শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
22 C
Dhaka

৬ মাসেই ভারতমুখী রোগী অর্ধেকে নেমেছে

spot_img

ভিডিও

- Advertisement -

বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া ব্যাপকভাবে কমে গেছে গত ছয় মাসে। চিকিৎসা ভিসার সংকট এবং দেশীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির অভাবের কারণে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসা নিতে যেতেন। কিন্তু চলতি বছরের শেষ ছয় মাসে ভারতগামী রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছেন।


ভারত সরকারের সাথে সম্পর্কের অবনতি এবং দেশটির ভিসা নীতিতে পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ভারত সরকার ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করে দিয়েছে। যার ফলে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ভিসা পাওয়াও এখন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, এর মধ্যেও কিছু মানুষ ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক ভিসা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ রোগী এখন দেশের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসার ওপর নির্ভর করছেন।


এদিকে দেশের হাসপাতালগুলোর ওপর আস্থা হারিয়েছেন বহু মানুষ। সরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মানে ভোগান্তি, আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মানও প্রত্যাশিত নয়। অভিযোগ রয়েছে যে, অনেক চিকিৎসক রোগীদের ‘খদ্দের’ হিসেবে দেখেন এবং ন্যূনতম সেবা দেওয়ার পরিবর্তে অতিরিক্ত পরীক্ষায় রোগীদের টানতে চান। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। যার ফলে রোগীরা বিদেশে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।


স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মত দিয়েছেন। যদিও গত কয়েক বছরে সরকারি হাসপাতালগুলোর অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। তবে সেবা প্রদানে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল এবং প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার নির্ভরতা কমাতে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রাথমিকভাবে এসব দেশের প্রযুক্তি দেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।


ভারতগামী রোগীদের সিংহভাগই সড়কপথে বা ট্রেনে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে যশোরের বেনাপোল বন্দর হয়ে। গত বছর এই পথ দিয়ে ৯ লাখ ৫৬ হাজার বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ ছিলেন চিকিৎসা নিতে। তবে, চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেনাপোল দিয়ে ভারতে গমনকারী রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার কমে গেছে।


এছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরেও ভারতে যাওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। ২০২৩ সালে এখানে দেড় লাখ বাংলাদেশি ভারতে গিয়েছিলেন। তবে এ বছর এই সংখ্যা ১ লাখের কাছাকাছি। আকাশপথেও ভারতগামী যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে, যদিও এর সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।


অন্যদিকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে, আগস্টের বিপ্লবের পর থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। থাইল্যান্ডের হাসপাতালগুলো, বিশেষ করে ব্যাংকক ও বামরুনগ্রাদ, বাংলাদেশের রোগীদের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হয়ে উঠেছে।


বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। তাঁরা দাবি করেন, সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব এবং সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশেই উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব। যা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য রোগীদের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সিস্টেমের গভীরে থাকা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে।

- Advertisement -
spot_img

আলোচিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

সর্বশেষ

ভিডিও