২৪শে মার্চ তারিখেও শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার মধ্যে কোন বৈঠক হবার খবর সংবাদপত্রে এলো না । তবে তাঁদের উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক হয়। উপদেষ্টাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তরফ হতে সর্ব জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও ড. কামাল হোসেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পক্ষ হতে এম, এম আহমদ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস, লেঃ জেঃ পীরজাদা ও লেঃ কঃ এম এ হাসান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে এনে তাজউদ্দীন সাংবাদিকদের জানালেন, Ôউপরোক্ত বৈঠকে তাঁরা তাঁদের সকল মতামত ব্যক্ত করেছেন । সে জন্যে তাঁদের দিক থেকে আর কোন বৈঠকের প্রয়োজন নেই। তিনি বললেন, তাঁরা আওয়ামী লীগের বক্তব্য ও সম্পূর্ণ পরিকল্পনার ব্যাখ্যা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন । জনাব তাজউদ্দীন সাংবাদিকদের কাছে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে আরও বলেন, সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে আর কাল বিলম্ব করলে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে।
জনাব মওদুদ আহমদ তাঁর Bangladesh constitutional Quest for Autonomy গ্রন্থে ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চের আওয়ামী লীগের এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের মধ্যকার বৈঠকের পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করেন এভাবে, ইয়াহিয়া ও মুজিবের উপদেষ্টাদের মধ্যে শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২৪ শে মার্চ বিকেলে । সেই পুরাতন বিষয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের পরিমান প্রশ্নেই এই বৈঠক মূলতবি হয়ে যায়। শেখ মুজিবের উপদেষ্টারা যখন প্রেসিডেন্ট হাউজ থেকে ফিরলেন তাঁদের খুব মলিন মনে হল এবং তাজউদ্দীন আমাকে বললেন, তারা তাদের সিদ্ধান্ত আমাদের আগামীকাল (২৫ শে মার্চ) জানাবে। যাই হোক, গোটা বিষয়টাকেই অর্থহীন মনে হল।—————-
২৪শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত, সরকারীভাবে আলোচনা চলছিলই, পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটল । ভুট্টো বাদে পিপলস পার্টির সব নেতাসহ পশ্চিম পাকিস্তানের সকল নেতাই ঢাকা ত্যাগ করলেন। কোন একটা পরিকল্পনা যেন কার্যকর হতে যাচ্ছে এবং এ নেতৃবৃন্দ যেন সেনাবাহিনীর সে পরিকল্পনা জানতে পেরেছেন, তাদের ঢাকা ত্যাগকে তারই লক্ষণ বলে মনে হল।