“লাশের স্তুপে খুঁজেছি পরিচিত মুখ”।
একটি দেশে যখন গণহারে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয় তখন সেটিকে গণহত্যা বলে অভিহিত করা হয়।সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান ইজরায়েলের সহিংসতাকে গণহত্যাই বলা চলে।
সাম্প্রতিক ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং এর জের ধরে গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। গণহত্যা বন্ধের আহবান জানিয়েছে। সরকারের তরফে প্রকাশ্য বিবৃতি এসেছে, ওআইসির শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসনের।তবে পশ্চিমারা হাঁটছে বিপরীত দিকে।তারা এই গণহত্যাকে গণহত্যা হিসেবে দেখছে না। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলার কারণে মানবিক পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন ইসরায়েলিদের পক্ষে, তখন এর প্রভাব দেখছি আমরা বাংলাদেশেও। উপাসনালয়গুলোতে প্রার্থনা এবং রাষ্ট্রীয় শোকের সরকারি নির্দেশনা আসার পর দেশের স্থানে-স্থানে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে।তবু এসবের মধ্যে নেই বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির দেশগুলো বিশেষ করে পশ্চিমারা।কিন্তু কেন নেই?
রক্তপাতের বিপরীতে কৌশলী অবস্থান কিংবা মধ্যপন্থা রক্তপাতকেই প্রকারান্তরে সমর্থন।এই নীতিতে বিশ্বাস করছে পশ্চিমা দেশ গুলো।অনেক দেশ থেকে আসা খবরগুলো বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি ও হামাসকে তাদের অঞ্চলের সমস্যার জন্য দায়ী করে। তারা স্বীকার করে না যে ইসরায়েল হামাসের মানুষদের উপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গায় হামাসকে সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল বলে, কিন্তু তারা তাদের সংবাদে পশ্চিম তীরে চলমান সহিংসতার কথা বলে না। নারী-পুরুষ-শিশু-হাসপাতাল সমস্ত কিছুর উপর যে নির্বিচার আক্রমণ, গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল পশ্চিমা বিশ্ব তাতে নিশ্চুপ।
যখন ইহুদি রাষ্ট্র তৈরি হচ্ছিল তখন অনেক আরব দেশ রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এই দেশগুলো বেলফোর ঘোষণায় সম্মত হয়েছিল। ফিলিস্তিন তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। অটোম্যান সাম্রাজ্য দীর্ঘকাল ধরে ইউরোপের কিছু অংশের দায়িত্বে ছিল, যার ফলে ইউরোপের কিছু লোক তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায়। অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে সেসব দেশের মানুষদের তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ছিল না। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপ অটোম্যান সাম্রাজ্যকে পরাজিত করতে চেয়েছিল। যুদ্ধের পর ব্রিটেন ও ফ্রান্স ফিলিস্তিনসহ অনেক আরব দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর ফলে আমরা আজকে এই সমস্যাগুলো দেখতে পাচ্ছি।
হামাসের হামলায় ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল এই নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে। পশ্চিমের নেতারা সমানে ইহুদিদের আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তাঁরা ইসরায়েলের সমালোচনা করে ইহুদিদের আহত না করার জন্য সবাইকে আহ্বানও জানিয়েছেন।
পশ্চিমের কিছু দেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনি বা হামাস নামক একটি গ্রুপকে সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী করছে।তারা স্বীকার করছে না যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড খুবই ক্ষতিকর এবং গণহত্যার মতো।এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মতামত রয়েছে।উদাহরণস্বরূপ, ভারত প্রথমে ইসরায়েলকে সমর্থন করলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কথা বলা শুরু করে।কখনও কখনও, এই দেশগুলি মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশগুলির দাবিতে নতি স্বীকার করে।আরব দেশগুলো আরও ঐক্যবদ্ধ হলে পশ্চিমাদের তাদের কথা শুনতে হতো।কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ক্ষতি করতেই থাকবে।ইউরোপের কিছু দেশ মনে করে হামাস নামের একটি দল খুবই খারাপ এবং জঙ্গিবাদী কাজ করে।কিন্তু তারা তাদের টিভি ও সংবাদপত্রে পশ্চিম তীরের এই জায়গায় চলমান হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খারাপ কিছু বলে না।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ভূখণ্ড ও চারদিক থেকে ঘিরে রাখা ‘উন্মুক্ত জেলখানা’ গাজার ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিক থেকে দক্ষিণে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানি গাজাবাসীর প্রতি সমর্থন জানানো যেকোনো ধরনের র্যালি বা সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাজ্যও একই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।ফিলিস্তিনের উপর ইজরায়েলের এই চলমান কর্মকান্ডের জন্য উস্কানিদাতা হিসেবে পশ্চিমাদের হাত আছে কিনা সেটিই এখন প্রশ্ন।
এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি আরকাইভ অনলাইন-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।