্য পরিবেশন করি না। এ পরিস্থিতিতে নিপতিত শিশু-কিশোরের ছবি না ছাপানোকে অগ্রাধিকার দিই।

৩. কোনো লেখা, বিশেষ করে ছবি বা ভিডিও প্রকাশের সময় শিশু-কিশোরদের ওপর তার সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি আমরা মাথায় রাখি। লেখায় আমরা সহিংসতা বা বীভৎসতার বিশদ বিবরণ এড়িয়ে চলি। বীভৎস, নৃশংস বা রক্তাক্ত ছবি পরিহার করি। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশের জন্য এ ধরনের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ জরুরি হলে সংশ্লিষ্ট অংশ অস্পষ্ট করে দিই অথবা অন্যভাবে প্রকাশ করি (কার্টুন/মেটাফোরিক্যালি) এবং তার কারণ লিখে জানাই।

৪. বিনা প্রয়োজনে শিশু-কিশোরদের ব্যক্তিগত তথ্য নিই না। সংগত কারণে তা নেওয়া হলে কাজ শেষে সেসব নষ্ট করে ফেলি। সেসব তথ্য তৃতীয় কাউকে দিই না।

৫. সমাজবিরোধী কাজে অভিযুক্ত কারও তথ্য পরিবেশনের সময় তার পরিবারের শিশু-কিশোর সদস্যদের অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে আনি না। অপরিহার্য কারণে কোনো তথ্য উল্লেখ করতে হলে তাদের নিরাপত্তা ও ঝুঁকির দিকটি সতর্ক বিবেচনায় রাখি।

৬. অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য পরিবেশনের সময় লক্ষ রাখি, যেন সেখানে শিশু-কিশোরদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো কোনো লিংক না থাকে। সেখান থেকে শিশু-কিশোরদের ব্যক্তিগত তথ্য যাতে অন্য কারও হাতে না পড়ে, সে ব্যাপারেও আমরা সতর্ক থাকি।


 ছবি বা ভিডিও চিত্র পরিবেশন

১. মুদ্রণসৌকর্যের জন্য ছবির আলোছায়া বা রং সম্পাদনার সময় গভীরভাবে লক্ষ রাখি, যাতে তার মূল বিষয়বস্তু বা ভাব ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

২.গৃহীত আলোকচিত্র বা ছবি সম্পূর্ণত বা তার নির্বাচিত, অর্থাৎ ক্রপ করা অংশ আমরা পরিবেশন করে থাকি, কিন্তু মুদ্রিত ছবির ভেতরে কোনো উপাদান আমরা বর্জন বা পরিবর্তন করি না।

৩. একাধিক ছবি কেটে, জুড়ে, সম্পাদনা করে কিংবা অন্য কোনো উপাদান যুক্ত করে পরিবেশন করার সময় আমরা ক্যাপশনে তাকে আলোকচিত্রণ, ফটো-ইলাস্ট্রেশন বা ‘ফটো-কোলাজ’ বলে উল্লেখ করি, যাতে পাঠক সেটিকে আলোকচিত্র বলে ভুল না করেন।

৪. আমরা ধর্ষণের শিকার কোনো নারীর ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করি না। মৃত ব্যক্তির মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিবেচনায় আমরা মৃতদেহেরও ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করি না। বিশেষ পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে বা কোনো বিষয়ের গভীরতা তুলে ধরার জন্য এ নিয়মের ব্যতিক্রম করতে হলে সম্পাদকীয় বৈঠকে পর্যালোচনার পরে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই। একই সঙ্গে সে ছবি বা ভিডিওর সঙ্গে সেটি প্রকাশের কারণ উল্লেখ করি।

সহিষ্ণুতা গ্রহিষ্ণুতা

১. ষড়যন্ত্রমূলক কোনো ধর্ম, জাতিগত সম্প্রদায়, গোষ্ঠী বা লিঙ্গের দেশপ্রেম, মানবিক ক্ষমতা, জীবনাচার, উৎসব, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে আমরা কটূক্তি বা নেতিবাচক ইঙ্গিত করি না।

২. আমরা উত্তেজনাকর ও স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে সর্বাধিক ধৈর্য ধারণ করি। তথ্যের প্রতিটি খুঁটিনাটি ভালোভাবে যাচাই করে নিই।

৩. কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের সময় আমরা অহেতুক তাঁর ব্যক্তিগত জীবন—যেমন তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গ, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধিতা, জীবনাচার ইত্যাদি প্রসঙ্গ—টেনে আনি না।

ধর্ষণ ও বলাৎকারের খবর

১. ‘ধর্ষিতা’ শব্দটির বদলে আমরা যথাসম্ভব ‘ধর্ষণের শিকার’ কথাটি ব্যবহার করি।

২. ধর্ষণের প্রতিবেদন যথাসম্ভব সাবধানতা ও সচেতনতার সঙ্গে লিখি। লেখায় রগরগে, উত্তেজক বা ইঙ্গিতপূর্ণ কোনো কিছু উল্লেখ করি না।

৩. ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা বা যৌন হয়রানির শিকার কোনো নারীর নাম ও ছবি আমরা ছাপাই না। তাঁকে শনাক্ত করতে পারার মতো কোনো তথ্যও দিই না।

৪. প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের জন্য ধর্ষণের শিকার কোনো নারীর ছবি ছাপাতে হলে তাঁর চেহারা অস্পষ্ট করে দিই।

৫. ধর্ষণ বা অনুরূপ কোনো অপরাধের শিকার হয়ে কোনো নারী নিহত হলে আইনি নিষেধাজ্ঞা মেনে তাঁর নাম, পরিচয় ও ছবি আমরা প্রকাশ করি না। ইতিবাচক কোনো উদ্দেশ্যে তা করতে হলে যথাযথ সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তা করি। এর জন্য অপরাধের শিকার নারীর নিকটতম স্বজনের এবং প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি নিই।

৬. কোনো ধরণের বলৎকারের খবর আমরা সংবেদনশীল ভাবে প্রকাশ করি।নির্যাতিত পক্ষের কারো স্থির চিত্র বা ভিডিও বা পরিচয় গোপন রাখি। যাতে করে নিযাতিত পক্ষ সামাজিক এবং মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।